আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামিক রাষ্ট্র কি? কয়েকটি "ইসলামিক রাষ্ট্রের" হালচাল এবং আমরা কি চাই??

যা বিশ্বাস করি না, তা লিখতে-বলতে চাই না, পারবোও না। কিন্তু যা বিশ্বাস করি, তা মুখ চেপে ধরলেও বলবো, কলম কেড়ে নিলেও লিখবো, মারলেও বলবো, কাটলেও বলবো, রক্তাক্ত করলেও বলবো। আমার রক্ত বরং ঝরিয়েই দাও, ওদের প্রতিটি বিন্দুর চিৎকার আরও প্রবল শূনতে পাবে। I) ইরানে মেয়েদের কালো পোশাক এবং শুধুমাত্র কালো পোশাক পড়ার অলিখিত নিয়ম করা হয়েছে। অন্য কোন রঙের পোশাক পড়ে পথে বেরোলে সবাই একযোগে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকে।

ছেলেরা হাসাহাসি/কটু মন্তব্য করে, আমরা যেসবকে আদর করে ইভটিজিং ডাকি সেটা ওখানে ক্ষেত্রবিশেষে বৈধ। আইন প্রোটেকশন দিতে দ্বিধা করে যদি কালো বোরকা এবং হিজাব না পড়া থাকে। কোন "আন-এক্সপেক্টেড ইন্সিডেন্ট" এর ক্ষেত্রে দায়ী পুরুষ এর জন্যে কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা থাকলেও তদন্তের প্রথমে দেখা হয় ভিকটিম নারীটির পোশাক ও ভুমিকা। ব্যাবসা-বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হয়ে ঘোলাপানি খেয়েও দেশটি গোঁয়াড়ের মতো নিউক্লিয়ার এনরিচমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছে লড়াই করার মনোভাবে। নিজের জনগন, অর্থনীতির প্রতি ভ্রূক্ষেপ নেই এতোটুকু, ফলাফলে মুদ্রামান তলানীতে ঠেকছে দিনদিন।

II) আফগানিস্তানে আইন করে বৈধ করা হয়েছে, ধর্ষক এর সাথে ধর্ষিতার বিয়ে করিয়ে দিতে হবে। হাজার হাজার পরিবার গাঁজা চাষ করে, উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে, পূর্বে সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশী ছিল। উৎপাদন যেহেতু রয়েছে, বিপণন এর একটি সুন্দর ব্যাবস্থাও বিদ্যমান। ধ্বংসস্তুপ দেশটি এক পা এগোলে উগ্রপন্থীদের বাড়াবাড়িতে পাঁচ পা পিছিয়ে যাচ্ছে। III) পাকিস্তান একটি মৃত্যুপুরীর নাম।

সে দেশের সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠন রাজনৈতিক দলের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করে। সরকার এর নেই নিয়ন্ত্রণ করার মতো নুন্যতম ক্ষমতা। মুসলমানদের মাঝে অন্তঃকলহে একই ধর্মের মানুষ মারছে একজন আরেকজনকে! কওমী টেনশন পৌঁছেছে চরমে। শিয়া-সুন্নি অজুহাতে স্রেফ গণহত্যা চলছে দেশটিতে। পাকিস্তানে অস্ত্র কাছে না রাখলে তাকে সত্যিকার পুরুষ হিসেবে বন্ধু ও সমাজ স্বীকার করতে চায় না।

শিক্ষিত অংশের মাইগ্রেশনের হার বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় বেশী। গোঁয়াড় রাস্ত্রব্যাবস্থা ও তাতে সামরিক প্রভাব অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে দেশটিকে। তবু নিউক্লিয়ার পরীক্ষা থেমে নেই। IV) সৌদি-আরবের আছে তেল বিক্রির অঢেল অর্থ। তবে জনগনের জন্যে কতোটা ব্যয় হয়েছে আর কতোটা হচ্ছে সৌদি বাদশাহ ও তার পরিবারবর্গের বিলাস এর জন্যে সে নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন নেই মনে হয়।

সেই জনপ্রিয় কৌতুকটাই বলা চলে, “বাদশার ছেলে প্রচণ্ড দামী একটি গাড়ি উপহার পেলে আফসোস করে লেখে, আমার বন্ধুরা ট্রেনে-সাইকেলে চড়ে পড়তে আসে, আমি গাড়ী নিয়ে ক্লাসে যেতে পারবো না। পরদিন তার জন্যে একটি ট্রেন পাঠানো হয়। সৌদি জনতার সৌভাগ্য সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদপুষ্ট রাষ্ট্রের জনতার জন্যে “সামান্য কিছু” করার সময় হয়েছে শাসকদের। যেটাকে সবকিছুর শেষে একটি “শুভ ব্যাতিক্রমই” বলবো। মুসলিম সমাজের এক অংশে প্রশংসিত এই রাষ্ট্র ব্যাবস্থা কতোটা ইসলামীক নিয়ম মেনে চলে বা কতোটা মানে তার শাসক সে সব তর্কের বিষয়।

কিন্তু আরেক অংশের কাছে হিউজলি হেটেড দেশ আমেরিকার পা চাটা “মুসলিম” নামধারী দালাল দেশ হিসেবে এই রাষ্ট্রকে সম্ভবত বিনা ঝুঁকিতেই বলে দেয়া যায়। ইরান-ইরাক আক্রমণে ইউএস এর উপরে সবথেকে বড় চাপটি সবসময় সৌদি আরবেরই ছিল। উইকিলিকস এর ফাঁশ করা আমেরিকান নথিই তার সাক্ষ্য দেয়। এ সবের পরে অন্তত “মুসলিম রাষ্ট্র” বলা সম্ভব নয় এই দেশটিকে। হালের কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের হালচাল হলো এই।

রাষ্ট্রধর্ম কি করে থাকে, বা একটি রাষ্ট্র কি করে “মুসলিম রাষ্ট্র” হয় বা “হিন্দুয়ানী রাষ্ট্র” হয় এই বিষয়গুলো ঠিক ধরতে পারিনা আমি। রাষ্ট্রের খৎনা হয় না, নামায পড়েনা পাঁচ ওয়াক্ত, কলেমা শাহাদাৎ পাঠ করে ঈমান আনে না, বেশীরভাবে “মুসলমান” এর মতো রাষ্ট্রের মাতা-পিতার ধর্ম অনুসারেও তার ধর্ম নিশ্চিত হয় না, তাহলে কীভাবে? শুধু পরিসংখ্যান দেয়া যায়, “এই দেশে ৮০% মুসলমান এর বসবাস, অর্থাৎ মুসলিম মেজরিটি বা সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এটি। ” এছাড়া কোন রাষ্ট্রকে ধর্ম দেয়া আমার কাছে ধার্মিকতার থেকে ভণ্ডামিই বেশী মনে হয়। ধর্ম মানুষ এর জন্যে থাকে, আমাদের পালিত পশুকে মুসলিম গরু- হিন্দু ছাগল ডাকার মতোই বিষয় রাষ্ট্রকে মুসলিম ডাকা, অন্তত আমার কাছে। সে সব দূরেই রাখলাম, ইরাক এর বর্তমান বা রিসেন্ট অতীতও একটি শিক্ষা হতে পারে, ধ্যান-ধারনার এক্সট্রিমিজম কখনোই রাষ্ট্রের উপরে চাপিয়ে দেয়া শুভ ফল বয়ে আনে না।

ইউরোপ-ইউএস এর উন্নতির দিকে তাকিয়ে ঈর্ষার স্বরে বলি, শালার ইহুদীরা- বেজন্মা খ্রিষ্টানদের কাজ দেখো! কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমরা এড়িয়ে যাই সবসময়, তাদের উন্নতির প্রধান কারণ তারা তাদের নীতিকে-বিশ্বাসকে অর্থনীতির উপরে চাপিয়ে না দিয়ে, রাষ্ট্রকে আবেগ দিয়ে বাউন্ড না করে উন্নতির পথ অন্বেষণ করেছে। আবিষ্কারের চেতনায় মগ্ন হয়েছে, ব্যাবসা-বানিজ্য-উৎপাদনকে ব্রত করেছে। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা চলে গেছে তাদের হাতে এবং তারা হয়েছে শাসক। আর শাসকদের দূর থেকে সব সময়ই শোষক এর মতোই দেখায়। মানি, তার শোষক বটে! কিন্তু মূর্খ/অজ্ঞদের মতো আচরণ করা “তথাকথিত মুসলিম” রাষ্ট্রের তো শোষণ হওয়াই নিয়তি! মুসলিম রাষ্ট্র, হেফাজতের দাবী, আওয়ামীলীগ এর “নাস্তিকতা” নিয়ে হাউকাউ করছি, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে জীবন দিয়ে দিচ্ছি, এরা ইসলাম কায়েম করবে! বেশীদিন আগের কথা না, ৭ বছর আগে তাকালেই বিএনপি জামাতের ছায়াতলে ভয়াবহ জঙ্গি তৎপরতার কথা আমরা কিন্তু বেমালুম ভুলে গেছি।

এটা বাস্তব সত্য, বিএনপি আমলে এসব যেমন প্রশ্রয় পায়, হিন্দু সহ অন্য ধর্মবলম্বিদের উপরে সহিংসতা বেড়ে যায় বহুগুণে। এটা স্রেফ অসভ্যতা। উপরে দেয়াই আছে উদাহরণ, মুসলিম রাষ্ট্র চান তো “রোল মডেল” রাষ্ট্রগুলো থেকে একটি পছন্দ করুণ! বলুন আপনার দেশকে সেখানে দেখতে চান। নারীর অবমাননার মধ্যযুগীয় রুপটা মনে করিয়ে দিতেই হয়ত সৃষ্টিকর্তা এই দেশগুলোকে এখনও টিকিয়ে রেখেছেন! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে আমার ধর্ম ইসলামেই নিষেধ করতে বলা আছে। জিহাদ শব্দের অপব্যাখ্যা করে ভন্ডামি করা আর কতো? ইসলামিক রাষ্ট্রের ধোঁয়া তুলে নিজ রাষ্ট্রের “মানুষ” এর জীবন এর নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করা কতো? শুধু ধর্ম দিয়ে ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি, ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করে অর্থ উৎপাদনের পথ দেখতে পাচ্ছেন, এমনই মুসলমান আপনি।

আমাদের তেল নেই, সৌদি হবার যো(এমন নয় যে ইচ্ছে রয়েছে!) নেই তাই, বাকীগুলোর একটির যায়গায় দেখতে চাইবেন বাংলাদেশকে? তবে ধন্য আপনার মুসলমানিত্ব, মহাধন্য আপনার বাঙালিত্ব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.