আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেখা ভালোমানুষেরাঃ অবলা নারী পর্ব-১

আমিও বাধ ভাংতে চাই... (এটি একটি ব্যাক্তিগত কাহিনীমূলক পোস্ট। যারা এসেও পড়েছেন, এ ধরণের লেখা পছন্দ না হলে চলে যেতে পারেন। কিচ্ছু মনে করব না। আমি হিট আকাংক্ষী নই। ) মেয়েরা এবং পরবর্তী জীবনে মহিলারা আবেগ এবং রিপুতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন- এই ধারণাটা আমাদের সমাজে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।

যে মানুষটাকে জন্য আমার এরকম কোন ধারণা তৈরীই হতে পারেনি তিনি আমার দাদী। আমরা ডাকতাম দিদু! আগে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরে নতুন ডিসি এসেছেন। নতুন ডিসির কাজকর্মে সবাই খুব খুশী। জেলা পর্যায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তখন সরকারী পর্যায়ে শুরু মাত্র।

ডিসি শহরের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে এই ব্যপারে জানাতে একটা সমাবেশের আয়োজন করলেন। অতিথি হিসেবে দিদুকেও দাওয়াত করা হোল, একটা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও দিতে হবে!! তিনি আন্তরিকভাবেই নিষেধ করলেন এই বলে যে, বাবারা আমার কথা তো তোমাদের পছন্দ হবে না। তবু ডিসি আবার অনুরোধ করে পাঠালেন। কি আর করা? অনুষ্ঠানের দিন। সবাই ক্যাম্পেইনের পক্ষে রং-বেরঙ্গের মত দিচ্ছেন।

আসলো দিদুর পালা। উনার বক্তৃতা শুনেনঃ ‘আমাদের ডিসি সাহেব আসার পরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার অনেক উন্নতি হয়েছে। শহর আগের থেকে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ হয়েছে। সব ক্ষেত্রে আমরা পরিবর্তনের আশ্বাস পেয়েছি। আপনারা কি বলেন? (শ্রোতারা হ্যা বোধক মাথা নাড়লেন) আপনারা কি জানেন, এই ডিসি সাহেব তাঁর মায়ের এগারোতম সন্তান? (এই পর্যন্ত আসার পর বুদ্ধিমান ডিসি সাহেব মাথা নিচু করে ফেললেন) আপনারাই বলেন, উনার মা যদি দুইটা সন্তানের পর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে আমরা আজকে এই মানুষটাকে পেতাম? (শ্রোতাদের সমবেত উত্তরঃ নাআআ) সুতরাং মিয়ারা, আল্লাহ যা করেন সেটাই ভালো।

তাঁর কাজে খালি খালি হাত দিও না। আমার কথা শেষ!’ এই আমার দিদু! জেলাশহর ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে এখনো আমরা ট্রেন থেকে নেমে শুধু আমাদের বাড়ীর নাম বলতে হয় যার নাম দিদুর নামে, সরাসরি রিকশাওয়ালা বাড়ী নিয়ে যায়। কেন? একটু ভূমিকা দিয়ে নিই। বুঝতে সুবিধা হবে। দিদু তাঁর জমিদার পিতার একমাত্র মেয়ে।

একমাত্র ছেলে একটু চুপচাপ ধরণের মানুষ। অতএব, কোন গ্রামে সালিশে নিজে যেতে না পারলে জমিদার মেয়েকেই পাঠিয়ে দিতেন, দুই পক্ষকে খুশী করেই বাড়ী ফিরতেন মেয়ে… আমার দিদু। বিয়েও হয়েছিলো এমন একজন উদার মানুষের সাথে যিনি স্ত্রীর এই যোগ্যতাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন, বাধা দেননি কোনদিন। তাঁর এই বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার সম্মানও রেখেছিলেন স্ত্রী। পেশায় দাদা ছিলেন কাস্টম অফিসার, সর্বশেষ পোস্টিং দর্শনা।

ছয় ছেলে আর দুই মেয়ের সংসার নিয়ে দাদার সাথে একবার এখানে, একবার ওখানে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো এজন্য দিদুর বাবা দিদুর নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে এই বাড়িটা কিনে দেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সৎ চাকুরে দাদার এই সামর্থ্য হয়নি যে নিজের পয়সায় আর কোন সম্পত্তি করবেন। দিদু ছেলেমেয়ে নিয়ে এই বাড়ীতেই থাকতেন। বাইরের উঠানে একটা ঘর তুলে ভাড়া দিতেন। কারণ দাদার বেতনে সবাইকে নিয়ে চলা অসম্ভব ছিলো।

ভেঙ্গে পড়া তো দূরের কথা, মচকাতেও যেন জানতেন না এই মহিলা! দিদুর কাছ থেকে হোমিও ওষুধ আর কুকুর বা সাপ কামড়ানোর পর ‘থালা’ লাগাতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো বাড়িটাতে। প্র্যাকটিস করতে করতে এতোই দক্ষ হয়ে গিয়েছিলেন, রাস্তায়ই অনেক সময় ওষুধ বাতলে দিতেন, বই দেখতে হোত না। ( দিদুর দুইটা ওষুধের বাক্স ছিলো। একটা বড়, এটা বাড়ীতে থাকতো। আর একটা ছিলো পোর্টেবল।

বড়টা এখন আমাদের বাসায়, আম্মু বার্নিশ করে নতুন বানিয়ে ফেলেছেন। ছবি দিলাম। ) আর সারা বছর লেগে থাকতো সালিশপ্রার্থী তিতাস পাড়ের মানুষ। অনেক সময় বয়সে অথবা সম্পর্কে অনেক বড় মানুষও আসতেন সুপরামর্শের জন্য। কেউ কোনদিন বেজার হয়ে ফিরে যায়নি পাইকপাড়ার ‘মাসুম মঞ্জিল’ থেকে।

পরের পর্বে চেষ্টা করবো কিছু মজার ঘটনা দিতে। আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.