কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ১ম পর্ব
৪
আজিমপুর
11:50 pm
সাদিয়া তার বড় বোনের রুমের সামনে গিয়ে বলল, আপা, দরজা খোল।
নাফিজা দরজা খুলে দিল। কি, ও এসেছে?
হ্যাঁ, উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তুমি রেডি?
আর অল্প একটু সময় লাগবে।
তাড়াতাড়ি কর।
তোকে যে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেব...
ঢং কর না তো আপা। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে?
হ্যাঁ, এই তো।
আমি এখনই দিয়ে যাচ্ছি।
সাদিয়া মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গেল। মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে SADIA লেখা নাম্বারটা খুঁজে বের করল সে।
EDIT অপশনে গিয়ে নামটা পরিবর্তন করল সে। SADIAর পরিবর্তে লিখল, RASHED।
তারপর নিজের মোবাইল থেকে একটা ড্রাফ্ট মেসেজ নাফিজার নাম্বারে পাঠিয়ে দিল সে। মেসেজটা ছিল এরকম,
I am waiting outside. Be ready and come soon. Love you so much.
তারপর মোবাইলটা অপেক্ষমাণ বাবার কাছে নিয়ে গেল সে।
মেসেজটা পড়েন।
খবির সাহেব মেসেজটা পড়েন। ধীরে ধীরে তার সারা মুখ রক্তিম হয়ে যায়। রাগে কাঁপতে থাকে সমস্ত শরীর।
এইটা কি...?
হ, এইটা আপার মোবাইল। উনার বয়ফ্রেন্ড লিখসে মেসেজটা।
খবির সাহেবের মাথা গরম হয়ে যায়। তিনি ঘরে ছুটে যান। চিৎকার করে কিছু একটা বলেন উপস্থিত সবাইকে।
সবাই হই হই করে ওঠে।
মুখে একটা মৃদু হাসি ফুটে ওঠে সাদিয়ার।
শুধু একটু মেধাবী বলে সারাজীবন আপা তার উপর হম্বিতম্বি করে গেছে। সারাজীবন আব্বা আম্মা আপাকে বেশি ভালবেসে গেছে। সাদিয়া জীবনে একবারও তার প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু এতদিন সে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
আজ সে সুযোগ এল।
সাদিয়ারা আর যাই করুক, সুযোগের অপব্যবহার করে না।
৫
মোশাররফ ভাইর দোকান
শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি হল
11:30 pm
রাশেদ তার পরচুলাটা পরে নিল। মোশাররফ ভাইর দোকান থেকে এক প্যাকেট বেনসন কিনে নিল সে।
পথে কয়েকটা জুনিয়র তাকে সালাম দিল। আসসালামু আলাইকুম ভাই।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ভাই কই যান? একটু অন্যরকম লাগতেসে?
এই তো, বাইরে।
ভাই আপু মিলন চত্বরে ওয়েট করতেসে নাকি?
এই শয়তান...
জুনিয়ররা হাসি দিয়ে দৌড়ে পালাল। রাশেদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আজ তার জীবনের কঠিনতম দিন।
আইটেম, টার্ম, প্রফ...সব পরীক্ষার চেয়ে কঠিন পরীক্ষা তার আজকে।
এই পরীক্ষায় পাশ হলে জীবন সার্থক। আর এই পরীক্ষায় ফেল হলে এই জীবন রেখে কোন লাভ নেই।
ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল অনেকটা এভাবে।
ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে অ্যানাটমি ফার্স্ট টার্মের সাপ্লি পরীক্ষার সময় একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায় রাশেদের।
মেয়েটা ভদ্র, মাথায় কাপড় দিয়ে থাকে সবসময়। ছেলেদের সাথে বেশি কথাবার্তা বলে না।
কেন যেন রাশেদের মনে হয়, জনম জনম ধরে যার জন্য কাঁদা যায়, এ হচ্ছে সে-ই।
রাশেদ মেয়েটা সম্বন্ধে খোঁজখবর নেবার চেষ্টা করে। শোনে, মেয়েটা বলেছে, সে কোন ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করবে না।
রাশেদের গলা শুকিয়ে যায়। বুক ধড়ফড় করে। হঠাৎ জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে যায় সে।
সে খায় না, ক্লাসে যায় না। খেলা ধুলা করে না, আড্ডাও মারে না।
হঠাৎ করে কেমন যেন হয়ে যায় সে।
তার ফ্রেন্ডরা বলে, কি হয়েছে তোর?
সে বলে, কিছু না।
ফ্রেন্ডরা আবার বলে, কি হয়েছে তোর?
সে বলে, তোরা বুঝবি না।
ফ্রেন্ডরা ব্যাপার কিছু কিছু আঁচ করতে পারে। তারা তাকে খোঁচাতেই থাকে।
বল না কি হয়েছে?
কোন মেয়ে কিছু বলেছে?
কোন মেয়ের সাথে কিছু হয়েছে?
অবশেষে ছেলেটা একদিন বলেই দেয়, হ্যাঁ, হয়েছে। আমি নাফিজাকে পছন্দ করি।
কোন নাফিজা? ঐ মুডি, গুন্ডা নাফিজা?
মানে? গুন্ডা কেন? কি করেছে সে?
পিরিত তো কর, কি করেছে তার খবর রাখ না। সেদিন তো ফিজিও আইটেমে আসিফদের ব্যাচের একটা মেয়ে কিছু পারতেসিল না, তাই দেখে আসিফ তো ক্লাসের মধ্যেই হো হো করে হেসে দিয়েছে। আর যাবি কোথায়, ক্লাসের পর নাফিজা আসিফকে ডেকে এমন ঝাড়া ঝেড়েছে যে পারলে আসিফ তখনই পায়ে হাত দিয়ে ঐ মেয়ের কাছে ক্ষমা চায়।
তাই নাকি?...
রাশেদের অবস্থার অবনতি হয়। এরকম মেয়েকে কিভাবে পটানো যাবে?
নাকি যাবেই না?
রাশেদ তার রুমমেটদের পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে।
রুমমেটরা তাকে বুদ্ধি দেয়, তুই ওর সাথে পড়াশোনা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা কর, দ্যাখ কি হয়।
রাশেদ একদিন অনেক সাহস করে ক্লাসের পরে নাফিজাকে পাকড়াও করে। অনেক সময় নিয়ে বলে, তোমার বায়োকেম খাতাটা হবে?
কেন?
আমি একটু ফটোকপি করে নিতাম।
তুমি ক্লাস কর না?
কয়েকটা ক্লাস করতে পারি নি...
ক্লাস না করলে তো তোমার খাতা পাওয়াও উচিত না।
মানে...অনেক উপকার হত, বুঝেছ?...
যে নিজের উপকার নিজে করতে জানে না, তার আবার কি উপকার হবে? এখন আমি যদি খাতাটা দিই, তাহলে সামনে তুমি আবার ক্লাস ফাঁকি দেবে, কারণ খাতা নিয়ে তো আমি রেডিই আছি, রাইট?
ইয়ে...
আর এত লোক থাকতে আমার খাতার কি দরকার ছিল তোমার? ছেলেরা কি কেউই ক্লাস করে না?
করে...
তাহলে আমার কাছ থেকে নেবার কি দরকার ছিল?
ইয়ে...
আচ্ছা ঠিক আছে, আজকের মত দিলাম। আর যেন না হয় এরকম, ঠিক আছে?
সেই ছিল শুরু।
তারপর অনেক ঝাড়ি খেয়ে, অনেক অপমান সহ্য করে, এবং শাস্তি হিসেবে অনেক বেশি সময় ধরে রিডিং রুমে পড়াশোনা করার পর, প্রথম কথা বলার দুই বছর পাঁচ মাস নয় দিন পর একদিন রাশেদ দেখল, তার ভালবাসা একতরফা নয়।
তারা দুজন সেদিন রাতে শহীদ মিনারের গোঁড়ায় বসে অনেকক্ষণ গল্প করল।
মূলত নাফিজাই তার কথা বলল বেশি, রাশেদ সব শুধু হা করে শুনল।
নাফিজা তার পরিবারের অবস্থার কথা বলল। তার গবেট বোনের কথা বলল। তাদের আর্থনীতিক অবস্থার কথা বলল। মেডিকেল কলেজে চান্স পাবার পিছনে তার হাড়ভাঙা খাটুনির কথা বলল।
সে তার স্বপ্নের কথা বলল। সে যে বড় হয়ে বহু মানুষের সেবা করতে চায় সেই কথা বলল। সে যে মানুষের মনে স্থায়ী আসন গেড়ে বসতে চায় সেই কথা বলল।
এবং সে এটাও বলল, এই স্বপ্ন পূরণে তার একজন সহ-স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়োজন। জীবনের বন্ধুর চলার পথে তার একজন প্রকৃত বন্ধু প্রয়োজন।
এমন বন্ধু, যে কি না শত প্রলোভনেও বন্ধুকে ছেড়ে যাবে না, শত ভুল বোঝাবুঝিতেও বন্ধুকে ত্যাগ করবে না। ঝড় বাদল যাই আসুক সে জীবন দিয়ে বন্ধুকে রক্ষা করবে।
রাশেদ মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিল কথাগুলো। এবার সে বলে উঠল, যদি তুমি যাকে পেতে চাও সে তোমার মনের মত না হয়?
নাফিজা তখন বলল, তাহলে আমি তার মনের মত হব। ভুলিয়ে দেব তার সব দুঃখ কষ্ট ক্লেদ গ্লানি।
রাশেদ বলল, আমায় এক দিন সময় দাও।
নাফিজা বলল, আচ্ছা।
একদিন পর রাশেদ নাফিজাকে বলল, আমি তোমার সহ-স্বপ্নদ্রষ্টা হতে চাই। আমি আবার স্বপ্ন টপ্ন বেশি দেখি না...কেমন হয় যদি তোমার চোখ দিয়েই আমি আমার স্বপ্ন দেখি?
নাফিজার চোখে পানি এসে গেল। ...
ভাবতে ভাবতে রাশেদের মাথা ঝিমঝিম করে।
টেনশন বেড়ে যায়। একটা সিগারেট বের করে ধরায় সে।
এগারোটা পঁয়ত্রিশ।
একটা খালি রিকশা ঠেকায় সে। এই মামা, আজিমপুর যাবে?
আজিমপুর কই?
গোরস্থানের সামনে।
চলেন।
কত?
বিশ টেকা।
বিশ? আচ্ছা চল।
রাশেদ রিকশায় ওঠে। রিকশা বুয়েটের সামনে দিয়ে যেতে থাকে।
রাশেদের পকেটে হাজার তিনেক টাকা। এর মধ্যে এক হাজার আবার ফ্রেন্ডের ধার দেয়া।
আজ নাফিজাকে বাসার বাইরে বের করে নিয়ে আসতে হবে। তারপর তাকে নিয়ে ফুপুর বাসায় রাখতে হবে। ফুপুর বাসা আবার উত্তরা, সেখানে যাবার জন্য এখন আবার সিএনজি যোগাড় করা লাগবে।
নাহ, আসলেই ঝামেলা।
শালার নাফিজার বাপটা এমন, শালা ডাক্তার পোলা পছন্দ করে না। আবে... ডাক্তার পোলা আবার পছন্দ না করার কি হইল? আর বিয়ে দেবার জন্য কারে ঠিক করেছে দেখ না, কোথাকার কোন অশিক্ষিত পাঙ্কু পোলা। সে নাকি আবার ব্যবসা করে! ব্যবসা না ছাই। বাপের হোটেলে খায় আর ঘুমায়।
আর নাফিজাটাও এমন! বলেছে, তুমি আমাকে না নিয়ে গেলে আমি বিষ খাব। বিষ। বলেছে তোমার সাথে আমি রাস্তায় থাকতেও রাজি আছি, নর্দমায়ও থাকতে রাজি আছি।
হঠাৎ করেই চোখটা ভিজে যায় রাশেদের। মেয়েটা তাকে কত বিশ্বাস করে! এত ভাল একটা মেয়ে তার সাথে রাস্তায়ও থাকতে পারবে, এর চেয়ে সুখের জিনিস আর কি হতে পারে?
মামা, আইসা পরসি।
ও, চলে আসছেন? টেরই পাইনি।
রাশেদ ভাড়া মিটিয়ে দিল। ঘড়ি দেখল। এগারোটা পঞ্চাশ।
কিছুদূর হেঁটে গোরস্থানের সামনে এসে দাঁড়াল সে।
নাফিজাদের বাড়িটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
রাশেদ একটা সিগারেট ধরাল।
নাফিজাদের বাড়ির সামনে একটা প্রাইভেট কার পার্ক করা। তার সামনে ঠেস দিয়ে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
কাকে যেন খুঁজছে।
এ কি পাত্রপক্ষের লোক নাকি? হতেও পারে। আজ রাতেই তো পাত্রপক্ষ আসার কথা।
নাফিজার পালানোর প্ল্যানটাও সেভাবেই করা। আজকে পালাতে পারলে পাত্রপক্ষ কাহিনী পুরোটাই জেনে যাবে।
মেয়ের বাপ কোন দুই নম্বরি কাহিনী তাদের বলতে পারবে না। তারা নিশ্চয়ই অন্যের সাথে ঘর ছাড়া মেয়েকে বিয়ে করার চিন্তাও করবে না।
ছেলেটা এদিকেই তাকিয়েছে। আরে! সে তো তাকিয়েই আছে!
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়েছে ছেলেটার মুখের উপর। তাকে খুবই চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
ছেলেটা তার দিকে তাকিয়েই আছে। সে কি তাকে চিনতে পেরেছে?
নাকি এসকেপ প্ল্যান কোনভাবে ফাঁস হয়ে গেছে? ছেলেটা আসলে আর কেউ না, নাফিজার বাবার ঠিক করা কোন স্পাই, বা এই জাতীয় কিছু।
রাশেদের মাথায় হঠাৎ করে একটা বুদ্ধি এল। চরম বুদ্ধি।
পাগলের অভিনয় করতে হবে।
এর আগে কয়েকদিন সে ছাত্রলীগের সম্পাদক জহির ভাইয়ের সাথে সাথে ঘুরত, তখন সে কিছু ডায়লগ শিখেছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে সে যতটুকু মনে আছে বলা শুরু করল।
আমি সব জানি। তোমাদের জন্য বাংলাদেশের ট্রান্সপোর্ট হয় না। তোমরা দেশটা খেয়ে ফেলেছ।
তোমরা সব দালাল। তোমরা সব দেশকে নষ্ট করে ফেলেছ। ...
দেশ যেমন তোমার, দেশ তেমন আমারও। আমি দেশে থাকতে তোমাদের চক্রান্ত বাস্তবায়িত হতে দেব না। আমি সব জানি।
আমি তোমাদের ধ্বংস করব। ...
আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাল রাশেদ। এই অ্যাঙ্গেলে তাকে খুবই চেনা চেনা মনে হচ্ছে...কে সে?
আরে, ছেলেটা তো মোবাইল বের করছে। তাহলে কি সে সত্যিই নাফিজার বাবার স্পাই? সে কি এখন নাফিজার বাবাকে ফোন করে বলবে, আঙ্কেল, ছেলেটা তো এসেছে। দিমু নাকি ছেঁচা?...হায় হায়, কিছু একটা তো করা দরকার।
রাশেদ আরও জোরে বলা শুরু করল, আমি জানি তোদের সব নীলনকশা। আমি জানি তোদের দালালী। আমি জানি...
ঠিক এই সময় নাফিজাদের বাসার নিচতলা থেকে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এল বেশ কজন পুরুষ মানুষ। নিঃশব্দে।
ভয়ে রাশেদ চোখে অন্ধকার দেখল।
ওরা সব টের পেয়ে গেছে! এখন সে কোথায় পালাবে?
হাতের সিগারেট ফেলে দিল রাশেদ। পিছন ফিরে একটা দৌড় দেবার দুর্দমনীয় ইচ্ছা হল তার...
চোখ ফিরাতে পারল না রাশেদ। তার আগেই লাঠির বাড়ি ঠাস করে পড়ল ছেলেটার মাথায়।
৬
আজিমপুর
11:50 pm
নাফিজার ঘরের দরজায় নক হল, আপা, দরজা খোল।
নাফিজা একটা বড় দম নিল।
হিংসুক শয়তানটা এসেছে।
সে দরজা খুলে দিল। কি, ও এসেছে?
সাদিয়া বলল, হ্যাঁ, উনি বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তুমি রেডি?
আর অল্প একটু সময় লাগবে।
তাড়াতাড়ি কর।
তোকে যে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেব...
ঢং কর না তো আপা। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে?
হ্যাঁ, এই তো।
আমি এখনই দিয়ে যাচ্ছি।
সাদিয়া চলে গেল। নাফিজা দৌড় দিয়ে সাদিয়ার ঘরে গেল।
তুলে নিল সাদিয়ার বোরকা।
তাড়াতাড়ি ওটা পরে নিল সে। মুখটা ঢেকে নিল স্কার্ফ দিয়ে।
হঠাৎ বাইরে গোলমাল শুনতে পেল সে। বুকটা তার অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল।
ধরা পরে যায় নি তো রাশেদ?
আস্তে করে ড্রয়িংরুমের সামনে চলে এল সে। দেখল, সবাই হই হই করে নিচের দিকে ছুটছে।
নাফিজা তাদের পিছন পিছন ছুটে গেল। কেউ একজন বলে উঠল, শালাকে মেরেই ফেলব আজকে।
নাফিজার সমস্ত পৃথিবী দুলে উঠল।
মাথা ঘুরতে লাগল প্রবলভাবে।
ব্যালান্স রাখার জন্য দেয়াল ধরে ফেলল সে। তারপরই দৌড়ে গেল সিঁড়িঘরে।
কেউ একজন চাপা স্বরে বলে উঠল, ধর শালাকে। পুঁতে ফেল।
নাফিজা চিৎকার করে সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে লাগল। তার মাথা আর কাজ করছে না।
পাইসি, চাপা স্বরে বলে উঠল কেউ একজন। নাফিজা পা হড়কে পড়ে গেল। হেঁচড়ে পাঁচরে আবার উঠে দাঁড়াল সে।
দৌড়ে গিয়ে সে রাস্তায় নামল। দেখল, সবাই মিলে একজনের উপর চড়াও হয়েছে। পেটাচ্ছে পশুর মত।
নাফিজা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেল মানুষটার দিকে।
ছাড়ো, ছাড়ো! সে একজনের হাত ধরে টানাটানি করতে লাগল।
যার হাত ধরে সে টানাটানি করছিল, সে তাকে চিনতে পারল না। তাই সে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, আপা আপনি সইরা যান। আজ দেইখাই লইব হারামজাদারে।
নাফিজা ঠেলাঠেলি করে ভিতরে মানুষটার কাছে যাবে, এমন সময় দূর থেকে কেউ একজন এসে মানুষটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এই তুই কে রে আবার! মার শালারে, মার! চিৎকার দিয়ে উঠলেন নাফিজার বাবা।
তারপর সমান তালে দুজনকেই পেটাতে লাগলেন।
কারও কনুইয়ের গুঁতো লাগল নাফিজার ডান চোখে। প্রচণ্ড জ্বালা করে উঠল সেখানে। চোখ ধরে একটা আর্তচিৎকার দিল নাফিজা।
৩য় পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।