আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবিসি কর্মকর্তাদের যৌন কেলেঙ্কারির নতুন ঘটনা

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেনের পোলার্ড নামের তদন্ত কমিটি দেশটির গত কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস করেছে। বিবিসির কর্মী, পরিচালক ও সাবেক পরিচালকদের সাক্ষাতকার থেকে বেরিয়ে এসেছে এইসব কলঙ্ক। ইংল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত গণমাধ্যম বিবিসি'র কুখ্যাত উপস্থাপক জিমি সেভিলের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাড়ে চারশ' শিশু। এর আগে, বিবিসি'র পরলোকগত উপস্থাপক জিমি সেভিল ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কমপক্ষে ৩০০ শিশু-কিশোরের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন বলে তদন্তে ধরা পড়ে। নির্যাতিতের মধ্যে ৮২ শতাংশ ছিল নারী আর তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল শিশু কিশোর।

নির্যাতিতদের মধ্যে ৮/৯ বছরের বহু শিশু ছাড়াও পঙ্গু শিশুও রয়েছে। বিবিসি'র দপ্তরের ভেতরেই চালানো হত এইসব যৌন নির্যাতন। বিবিসি'র বিশেষ প্রতিনিধি ম্যাট প্রোটগার জানান, "সেভিলের বিরুদ্ধে ৪৫০ জনকে যৌন নির্যাতনের খবর অপ্রত্যাশিত ও ভয়াবহ। এক জনের বিরুদ্ধে এত বিপুল সংখ্যক নির্যাতনের ঘটনা পুলিশ আগে কখনো পায়নি। " ২০১১ সালে ৮৪ বছর বয়সে সেভিলের মৃত্যু হয়।

জিমি সেভিল ছিলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিবিসি ওয়ানের শিশু-কিশোর বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও রেডিও ওয়ানের সঞ্চালক। সেভিল ১৯৯০ সালে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার ও স্যার উপাধি লাভ করেন। পুলিশ জানায়, তারা সেভিলের বিরুদ্ধে ১৭টি পুলিশি এলাকার ১৯৯টি ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ৩১টি ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত করেন। খ্যাতির সুযোগ নিয়ে সেভিল শিশুদের ধোঁকা দিত।

সেভিলের এ অপকর্মের সঙ্গে আরো বহু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং পুলিশ সার্বিকভাবে বিষয়টির তদন্ত করছে। তদন্তের জের ধরে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ ও জনপ্রিয় লোকদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন, জনপ্রিয় কমেডিয়ান ম্যাক্স ক্লিফোর্ড, ডিজে ডেভ লি ট্রাভিস ও টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক উইলফ্রেড ডিআথ। তবে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এর আগে, জিমি সেভিলের সহযোগী হিসেবে সাবেক পপ তারকা গ্রে গ্লিটারকে যৌন নির্যাতনের দায়ে আটক করে লন্ডনের পুলিশ।

সেভিল তার বোনের নাতির ওপরও যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন। বর্তমানে ৪৯ বছর বয়স্ক ওই নাতি সেভিলকে দানব বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান বিবিসির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে "পরোয়াহীন, মাতাল ও অসংযমী" বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি'র কর্মকর্তারা বিচারের উর্ধ্বে এবং এক্ষেত্রে তারা চীনের কর্মকর্তাদের চেয়েও বেশী সুবিধা ভোগ করেন বলে সংস্থাটির প্রধান লর্ড প্যাটেন নিজেই উল্লেখ করেছেন। দৈনিক টাইমসও বিবিসি-কে এই বলে অভিযুক্ত করেছে যে সংস্থাটি নেপথ্যের অনেক নাটের গুরু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করেছে এবং সেভিল সংক্রান্ত এই প্রতিষ্ঠানের ঘরোয়া সংকটকে সিভিল-ওয়ার বা গৃহ-যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে।

পশ্চিমা সমাজে নৈতিক অধঃপতন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। এমন কোনো দিন নেই যে ওই দিনে পশ্চিমা সমাজের নৈতিক নানা সংকটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। পশ্চিমা সমাজের সব ক্ষেত্রে নৈতিক অনাচারের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পাদ্রি, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, খেলোয়াড় ও নামী-দামী ব্যক্তিত্বদের দীর্ঘ তালিকা দেয়া যায়। জিমি সেভিল এটা জানতেন যে তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এবং তার অনুষ্ঠানের বহু দর্শক থাকায় বিবিসি তার যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো ফাঁস করবে না।

আর এ থেকেই বোঝা যায় নৈতিক অনাচার ও ব্যভিচার পশ্চিমা সমাজে কত গভীরভাবে শেকড় গেড়েছে। যে সমাজটি নিজেকে শিশু অধিকারের সংরক্ষক হওয়ার ও এ জন্য সবচেয়ে বেশি আইনি সহায়তা দেয়ার দাবি করে এবং এ ব্যাপারে অন্যদের জন্য নিজেকে আদর্শ বলে দাবি করে থাকে সেই সমাজেই শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু নির্যাতনের দিক থেকে ব্রিটেনের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। দেশটিতে প্রতি বিশ মিনিটে একজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ব্রিটেনে গত বছরে প্রতিদিন ৬০টিরও বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ব্রিটেনে ২০১০ সালে ২৩ হাজারেরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ব্রিটেনের ডেইলি মেইল জানিয়েছে, গত ৬ বছরে ব্রিটেনে শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনা শতকরা ৬০ ভাগ বেড়েছে। ব্রিটেনের পুলিশ ও সরকার দেশটির শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনার ব্যাপারে বিস্ময়কর অবস্থান নিচ্ছে। তারা এ ধরনের অপরাধ দ্রুত তদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং ব্যাপক সমালোচনার মুখে জনমতকে প্রবোধ বা সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই তারা লোক-দেখানো কিছু ভূমিকা নিচ্ছেন।

সেভিলের পেশাগত সুনামের সোনালী দিনগুলোতে তার মাধ্যমে শিশু ধর্ষণের অনেক ঘটনার কথা শোনা যেত। কিন্তু সে সময় ব্রিটেনের পুলিশ ও বিচারবিভাগ কার্যকর তদন্তের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিবিসিও তার অনুষ্ঠানের ব্যাপক দর্শক-শ্রোতা থাকার অজুহাতে এইসব অভিযোগ ধামাচাপা দিত। অথচ সেভিলের কোনো কোনো যৌন অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বিবিসি'র কর্মীদের সাক্ষ্যের সুবাদে। সেভিলের জীবনের শেষের দিকে তাকে নিয়ে একটি ছায়াছবি নির্মিত হয়েছিল।

এই ছায়াছবির নাম " গোপন তথ্য ফাঁস: জিমি সেভিলের জীবনের অজানা দিক"। এ ছায়াছবিতে কোনো কোনো মহিলার পরিচয় দেয়া হয়েছে যারা নিজেদেরকে সেভিলের যৌন পাশবিকতার শিকার বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই ছায়াছবির চেয়েও যে বিষয়টি বেশি হৈ চৈ তুলেছে তা হল, বিবিসি তার নাইট নিউজ অনুষ্ঠানে এই ছায়াছবি প্রদর্শন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেভিলের যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর নাইট নিউজ অনুষ্ঠানের সম্পাদক পিটার রিপন এ সম্পর্কিত ছায়াছবি প্রচার না করার জন্য বিবিসির পরিচালকদের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে বিবিসির পরিচালকরা সত্য গোপন করছেন এবং যৌন পাশবিকতার শিকার ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন।

তাই পোলার্ড তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের ঘটনা বিবিসি'র পরিচালকদের জন্য আরো বেশি কলঙ্ক বয়ে এনেছে। বিবিসি'র কর্মকর্তাদের যৌন কেলেঙ্কারির আরো নতুন ঘটনা ও নতুন খবর ফাঁস হওয়া সত্ত্বেও এইসব কলঙ্ক তদন্তের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে কয়েক দিন পর। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জিমি সেভিলের মামলার ফাইল। বিবিসি'র মত একটি মাল্টি মিডিয়ার পরিচালকরা খুব ভালভাবেই জানেন কিভাবে ব্রিটিশ জনমতের দৃষ্টি থেকে বাস্তবতা ও বিশেষ করে বিবিসিতে বিরাজিত বাস্তবতাগুলোকে আড়াল করা যায় এবং গুরুত্বহীন ও প্রান্তিক বিষয়গুলোতে জনগণকে মাতিয়ে রাখা যায়। এদিকে ব্রিটেনের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দেশটির সংবাদ মাধ্যমের প্রতি কোনো আস্থা রাখেন না বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমগুলো সত্য খবর প্রকাশের চেয়ে মুনাফা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে ওদিকে আবারও যৌন কেলেঙ্কারিতে ফেঁসেছে ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত সংস্থা বিবিসি। নরপশু জিমি সেভিলের পর বিবিসির আরেক লম্পটের সন্ধান পেয়েছে ব্রিটিশ পুলিশ। বিবিসির বিখ্যাত উপস্থাপক স্টুয়ার্ট হলের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ ও ১৪টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে তারা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।