হরবোলা বিঃদ্রঃ
*সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর এ এম হারুন অর রশীদ স্যার এর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বই থেকে সংকলিত এবং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর গোলাম মোহাম্মদ ভূঞা স্যার এর থেকে শুনা কিছু কথা নিয়ে এই লেখাটি। আমার ছাত্রাবস্থায় পঠিত বই গুলোর নাম স্মরণ করতে না পারার জন্য দুঃখিত।
পৃথিবী নামক গ্রহটি যাঁর পরিচয়ে
গত ১৪ই মার্চ ছিল মহান পদার্থবিজ্ঞানী, সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের শুভ জন্মদিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা আয়োজন করেছিল আলোচনা সভা কাম সেমিনারের। তাদের উৎসাহ, উদ্দীপণা তথা উদ্দমের অন্ত ছিলনা।
কিন্তু যেটুকুর ঘাটতি ছিল তা শুধু অভীজ্ঞতা। তাদের এই আয়োজনে তারা জড়ায়ে নিয়েছিল আমাকেও। তাদের জন্য উপহার লেখাটি (বিভন্ন বই, ওয়েবসাইট হতে সংকলিত)।
আইনস্টাইনের জীবনাবসানের পর টাইম ম্যাগাজিনে একটি সুন্দর ছবি প্রকাশিত হয়। যা ছিল এমন, মহাকাশে অসংখ্য ছায়াপথ-নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ ধাবমান।
শুধু একটির গায়ে লেখা “এখানে আইনস্টাইন বাস করতেন। ” আইনস্টাইনকে দিয়ে আমাদের এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর পরিচয়।
আইনস্টাইনকে নিয়ে বলতে গেলে একটু পিছনে গিয়ে শুরু করতে হয়। সে ১৮৭৪ সাল। ষোল বছরের এক জার্মান বালক জিমনাসিয়াম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর খোঁজ করছিল পদার্থবিজ্ঞানে পড়লে ভবিষ্যৎ কেমন হবে।
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরামর্শ দাতা তাকে নিষেধ করলেন। কেননা যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তা এর মধ্যেই আবিষ্কার হয়ে গেছে। ছিঁটে ফুটো যা আছে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তেমনি একজন বার্লিনের বিখ্যাত শরীরতত্ত্ববিদ এমিলী দ্যা বোয়ারেমন্ড। তিনি মনে করতেন, শক্তির সংরক্ষণের নীতি পদার্থবিজ্ঞানের চুড়ান্ত এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এবং এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।
কিন্তু বালক ম্যাক্স প্ল্যাংক কারো কথা শুনলেন না। ভর্তি হলে পদার্থবিজ্ঞানে। ১৮৭৯ সালের জুন মাসে ম্যাক্স প্ল্যাংক মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে তাঁর পি-এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, ওই বছর জন্ম নেন আইনস্টাইন, অটো হান এবং ম্যাক্স ভন লাউ (১৪ই মার্চ, ৮ই মার্চ, ৯ই অক্টোবর)। ম্যাক্স প্লাংক একসময় রসিকতা করে বলেছিলেন যে, ১৮৭৯ সালে যাঁরা জন্মে ছিলেন তাঁরা বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ধরাধামে এসেছিলেন।
তাঁদেরই একজন “ম্যাক্স প্ল্যাংক” নতুন পদার্থবিজ্ঞান সৃষ্টির প্রথম প্রদক্ষেপটি নিয়েছিলেন। আর তার পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন আইনস্টাইন।
পদার্থ বিজ্ঞানীরা মননশীল হয়। আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতত্ত্ব মননশীলতার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। শিক্ষিত মানসে আইনস্টাইন হলেন আধুনিক নিউটন।
দুই জনকে যৌবনে বোঝা যায় নি যে, প্রতিভার জয় মালা তাঁদের গলায় শোভা পাবে। আইনস্টাইন প্রায় ঝরে পড়াদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই জানতনা। তিন অজ্ঞাতই ছিলেন, যতদিন না তাঁর প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হয়। আইনস্টাইন কারো মনে বিশেষ কোন দাগ কাটতে পারেন নি।
তাঁকে একটি সহকারীর পদেও কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। ছেলের একটা চাকুরীর আশায়-নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী অস্টওয়াল্ডের কাছে পত্র লিখেও আইনস্টাইনের বাবা কোন উত্তর পান নি। এই অস্টওয়াল্ডই ১৯১০ সালে আইনস্টাইনের নাম নোবেল পুরষ্কারের জন্য সুপারিশ করেন।
আইনস্টাইনের পিতা হেরমান এবং পলিন ছিলেন মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন জার্মান ইহুদি। হেরমানের আর্থিক সংগতি বেশী ছিলনা।
ব্যবসা বুদ্ধি ছিল আরো কম। আইনেস্টাইনের জন্মের পর এক বছর পর হেরমান তার পরিবার নিয়ে মিউনিখ শহরে এসে বিদু্যৎ রসায়নের ব্যবসা শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে আইনস্টাইন ছিলেন সম্পূর্ণ অন্তর্মুখী স্বভাবের। তাঁর কথা বলতে এত দেরী হয়েছিল যে, পিতামাতা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। আলবার্ট ছিলেন নিরব, স্বাপ্নিক প্রকৃতির বালক, যে খেলাধুলা বেশী পছন্দ করেনা এবং যাঁর ছালচলনে এমন একটা ধীরস্থির ভাবছিল যা বয়ষ্কদেরও বিরক্তি উৎপাদন করতো।
ধর্মের ব্যাপারে পিতামাতা ছিলেন উদার। ছেলেকে ভর্তি করে দিলেন ক্যাথলিক স্কুলে, যেখানে তিনিই ছিলেন শ্রেণীতে একমাত্র ইহুদি। কিন্তু জার্মান বিদ্যালয়ের শৃংখলা তাঁর কাছে অসহ্য মনে হত। তাই দশ বছর বয়েসে তাঁকে লুইটপোল্ড জিমনাসিয়ামে ভর্তি করে দেয়া হল। এখানেও তার অভিজ্ঞতা ছিল তথৈবচ।
তবুও এখানে তিনি বার বছর বয়সে জ্যামিতির একটা বই পেয়ে সবটাই একেবারে পড়ে ফেললেন। জ্যামিতি উপপাদ্যের শৃংখলা আর যুক্তি তাঁর সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে গেল।
আলবার্টের বয়স যখন পনের, তখন তাঁর পিতার ব্যবসায় আরেকবার বিপত্তি দেখা দিল। ইটালীর মিলানে বেশী সুযোগ পাবার আশায় পিতামাতা ছোটবোন সহ সেখানে চলে গেলেন। আলবার্টকে রেখে গেলেন কট্টর (গোঁড়া) এক আত্নীয়র বাসায়।
স্কুলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবের অভাব এবং অস্বস্তিকর পারিবারিক পরিবেশ সবকিছু আলবার্টকে মিউনিখ থেকে চলে যেতে বাধ্য করল। একজন শিক্ষক স্পষ্ট বলে দিলেন যে, তাঁকে দিয়ে কিছুই হবেনা। সুতরাং তাঁর স্কুল পরিত্যাগ করা উচিৎ। কেননা, তার উপস্থিতি শিক্ষক ও ছাত্রদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে। আইনস্টাইনও খুব খুশী হয়ে ইটালীর মুক্ত প্রান্তরের দিকে ছূটলেন।
মিলানেও হেরমানের ব্যবসা ভাল চলছিলনা। স্বচ্ছল আত্নীয় স্বজনের সহায়তায় আলবার্ট জুরিখে ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তির আবেদন করলেন। কিন্তু জিমনাসিয়ামে ডিপ্লোমা না থাকায় তাঁকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলো। সেখানে তিনি ব্যর্থ হলেন। সুতরাং তাঁকে আবারও স্কুলে ভর্তি হয়ে তাঁর অনুপযুক্ততা দূর করতে হলো।
এরপর অবশ্য পলিটেকনিকে ভর্তি হতে তাঁর আর অসুবিধা হলো না। এইখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী হন। তিনি তাঁর ঘরে বসেই পড়াশুনা করতেন। আর বন্ধু গ্রোসম্যানের ক্লাসের নোট তাঁকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করতো।
১৯০০ সালে স্নাতক হওয়ার পর আইনস্টাইন শিক্ষক হিসাবে কোথাও চাকুরী পেলেন না।
দুই বছর তিনি খন্ডকালীন শিক্ষকের কাজ বা ছাত্রদের কোচিং ইত্যাদি করে জীবন ধারণ করলেন। এরপর গ্রোসম্যানের পরিবারের সাহায্যে তিনি বার্ণ শহরে পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট-পরীক্ষক তৃতীয় শ্রেণী হিসাবে একটি চাকুরি পেলেন। এইখানে আইনস্টাইন মোটামুটি একটা সন্তোষজনক জায়গা পেলেন। সেখানে নিশ্চিন্তে কাজ করার সময় পেলেন। তাঁর এই নিঃসংগ চিন্তার ফসলই হল ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তিনটি অসাধারণ প্রবন্ধ, কেবল যার একটির জন্যই আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতেন।
প্রবন্ধ সমূহ হলঃ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব, আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া ও ব্রাউনিয়ান গতি।
২৬ বছর বয়সে একলাই ধারণা জগতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিলেন তিনি। এসব ধারণা সৃষ্টি করার সময়ে তিনি পেটেন্ট অফিসের সামান্য একজন কর্মচারী ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন গবেষণা জগতের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কবিহীন। বহু বছর পরে আইনস্টাইন বলে ছিলেন যে, ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কখনও চোখে দেখেননি।
গবেষণা জগতে তাঁর ধারণা সমূহ যাচাই করার কোন প্রয়োজনীয়তা আনুভব করেন নি, কেননা ওই সবের সঠিকতা সম্মন্ধে তাঁর কোন সন্দেহ ছিলনা।
একদা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যদি তাঁর আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব সত্য না হত তাহলে তাঁর কি আনুভূতি হত? তিনি বলেছিলেন, তেমন হলে জার্মানেরা বলতো আইনস্টাইন ইহুদি, বিশ্ববাসী বলতো আইনস্টাইন জার্মান। আর সত্য প্রমানিত হওয়ায় বিশ্ববাসী বলছে আইনস্টাইন বিশ্ব্নাগরিক আর জার্মানরা বলছে আইনস্টাইন জার্মানীর। কিন্তু মজার ব্যপার এই যে, নোবেল পুরষ্কার কমিটি ১৯১০ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত আইনস্টাইনের অবদান নিয়ে কেবল আলোচনাই করেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
১৯২২ সালের কমিটি ১৯২১ সালের পুরষ্কারটি তাঁকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে অবদান, বিশেষ করে, আলোক-বিদ্যুৎ ক্রিয়ার আইনটি আবিষ্কারের জন্য।
লক্ষ্যণীয় যে, আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য আইনস্টাইনকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়নি। কারণ তখনও এই তত্ত্বের (বিশেষ ও সাধারণ) পরীক্ষালব্ধ প্রমান যথেষ্ট বলে মনে হয়নি। নোবেল কমিটির বিশেষজ্ঞ গালস্ট্রাড ছিলেন শরীরতত্ত্ববিদ এবং আরহেনিয়াস রসায়নবিদ, উভয়ে আইনস্টাইনের বিপক্ষে। পদার্থবিজ্ঞানীরা অবশ্য বারবার আইনস্টাইনের নাম করছিলেন।
পদার্থবিজ্ঞানী ব্রিলোঁয়ার ভাষায়, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর মানুষ কি মনে করবে, যদি নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তদের তালিকায় আইনস্টাইনের নাম না থাকে।
১৯০৯ সালের দিকে আইনস্টাইনের অব্দান ধীরে ধীরে বিদ্ব্যৎ সমাজে পরিচিত ও স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে। ক্রাকাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকই নাকি প্রথম আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর প্রবন্ধ পাঠ করে মন্তব্য করেছিলেন একজন নতুন কোপারনিকাস জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
বার্ণ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রথম সহকারী আধ্যাপক পদে নিয়োগ দান করে। এখান থেকে তিনি জুরিখে সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দান করেন।
এইখানে কিছুদিন কাজ করার পর প্রাগে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান। কিন্তু স্ত্রী মিলেভারের প্রাগ শহর পছন্দ নয় বলে তিনি ১৯১২ সালে আবার জুরিখের পলিটেকনিকেলে ফিরে আসেন। পরের বছর প্ল্যাংকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি বার্লিনের কাইজার ভিলহেলম ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভ করেন। বার্লিনে আসার পরপরই স্ত্রী মিলেভার সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির পর পরষ্কারের সমূদয় অর্থ তিনি মিলেভাকে দিয়ে দেন।
কিছু দিন পর তিনি তাঁর দূর সম্পর্কের আত্নীয়া এলসার সঙ্গে পরিণয় সুত্রে আবদ্ধ হন, যদিও সত্যিকার অর্থে আইনস্টাইন সারা জীবন একলাই ছিলেন।
আইনস্টাইনের উক্তি-
“আমি বাস্তবিক নিসংগ। কওন দিন আমি সারা অন্তর দিয়ে রাষ্ট্র, জন্মভূমি, বন্ধু-বান্ধবের চক্র, এমনকি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মধ্যেও অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না। বরং এই সব সম্পর্ক আমার মধ্যে সবসময়ে একটা বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি এবং একাকীত্ত্বের প্রয়োজনীয়তাবোধ এনে দিয়েছে। ”
এখন পর্যন্ত সব পরীক্ষাতে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু সব সময়ে নতুন নতুন পরীক্ষার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী দাবী করলেন যে, নিউট্রিনোর গতি আলোর চেয়ে একটু বেশী। যা কিনা আপেক্ষিকতার বিশেষতত্ত্ব ভুল প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিধাতা মুছকি হাসলেন। আপেক্ষিকতত্ত্ব টিকে গেল নির্ভুলভাবে।
আইনস্টাইনের ১৯১৭ সালের একটি প্রবন্ধে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বকে বিশ্বসৃষ্টির ব্যাপারে প্রয়োগ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে আধুনিক বিশ্বসৃষ্টতত্ত্ব।
আইনস্টাইনের সমীকরণের সোয়ার্তশচিল্ড সমধান, রবার্টসন ওয়াকার মেট্রিক্স, কৃষ্ণবিবর, শ্বেত বামন, নিউট্রিনো তারা, এসব এবং আরো অনেক কিছু সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ অবদান।
বিজ্ঞানী ছাড়াও আইনস্টাইনের আরো একটি মধুর পরিচয় আছে, যার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে তিনি এত প্রিয়। সারা জীবন তিনি শান্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। জার্মানীর উগ্র জাতীয়তাবাদ তাঁকে সবসময়ে আন্তরিক পীড়া দিয়েছে। এই জন্যই তিনে প্রথমে সুইস পরে আমেরিকার জাতিত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু আসলে তিনি কখনও কোন দেশের ক্ষুদ্র সীমানায় নিজকে আবদ্ধ করেন নি।
রবীন্দ্রনাথের মত আইনস্টাইন ছিলেন সত্যিকারের বিশ্ব নাগরিক। বাঙ্গালীর গর্ব রবীন্দ্রনাথের সাথে মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের দেখা হয়েছিল। কতিথ আছে যে, রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনকে উদ্দেশ্য করে একটি গান লিখেছিলেন। গানটি হলঃ
সেদিন দু’জনে দুলে ছিনো বনে
ফুল ডোরে বাঁধা দুলনা, ভুলনা।
ইহুদি রাস্ট্র প্রধান হতে চান নি তিনি, যদিও এক সময় এই রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সক্রিয় সাহায্য করেছেন।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তাঁর শান্তিবাদী আদর্শ তাঁকে বিপদে ফেলতে পারত। কিন্তু সুইস পাসর্পোট তাঁকে রক্ষা করে। কিন্তু ২য় মহাযুদ্ধের ঠিক আগে হিটলারের নাৎসিরা তাঁকে খুঁজে বেড়িয়েছে এবং বেলজিয়ামের আস্টেন্ডে পালিয়ে আত্নরক্ষা করেন তিনি।
ধর্মের ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে, তিনি ব্যক্তিগত ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, কিন্তু যে ঈশ্বর সকলকে শাস্তি দেয়ার জন্য কথাও বসে আছেন, তাঁর উপরে তাঁর আস্থা নাই। আইনেস্টাইনের আপেক্ষিতত্ত্ব হয়ত অনেকে বুঝতে পারেন না।
কিন্তু মুক্তবুদ্ধির মানুষ হিসাবে তাঁর যে তুলনা হয়না এই কথা সকলেই মানেন।
আইনস্টাইন আর নিউটনের মধ্যে সময়ের পার্থক্য ২০০ বছর। সুতরাং বলা যায় যে, ২০০ বছরে একজন নিউটন অথবা একজন আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে আবির্ভূত হয়ে পদার্থবিজ্ঞানকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে যান। আসছে ২০৭৯ সালের অপেক্ষায় আছি আমরা অতি আধুনিক যুগের আইনস্টাইনের। ১৯০০ সালের মত অনেকে মনে করেন এখন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে নতুন কিছু করার নাই।
প্রগতির স্রোতে ভেসে যাক প্রতিক্রিশীলদের ধারণা। হিগস বোসন ও থিওরী অব এভরীথিং কি সে দার উন্মুক্ত করে দিতে পারে? অতি আধুনিক যুগের আইনস্টাইনের জন্ম হউক আমাদের এই সবুজ বাংলায়, এমন ভাবনা কি আকাশ কুসুম হবে? জয় হউক আইনস্টাইন প্রেমীদের। জয় হউক পদার্থবিজ্ঞানের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।