যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি ১২ তারিখ নিয়ে একটা পোস্ট দিলাম - তারপর ১৩ তারিখে বিশ্রাম দিবসে আরেকটা পোস্ট দিলাম - যদিও জানি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতার মতো অবস্থা খুবই কম - তারপর আশা করতে ক্ষতি কি!
১৪ তারিখ গেলো। সরকারী জোটের সমাবেশ। কথা পরিষ্কার করা হয়েছে - রাজপথের যুদ্ধ রাজপথে হবে - সমঝোতার জন্যে সংসদে যেতে হবে। তারমানে সামনে অন্ধকার - তবে এখানও সূর্যের আভাস দেখা যাচ্ছে।
হতাশ হচ্ছিনা আরেকটা কারনে - এই আন্দোলন আন্দোলন খেলাটা আসলে সেমিফাইনাল - ফাইনাল হলো সংসদ নির্বাচন।
সেমিফাইনালের বিজয়ীরাই সাধারনত ফাইনালে জয়ী হয় - কিন্তু তার জন্যে শুধু দলীয় কর্মীদের খেলাই যথেষ্ঠ নয়। তারজন চাই জনসম্পৃক্ততা। তাই ফাইনালে
বিষয়ে কোন কথা বলার সময় এখনও অনেক বাকী।
তাই এখনও আশা ছাড়ছি না। আন্দোলনের নামে দাদন নিয়ে জনগনের ভাগ্য দূর্নীতিবাজ-কালোবাজারী-সম্পদ লুন্ঠনকারীদের কালো টাকার কাছে বর্গা না দিয়েই আমাদের নেতারা বিষয়টা সমাধান করতে পারেন।
আর একটা ১/১১ থেকে দেশকে বাঁচানোর বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। আর এই সমাধানের জন্যে তাদের ইচ্ছা শক্তিই যথেষ্ঠ।
এখানে ১৪ তারিখের সমাবেশের নেতাদের বক্তব্য থেকে রাজপথের যুদ্ধের বিষয়ে পরিষ্কার ঘোষনা থাকলেও - একটা সমঝোতার বিষয়টা পরিষ্কার একটা আলোর নির্দেশনা দেখছি। সরকারী দলের কিছু কথা যৌক্তিক - যেমন এরা সুষ্ঠ নির্বাচন করার যদিচ্ছা দেখিয়েছে উপনির্বাচন গুলোতে, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা আর নারায়নগঞ্জের পৌর নির্বাচনে। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের জন্যে এতটুকু উদাহরন যথেষ্ঠ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
সমস্যা হলো দুই দলই তাদের কর্মীদের হাইপার স্টেজে রাখতে চায় - তাই রাজপথে অর্থহীন সমাবেশগুলো করে - যা জনসাধারন এবং দেশের সার্বিক ক্ষতি হলেও নিজের কর্মীদের কিছু নতুন জ্বালানী দিয়ে চালু রাখা যায়। তাই এরা রাজপথের ব্যয়বহুল প্রোগ্রামগুলে থেকে সরে আসবে না।
এখন বিরোধী দলের কাছে আছে শেষ অস্ত্রটা - যেইটা তারা অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে প্রয়োগ করে নিজেদের কর্মীদের সামনে বিজয়ী বেশে আসতে পারেন। যেহেতু নিজেদের সদস্যপদ রক্ষা জন্যে বিএনপি/জামায়াত খুব শিঘ্রই সংসদে যাবে। তার তা জন্যে নানান ধরনের গাল ভরা বুলি লজ্জাহীনের আওড়াবেই।
সেই বেহুদা কথাগুলো না বলে তারা তাদের পদ রক্ষার সংসদ গমনকে কাজে লাগাতে পারে। সংসদে যাবার আগে এই জন্যে কিছু হোম ওয়ার্ক করতে হবে।
১)বিএনপি নেত্রী বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের সাথে "অন্তবর্তীকালীন সরকার"র রূপরেখা নিয়ে বৈঠক করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে গৃহপালিত সংগঠনগুলো - যেমন ড্যাব , এব, জাতীয়তাবাদী নানান সমিতি ইত্যাদি সংগঠনগুলো মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে তা বৃহত্তর সংগঠনের সাথে করা যেতে পারে।
২) সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন যখন এই দাবীর পক্ষে - তাই উনাকে দায়িত্ব দিয়ে বা ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে দলীয় এবং নির্দলীয় আইজীবিদের সমন্বয়ে একটা সর্বদলীয় কমিটি করে তাদের একটা খসড়া বিল তৈরীর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
কারন সবশেষে যে বিলই হোক - তা পাশ হবে সংসদেই।
৩) সমাজের সন্মানিত ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রন জানিয়ে তাদের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
৪) অবশেষ একটা সংবাদ সন্মেলন করে একটা পরিপূর্ন রূপরেখা জনগনের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। যাতে সাধারন মানুষও জানতে পারে বিএনপি/জামায়াত কি ধরনের সরকার চায়।
৫) এই সকল আলোচনা এবং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংসদে গিয়ে একটা বেসরকারী বিল হিসাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
যেহেতু বিষয়টা প্রচুর প্রচার পাবে এবং যেহেতু জনগন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে একমত - সুতরাং সরকারের পক্ষে হয়তো কিছু সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়ে বিলটি গ্রহন না করার মতো যথেষ্ঠ যুক্তি থাকবে না।
একটা কথা বলা দরকার যে - সরকারকে বিলটি মেনে নেওয়ার জন্যে সুযোগ রাখতে হবে - অর্থাৎ "ঘাড়ে ধরে আদায় করে নিচ্ছি" ধরনের মনোভাব যেন বিলের আলোচনায় না থাকে। কারন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুল ইস্যুর চাইতে ইগোই বেশী সক্রিয়ভাবে কাজ করে - সর্বোচ্চ নেতা থেকে রাস্তার কর্মীদের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। তাই পারষ্পারিক সন্মান রক্ষার মতো একটা বিল আনার দরকার।
আর যদি সরকার বিরোধী দলের বিলকে অবজ্ঞা করে - তবে ১৯৯৬ সালের ইতিহাস তো খুব একটা দুরের না।
জনগনই বিএনপি সফল করবে। তারজন্যে শিবির/জঙ্গীদের বোমাবাজি আর গাড়ী পোড়ানোর দরকার হবে না।
একটা কথা পরিষ্কার যে - রাজপথে দাবী করে একটা বিল পাশ করলে হয়তো সেই বিলে আগে মতো ফাঁকফোঁকর থেকে যাবে যার ভিতর দিয়ে মওদুদের মতো লোকজন বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করবেন অথবা ইয়াজউদ্দিনের মতো মেরুদন্ডহীনের উপর বোঁঝা চাপিয়ে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে। তাই সমঝোতার জন্যে সংসদে প্রচুর আলোচনা দরকার - যেখানে প্রজ্ঞা আর মেধা প্রয়োগ করে একটা ফুলপ্রুফ সিসটেম তৈরী কর যায়।
(বিনামুল্যে জ্ঞানদান পর্ব এখানেই শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।