কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আজিমপুর
11:50 pm
আজিমপুর গোরস্থানের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কমরের জন্য অপেক্ষা করছিল সালেহ। কমর তার বন্ধু, তারা একত্রে সাইকেলে রাতের ঢাকা দেখবে বলে বের হয়েছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের হল থেকে আজিমপুর আর নিউমার্কেট দিয়ে আসাদ গেট ও ফার্মগেট হয়ে আবার হলে ফেরা। পথে যদি চন্দ্রিমা উদ্যান দেখা হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই, কিন্তু এত রাতে চন্দ্রিমা উদ্যানে নিশ্চয়ই কোন সুখকর দৃশ্য তাদের জন্য অপেক্ষা করছে না।
কমরের আজিমপুরে কি যেন কাজ আছে।
তাই তো আজিমপুর আসার পর কমর সালেহকে বলল, দোস্ত, একটু দাঁড়া।
সালেহ বলল, কই যাবি?
কমর লাজুক হাসি হেসে বলল, দোস্ত কাজ আছে।
সালেহ অবাক হয়ে বলল, এত রাতে?
কমর বলল, হ্যাঁ দোস্ত।
সালেহ এমন একটা ভাব করল যেন সে অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে। সে একটা ভিলেন মার্কা হাসি হেসে বলল, যা যা, দেখা করে আয়।
কমর লাজুক হাসি হাসল। দেখা করে আয় মানে?
মানে বুঝিস না? বলব সবার সামনে?...
কমর লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল। সালেহ আপন মনে হাসল। কমরের নাকি আজিমপুরে কোন বান্ধবী আছে। বান্ধবী মানে সেই লেভেলের বান্ধবী।
তাকে নিয়ে কিছু বললেই কমর লজ্জা পায়। হে হে।
আস্তে আস্তে কমরের অবয়ব রাস্তার ওপাশে হারিয়ে গেল। সালেহ একটা করুণ হাসি হাসল। শালা আমার কিছু হইল না জীবনে।
সালেহ সাইকেলটা বেঁধে রেখে একটা গাড়ির উপর ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একমনে চারপাশের দৃশ্য দেখছিল সে।
পাশে গোরস্থান। সামনে রাস্তা। লোকজন কম।
দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
মাঝে মাঝে সামনে দিয়ে ভোঁ ভোঁ করে রেসিং মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেদের শৌর্যবীর্য প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে পাঙ্কু ধরণের কিছু ছেলে। আর তাদের দেখে টিটকারি মারছে আশেপাশের লোকজন।
সামনে একটা তিনতলা বাসা। তৃতীয় তলায় আলো জ্বলছে।
হঠাৎ আবার গোরস্থানের দিকে চোখ ফেরাতেই সালেহ দেখল, তার থেকে হাত বিশেক দূরে একটা লোক দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে।
লোকটা কেমন যেন...অদ্ভুত...
সালেহ একটা অন্যরকম কৌতূহল নিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটার মধ্যে কি যেন ঘাপলা আছে।
একটু পরেই সেই লোকটা উপরের দিকে তাকাল। তারপর জোরে জোরে বলা শুরু করল, আমি সব জানি।
তোমাদের জন্য বাংলাদেশের ট্রান্সপোর্ট হয় না। তোমরা দেশটা খেয়ে ফেলেছ। তোমরা সব দালাল। তোমরা সব দেশকে নষ্ট করে ফেলেছ। ...
সালেহ বেশ মজা পেল।
এ আবার কেমন মাল রে ভাই? এ কি পাগল? পাগল হতেও পারে, তবে দেশপ্রেমিক পাগল। ভালোই।
তবে গলাটাও কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে...ব্যাপারটা কি?
আশেপাশের মানুষরাও লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু পাগলটার সেই দিকে মন নেই। সে সিগারেটে বড় একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ল।
তারপর আবার জোরে জোরে বলা শুরু করল, দেশ যেমন তোমার, দেশ তেমন আমারও। আমি দেশে থাকতে তোমাদের চক্রান্ত বাস্তবায়িত হতে দেব না। আমি সব জানি। আমি তোমাদের ধ্বংস করব। ...
আরে, এ তো ভালোই চিড়িয়া! সালেহ ভাবল, এ হয়তো আগে কোন বড় নেতা তেটা ছিল।
তখন এইসব বড় বড় ডায়লগ ছাড়ত। পরে হয়তো ছ্যাঁকা ট্যাকা খেয়েছে, বা দল থেকে তাকে বের করে দিয়েছে, তাই সে এখন পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু তার সেই বোধ গুলো এখনও বিলুপ্ত হয় নি।
কিন্তু গলাটা এত চেনা চেনা লাগছে কেন? হয়তো এটা কাকতালীয় কোন ব্যাপার, দুজনের গলা তো একই রকম লাগতেই পারে, তাই না?
সালেহ সামনের তিনতলা বিল্ডিঙটার দিকে তাকাল। জানালা দিয়ে কেউ যেন উঁকি মারার চেষ্টা করছে।
ধুর, কমর আসে না ক্যান? শালা কি না কি করতেসে, বোধহয় বিশাল মজা লুটতেসে।
সালেহ তার মোবাইলটা পকেট থেকে বের করল। নোকিয়া ডাবল ওয়ান ডাবল জিরো। কাকে ফোন দেয়া যায়?
বাপ? নাহ।
মা? নাহ।
ছোট ভাই? না। ধুর।
কোন ফ্রেন্ড? হ্যাঁ, দেয়া যেতে পারে। কারে দিমু?
বান্ধবী? নাহ। তার ওরকম কিছু নেই।
শালা কি করলাম জীবনে।
তবে তার এক কাজিন আছে। মেয়ে। তাকে ফোন দেয়া যায়। হাজার হোক, মেয়ে তো, কথা বলতে খারাপ লাগবে না।
সালেহ সেই কাজিনের নাম্বার খুঁজে বের করে তাকে ফোন দিল। রিং হচ্ছে...
ওদিকে পাগলের কথা শোনা যাচ্ছে, মনে হয় একটু জোরেই শোনা যাচ্ছে, আমি জানি তোদের সব নীলনকশা। আমি জানি তোদের দালালী। আমি জানি...
এই সময় হঠাৎ পাগলটা থেমে গেল।
সালেহর ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগল।
কি হল? চারপাশের পরিবেশটাও কেমন শান্ত হয়ে গেল হঠাৎ করে।
কি হয়েছে? কি ব্যাপার?
সালেহ মোবাইল থেকে মুখ তুলে পাগলটার দিকে তাকাল। দেখল, পাগলটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে।
সিগারেটটা সে হাত থেকে ফেলে দিয়েছে।
অস্বাভাবিক।
কিছু একটা বলার জন্য সালেহ মুখ খুলল।
ঠিক সেই মুহূর্তে তার মাথার উপর ভারী কিছু দিয়ে কেউ প্রচন্ডভাবে আঘাত করল। সালেহ টু শব্দ করার সময় পেল না। মাটিতে পড়ে গেল সে।
সাথে সাথে অন্ধকার হয়ে গেল তার জগত। অজ্ঞান হবার আগে একবার মা বলে ডাকার চেষ্টা করেছিল সে, যদিও তাতে সফল হতে পেরেছে কি না তা বোঝার আগেই তার জ্ঞান লুপ্ত হয়ে গেল।
২
আজিমপুর
11:50 pm
সালেহকে দাঁড় করিয়ে রেখে কমর সাইকেল নিয়ে আজিমপুরের ভিতরে চলে গেল।
আজকে সালেহর জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষ্যে সালেহ অনেককে স্টারে দাওয়াত করে খাইয়েছে।
তাদের মধ্যে কমরও ছিল।
কমরের মনেই ছিল না আজকে সালেহর জন্মদিন। নাহলে সে কিছু কিনে রাখত আগেই।
সন্ধ্যায় যখন সে খাওয়ার দাওয়াত পেল, তখনই তার মনে পড়ল আজকে সালেহর জন্মদিন। সাথে সাথে টেনশনে পড়ে গেল কমর।
সালেহকে কিছু একটা তো দিতে হবে।
কিন্তু এখন তো কিছু কেনার সময় নেই। শিট!
কমরের এক পুরনো বন্ধু থাকে আজিমপুরে। কমর তাকে ফোন দিল দাওয়াত খেতে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে।
দোস্ত ভালো আছিস?
আরে কমর! ভালো আছি।
কি খবর বল।
দোস্ত আমার একটা উপকার করতে পারবি?
কি উপকার?
তুই একটু নীলক্ষেত যেতে পারবি?
কি করতে?
একটা বই কিনতে হবে। একটা ফ্রেন্ডের জন্য।
ছেলে না মেয়ে?
ছেলে।
আজকেই লাগবে?
হ্যাঁ।
আমি দোস্ত আটকা পরে গেছি, তুই একটু যদি...
আরে আরে থাম। আমি জাইতেসি তো। তুই কখন নিবি?
আজকে রাতেই।
কি বই?
অগ্নিরথ।
কি?
অগ্নিরথ।
ও-গ-নি-রথ।
কে লিখসে এই বই?
সমরেশ। সমরেশ মজুমদার।
আচ্ছা আমি কিনে রেখে দিব। তুই আসবি কখন?
বললাম না রাতে।
কমর সাইকেলের এক টানে সরকারী কলোনিতে বন্ধুর বাসার সামনে গেল। সাইকেল থেকে নেমে সে দরজায় নক করল, তোফাজ্জল! তোফা!
সাথে সাথে ফ্রেন্ড দরজা খুলে দিল। বলল, ভিতরে আয়।
কমর বলল, না দোস্ত, একটু ঝামেলা আছে। তুই বই কিনেছিস?
তুই বলেছিস আর আমি কিনব না? এটা কি করে হয়? তুই ভিতরে আয়, আমি বই দিচ্ছি।
না দোস্ত, ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে এসেছি। দে না।
আচ্ছা, দাঁড়া।
কমরের বন্ধু একটা সুন্দর র্যাপ করা বই এনে কমরের হাতে দিল। কমর অবাক হয়ে বলল, তুই আবার এইসব কি করেছিস?
বেশি কিছু না।
আচ্ছা তোর কত খরচ হয়েছে?
ক্যান? কি করবি?
না, বল। রিকশা ত্রিশ, বই ধরলাম একশ।
যা ভাগ হারামি। আবার হিসাব করতে আসে। অই শালা, তোর আমার ফ্রেন্ডশিপের কোন হিসাব হয় নাকি?
তোফাজ্জল কিছুতেই টাকা নিতে রাজি হল না।
কমরের শত সাধাসাধিতেও না।
বইটা নিয়ে কমর সাইকেলে চড়ল। আনন্দে তার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। এরকম ফ্রেন্ড কি জীবন দিয়েও পাওয়া যাবে?
কমর সাইকেল চালিয়ে গোরস্থানের দিকে আগাতে লাগল। তার চোখে নিজের অজান্তেই পানি জমে উঠেছে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোরস্থানের সামনের রাস্তায় উঠে পড়ল সে। আর মাত্র বিশ সেকেন্ড লাগবে।
পনের।
দশ।
পাঁচ।
... আরে সালেহকে দেখা যাচ্ছে না কেন?
আর সালেহ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে এরকম মানুষের জটলা কি জন্য?
আর ওখানে এত চিল্লাপাল্লাই বা হচ্ছে কি জন্য?
আর ওখানে সবাই মিলে পেটাচ্ছেই বা কাকে?
কমর জীবনের সর্বোচ্চ গতিতে সাইকেল চালিয়ে তিনতলার সামনে পৌছাল। ওখানে একজনের উপর চড়াও হয়েছে অনেকে...
সেই একজনের গায়ে সালেহর পোশাক! তার মানে...
আর ভাবতে পারল না কমর। সাইকেল ফেলে দৌড়ে গিয়ে সালেহর পিঠের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। তার পিঠে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা লাঠির বাড়ি পড়ল।
কে যেন পাশ থেকে বলল, এই তুই কে রে আবার? মার শালাকে।
মার।
৩
আজিমপুর
11:50 pm
খবির সাহেব অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন।
তার দুই মেয়ে। বড়টা ঢাকা মেডিকেলে পড়ে, ছোটটা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। দুই মেয়েই মাশাল্লাহ সুন্দর দেখতে।
বড়টা মেধাবী, কিন্তু ছোটটা একেবারে গোবর। মাথায় কিছু নাই।
খবির সাহেব টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেলেন। তার স্ত্রী আফরোজা বানু বললেন, কি হইসে আপনার?
তিনি বললেন, কিছু হয় নাই।
এইভাবে হাঁটাহাঁটি করতেসেন ক্যান?
কথা কইয়োনা বেশি।
আমারে বলবেন না?
চুপ থাক নাফিজার মা। মাইয়া মাইনষের চুপ থাকা ভালো।
সবাইরে তো বসায়া রাখসেন।
চুপ! একদম চুপ!
স্ত্রী চুপ করে যান। খবির সাহেব আবার পায়চারি করা শুরু করেন।
তার মনটা বড়ই অশান্ত।
তার বড় মেয়ে নাফিজার জন্য তিনি একটা ভালো পাত্র দেখেছিলেন। ছেলে ব্যবসা করে, মালপাত্তি আছে। মেয়েকে সোনাদানা দিয়ে ভরায় রাখতে পারবে।
কিন্তু বিয়ের কথা নাফিজার কানে যেতেই সে বেঁকে বসল।
আব্বা এই বিয়ে আমি করব না।
ক্যান মা?
আমি ডাক্তার ছাড়া বিয়ে করব না।
ক্যান?
তুমি বুঝবা না। অনেক ব্যাপার আছে।
সেইরাতে ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন খবির সাহেব।
নাহ, মেয়ে তো ভুল কিছু বলে নাই।
পরদিন আবার ছেলেদের সাথে কথা বললেন তিনি। ছেলেপক্ষ এবার বলল, তারা বিপুল অঙ্কের টাকা দেবে, তবু এই মেয়ে তাদের চাইই চাই।
টাকার অঙ্ক শুনে মাথা ঘুরে গেল খবির সাহেবের। এত টাকা!
এমনিতেই তাদের টানাটানির সংসার।
কোনভাবে দুই মেয়েকে পড়াচ্ছেন এখনও। ভালো খাবার দাবার দিতে পারেন না। প্রতি ঈদে নতুন জামা কাপড় দিতে পারেন না। আবার ব্যবসায়ও অনেক দেনা হয়ে গেছে, পাওনাদাররা কবে ক্যাঁক করে ধরে বসে কোন ঠিকঠিকানা নেই।
এই টাকাটা পেলে সব সমস্যা মুহূর্তের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।
মুহূর্তের মধ্যেই।
খবির মেয়েকে বললেন, আমি কিছু জানি না। এই ছেলেকেই তুমি বিয়ে করবে।
নাফিজা মুখ গোমড়া করে চলে গেল। খবির সাহেব অনেক কষ্টে বুকের কষ্ট বুকেই লুকিয়ে রাখলেন।
পরে মেয়ের মা তাকে এসে বলল, আপনার মেয়ে তো কাইন্দা বালিশ ভিজাইতেসে।
ক্যান?
আপনি জানেন না? সে আমারে কইসে, আম্মা, আমি একজনরে পছন্দ করি।
পছন্দ করে? গরীবের মাইয়ার আবার কিসের পছন্দ? কারে পছন্দ করে সে?
এক পোলা, তার সাথেই পড়ে। ডাক্তারির ছাত্র।
খবির ভয়ানক দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তার মুখ আস্তে আস্তে হিংস্র হয়ে উঠল। ও তাইলে এই ব্যাপার? তলে তলে এত দূর? মাইয়া আমার পিরিত করে? তাই সে বিয়া করব না?
তোমার মাইয়ারে বইলা দিও, বিয়া হওয়ার আগ পর্যন্ত তার কলেজ যাওয়া বন্ধ। আর আমি যেইখানে ঠিক করসি তার বিয়া সেইখানেই হবে। আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।
খবির সাহেব গুম মেরে বসে থাকেন।
তার স্ত্রী আস্তে আস্তে চলে যান।
ঐ ঘটনার পর থেকে নাফিজার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সে খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দেয়।
বিয়ের দিন এক শুক্রবারে ধার্য করা হয়।
শেষ কথাবার্তা বলার জন্য বিয়ের তিন দিন আগে পাত্রপক্ষের লোকজন তাদের বাসায় আসে।
খাওয়াদাওয়া কথাবার্তা চলছে, এমন সময় হঠাৎ ছোট মেয়ে এসে খবির সাহেবকে বলে, আব্বা, শোনেন। কথা আছে।
খবির উঠে ঘরের বাইরে যান। কি কথা মা?
আপনি কি জানেন আপা আজকে রাতে উনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালায়া যাবে?
কি? কি বললা মা?
ঠিক বলসি। বয়ফ্রেন্ড বাইরে দাঁড়ায়া আসে।
তাই?
আপনি প্রমাণ দেখতে চান?
কি প্রমাণ?
তাইলে আপনি এইখানে একটু হাঁটাহাঁটি করেন, আমি আইতাছি।
তারপর থেকে খবির সাহেব অস্থিরভাবে পায়চারি করছেন। হায় হায়, এ তিনি কি শুনলেন?
কিছুক্ষণ পর ছোট মেয়ে আসে। এইটা দেখেন, বলে মেয়ে তার হাতে একটা মোবাইল ধরিয়ে দেয়।
মেসেজটা পড়েন।
খবির সাহেব মেসেজটা পড়েন। ধীরে ধীরে তার সারা মুখ রক্তিম হয়ে যায়। রাগে কাঁপতে থাকে সমস্ত শরীর।
এইটা কি...?
হ, এইটা আপার মোবাইল। উনার বয়ফ্রেন্ড লিখসে মেসেজটা।
খবির সাহেবের মাথা গরম হয়ে যায়। তিনি ঘরে ছুটে যান। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন বাইরে একটা প্রাইভেট কারের গায়ে ঠেস দিয়ে একটা কমবয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সে মোবাইল টিপছে।
খবির সাহেবের গায়ে আগুন ধরে যায়।
তিনি পাত্রপক্ষের সবাইকে বলেন, আমার মাইয়ারে একটা গুন্ডা ডিস্টার্ব করে। সে এখনও বাইরে রাস্তায় দাঁড়ায়া আছে। চলেন শালারে পিটায়া আসি।
পাত্রপক্ষ হই হই করে ওঠে। লাঠিসোটা যা পায় তাই নিয়ে সবাই চলে আসে সিঁড়িঘরে।
খবির সাহেব মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেন। চুপ চুপ। হারামজাদা ট্যার পাইয়া যাইব।
তারা পা টিপে টিপে নিচে নামেন। খবির সাহেব দেখলেন, ছেলেটা এখনও গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে।
নিশ্চয়ই তার মেয়ের ভাতার! নিশ্চয়ই তার মেয়ের কাছেই মেসেজ পাঠাচ্ছে। হয়তো এই গাড়িতে করেই মেয়েকে নিয়ে যাবে...
আর ভাবতে পারেন না খবির সাহেব। তার চিন্তাশক্তি ততক্ষণে লুপ্ত হয়েছে।
দৌড়ে গিয়ে সোজা ছেলেটার মাথায় হকিস্টিকের বাড়ি বসিয়ে দেন খবির সাহেব। মর শালা, মর - চিৎকার করে ছেলেটাকে পেটাতে থাকেন তিনি।
ছেলেটা গোঙাতে থাকে। তার জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়, রক্ত বেরুতে থাকে গলগল করে। একবার সে মা বলে ডাকার চেষ্টা করে।
কিন্তু তাতে খবির সাহেবের বা তার সঙ্গিদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। আজ তারা অন্ধ, আজ তারা উন্মাদ।
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।