হালকার উপর ঝাপসা
মালীর সেনা অভ্যূত্থান এবং তুয়ারেগ
কারা এই তুয়ারেগ?
তুয়ারেগরা হচ্ছে মধ্য সাহারা ও সাহেলের বসবাসকারী যাযাবর গোষ্ঠী। ঐতিহ্যবাহী পোষাকে ধূম্র নীল রঙের ব্যবহারের কারণে অনেক সময় তাদের “ মরুভূমির নীল মানব ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের ভাষা হচ্ছে টামাশেক। এদের অধিকাংশই মুসলিম, যদিও এদের ধর্মের সাথে যোগাযোগ কম।
তুয়ারেগরা নাইজার আর মালির জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ।
ফরাসীরা এদের ঔপনিবেশীক জীবনযাত্রায় সম্পৃক্ত করতে পারেনি; তারা বরাবরই ঔপনিবেশীক সীমানা উপেক্ষা করেছে। ফরাসীদের ঔপনিবেশ ভেঙ্গে পরার সাথে সাথে তুয়ারেগরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের স্বকীয় রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া আর পদে পদে রূঢ় আচরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে তারা মালি ও নাইজারে বিদ্রোহ করেছে। প্রাক-বিদ্রোহ দমন আর পরবর্তীতে এলাকার যৎসামান্য উন্নয়ন তাদের মনে স্থায়ী অবিশ্বাস এবং ক্ষোভের জন্ম দেয়। “ যারা মারা গিয়েছিল তাদের সন্তানেরা ’৯০-এর দশকে আরেকটি অভূত্থানের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল, ” বলেন জর্জ ক্লুট, জার্মানীর বেইরুট বিশ্ববিদ্যালয়ের, “তাদের পূর্ব-পুরুষদের হত্যাকারীদের দ্বারা তারা শাসীত হতে চায়নি” ।
কিসের জন্য তুয়ারেগদের এই যুদ্ধ?
তুয়ারেগরা চায় সরকারের স্বীকৃতি আর ইউরেনিয়াম খনির লভ্যাংশ। কিছু কিছু আবার আযাওয়াদ নামে স্বকীয় রাষ্ট্র চায়। ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব আযাওয়াদ নামের নতুন এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানুয়ারীতে নতুন করে আন্দোলনের সূচনা করে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও তুয়ারেগরা কখনই সংগঠিত ছিল না। “ তুয়ারেগদের মধ্যে সর্বদাই মতবিরোধ বিরাজমান।
এটা আমাদের অভিশাপ ” , হতাশার সুরে এক বিদ্রোহী গত বছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে জানায়। এখানে লক্ষণীয় যে, সাম্প্রতিক এই বিদ্রোহে তুয়ারেগরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে একত্রিত হতে যদিও এদের অনেকেই ভিন্নমতপোষণ করেছে।
তুয়ারেগদের সাথে লিবিয়ার বিদায়ী বিদ্রোহী নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সম্পর্কের সূত্র
তুয়ারেগরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে পর্যটন খাত থমকে যায় যখন আলজেরিয়াতে ইউরোপীয়দের জিম্মি করে রাখা হয়। মালি আর নাইজার এইক্ষেত্রে এগিয়ে আসেনি। স্ত্রাটফোর এনালাইসিস গ্রুপের মতে “ যদিও সরকার তাদের সাহায্য-সহযোগীতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছিল তবুও তারা দক্ষিণাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করতে বেশি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে ” ।
বেঁচে থাকার স্বার্থে তুয়ারেগরা অপরাধ কর্ম বিশেষ করে চোরাকারবারী সাথে জড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা পরাশক্তি এই চোরাই অস্ত্র শত্রুভাবাপন্ন কারো হাতে পড়ার ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। লিবিয়ার লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফি তুয়ারেগদের তার সেনাবাহীনিতে অন্তর্ভূক্ত করার পর লিবিয়া বিদ্রোহীদের আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত হয়।
গাদ্দাফির পতনের পর কি হয়েছিল তুয়ারেগদের ?
গাদ্দাফির পতনের পর অনেক তুয়ারেগ মিলিশিয়াদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মালিতে ফিরে আসে। আসার সময় তারা অস্ত্র নিয়ে আসে- যা তাদের বিদ্রোহে বাড়তি রসদ জোগায়।
“ তারা নিজেদের পরাজিত সৈনিকের দলে মনে করে। এজন্য বহির্বিশ্বের প্রতি তারা ক্ষুব্ধ ” , বলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকান শিক্ষার অধ্যাপক জেরেমি কেনান। “ যুদ্ধই যদি একমাত্র সমাধান হয় তারা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধই করবে ”।
ইনষ্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিস এর এমিরা উডস বলেন মালি উদ্ভূত এই পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জোর দিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং এর চাইতে মিলিটারি সমাধানকেই বেছে নিয়েছে। তিনি জানান ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত বিদ্রোহী বাহিনী যাদের উত্তরাঞ্চলের আনাচে-কানাচে নখদর্পণে তাদের বিপক্ষে যুদ্ধে যাওয়া খুব একটা কাজ দেয়নি।
মালির সেনা অভূত্থানে তুয়ারেগ বিদ্রোহী বাহিনীর সম্পৃক্ততা
মালির বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের মতে সরকার বিদ্রোহীদের দমন করা দরকার জেনেও সেনাবাহিনীকে সশস্ত্র করেনি। তারা এইজন্য রাষ্ট্রপতিকে আখ্যায়িত করেছে অযোগ্য বলে।
বিদ্রোহে অন্যান্য কারণ
সাম্প্রতিক এই ঘটনা কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবমতে আনুমানিক ৮০ হাজার তুয়ারেগ মালি হতে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছে। একই সময়ে ঐ এলাকায় ফসল উৎপাদনে চলছে মন্দাভাব যা নিত্য পণ্যের বাজারকে অতিমূল্যায়িত করছে।
“ এটাই বিগত ২০ বছরের মধ্যে উত্তর মালির নিকৃষ্টতম মানবাধিকার বিপর্যয়” , গত মাসে জানান এমনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্যাটান মোতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।