কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! কোন এক প্যারালেল ইউনিভার্সের ঘটনা এটি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসান ভাই নিজের চেয়ারে বসে আছেন। তার পাশেই বসে আছে তার দলের প্রগতিশীল নেত্রী সোহেলী রানু।
সোহেলী একটা আকাম করে ফেলেছে। জায়গায় বেজায়গায় কুজায়গায় ঘুষ এবং জানা অজানা আরও অনেক কিছু দিয়ে নিজের একতলা বাড়ির ফাউন্ডেশনে ত্রিশ তলা একটা বিল্ডিং বানিয়ে ফেলেছে সে।
সবই ঠিক ছিল, শুধু আজ ঘণ্টাখানেক আগে পুরো বিল্ডিং ধ্বসে পড়ে সোহেলীর এত সাধের বাড়িটা ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। কোল্যাটেরাল ড্যামেজ হিসেবে ভিতরের সাত হাজার মানুষ দুম করে মরে গেছে। অবশ্য ওরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিল না। মানুষ তো এমনিতেই মারা যায়। ওরা না হয় একটু আগেই মরল।
কিন্তু ঝামেলা বাঁধিয়ে দিল সাধারণ জনগণ। ফেসবুক আর মিডিয়ার কল্যাণে ঘটনার পাঁচ মিনিটের মাথায় সারা দেশ জেনে গেল কি হয়েছে। ব্যস, জ্বলে উঠল আগুন। আগুনের নাম "জনতার রোশ"।
ধুর, এইসব আগুন তো কতই জ্বলে।
সোহেলী ভাবে, এইসব আগুন জ্বলে আর নেভে। একেকটা ইস্যুর সাথে সাথে আগুনে তেজ ওঠানামা করে। অথচ আমায় দেখ, আমার শরীরের আগুন সবসময় দাউ দাউ করে জ্বলতেই থাকে। আমার আগুনে ছারখার হয়ে যায় পাতিনেতা, আমনেতা, মায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। পুরা আগুন আমি।
হুহ।
হাসান ভাই রানুর অনাবৃত কাঁধে হাত রাখেন। রানু সে হাতের উপর লিপস্টিক মাখা ঠোঁটের আলতো পরশ বুলিয়ে দেয়। হাসান ভাই বুড়ো বয়সেও কেঁপে কেঁপে ওঠেন। এই মেয়েটা তার বুড়ো বয়সের পরম পাওয়া।
তাই তো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে রানুকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে প্রাইভেট জেট পাঠিয়েছিলেন তিনি।
হাসান ভাই বলেন, "রানু, তুমি কয়েকদিনের জন্য আমার বাগানবাড়িতে লুকিয়ে থাক। একদম বের হবার দরকার নেই। বাকিটা আমি দেখছি"।
রানু বলে, "কিন্তু আপনার সাথে আমার সম্পর্ক তো সবাই জানে।
তারা যখন আপনাকে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করবে আপনি কি জবাব দিবেন?"
হাসান ভাই হাসেন। তিনি জানেন রানুর সাথে তার ফষ্টিনষ্টির সিডি সাভারের রাস্তাঘাটে অহরহ পাওয়া যায়।
হাসান ভাই বলেন, "আমি ব্যবস্থা করে ফেলব, তুমি চিন্তা কোর না"।
হাসান ভাইয়ের সেফ হাউজে লুকিয়ে পড়ে রানু। হাসান ভাই দিনটা কাটান নতুন রাষ্ট্রপতি হামিদার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কেক কেটে।
রাতে মিডিয়া তার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হাসান ভাই হাসিমুখে তার সাভার এলাকার মুখপাত্র অ্যালেক্স সং এর দিকে তাকান। সং বলে, “রানুকে আমরা চিনি না। হাসান ভাইয়ের সাথে রানুর কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের সাথে রানুর কোন সম্পৃক্ততা নেই”।
মুখ ফসকে এক তরুণী রিপোর্টার বলে ফেলে, “তাহলে ঐ সিডিগুলো?”
হাসান ভাই হাসতে হাসতে বলেন, “ঐগুলা সব ফটোশপ আর ভিডিও কাটারের কাজ। আমি নিজেও ঐ সিডি দেখেছি। দেখে মনেই হয় নি নকল, হা হা হা”।
অতঃপর একসময় আগুন আবার প্রশমিত হয়। মানুষ যে যার কাজ ভুলে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের জীবনে।
ফেসবুকে গরম গরম স্ট্যাটাসের আকাল পড়ে যায় হঠাৎ করেই। আবারও নীতির প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে যায় শাহবাগ হেফাজত, লীগ জামাত বিম্পি। হাসান ভাই হতাহতদের পরিবারকে একটা করে মুরগি কিনে দেন। রানু ফিরে আসে সগৌরবে। হাসান ভাইয়ের পেইড এজেন্টরা প্রমাণ করে ফেলে, বিল্ডিং ধ্বসা পুরোটাই বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র।
বিরোধীরা বিল্ডিঙের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে ফুঁ দিয়েছে বলেই ধ্বসে পড়েছে ওটা।
আর আবারও, আমজনতা প্রতারিত হয়। এই ইউনিভার্সেও, বাকি প্রত্যেকটা প্যারালেল ইউনিভার্সেও।
(ভুলেও চরিত্রগুলোর সাথে বর্তমান কারো নামের মিল খুঁজতে যাবেন না। আর সাভারের রাস্তায় রাস্তায় পোস্টারে সোহেল রানার হাস্যোজ্জ্বল ছবির সাথেও সিডির মিল খুঁজতে যাবেন না কেউ।
) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।