আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম ভুটান (Land of Peaceful Dragon) {পর্ব - ২ }

জীবন নিয়ে ভাবি, কিন্তু কক্ষনও সিরিয়াস না। প্রথম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে দেখুন হ্যালো, আব্বু ভালো আছেন? আমি নিরাপদেই ভুটান এসে পৌঁছেছি। আমাকে এই নাম্বারে ফোন দিলেই পাবেন। আব্বু আমাকে নিয়ে একটু বেশীই চিন্তা করেন। তাই প্রতিমুহূর্তে তাকে আপডেট জানাতে হয়।

ভুটান এর বেশ কয়েকটি ভালো মোবাইল কোম্পানির মধ্যে B.Tel অন্যতম। ভুটানে নেমেই প্রথম সুমন ভাই একটা B.Tel এর সীম কিনলেন। সেই সীম দিয়েই আমরা সবাই দেশে যোগাযোগ করলাম। ৫ম রাজা যিগমে খিসের ভুটান দেশটি এমনিতেই খুব শান্ত এবং শান্তিপ্রিয় দেশ। এখনো সেখানে রাজার শাসন চলে।

ওদের প্রতিটি এলাকা একজন মন্ত্রী বা গভর্নর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেহেতু বেশির ভাগ বাড়ি গুলো পাহাড়ের উপরে তাই প্রতিটি বাড়িতেই খাবার মজুদ থাকে। ভুটান এর বেশির ভাগ খাবারে পাওয়া যায় শুঁটকি টাইপের গন্ধ। তবে গন্ধ যাই হোক খাবার গুলো খুব স্বাস্থ্যসম্মত। আর একটা জিনিস এর ব্যবহার খুব বেশী হয় খাবারে তা হোলো ভুটানি মরিচ।

ভুটানের মানুষ প্রায় সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এরা খুব পরিশ্রমী। এদের দেশপ্রেম অত্যন্ত লক্ষণীয়। কোন প্রকার দুর্নীতি নেই। বিলাসিতা খুব বেশী করে না।

প্রায় সবাই তাদের নিয়মিত কাজ, চাকুরি, বা অন্যান্য অবস্থায়ও তাদের জাতীয় পোশাক পরিধান করে। ছেলেদের এই পোশাক এর নাম “ঘো” আর মেয়েদের পোশাক এর নাম “কিরা তেগ”। চমৎকার ডিজাইনের "কিরা" পরে ববি এই পোশাকটির দুটি অংশ থাকে। উপরে ঢোলা একধরনের জ্যাকেট, নিচে লুঙ্গি বা স্কারট এর মতো অংশ। পুরুষ দের এই দুই অংশ মিলে হয় “ঘো” আর মেয়েদের পোশাক এর উপরের অংশের নাম “কিরা” যা আলাদা কিনতে পাওয়া যায়, এবং নিচের টিকে বলে “তেগ” যেটাও আলাদা কিনতে পাওয়া যায়।

পোশাক গুলো পুরো সেট প্রায় ৩০০০-৫০০০ রুপি দাম হয়। ভুটানের মুদ্রার নাম “ভুটান টাকা”। তবে ভারতীয় রুপি ও চলে। কারন রুপি এবং ভুটান টাকার মুদ্রা মান একই। রাজ পরিবার এর বাসস্থান ভুটানের রাজ পরিবারের প্রায় সবাই থিম্পুতেই থাকে।

এছাড়াও মন্ত্রি পরিষদ ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ সবাই একটা নির্দিষ্ট এলাকায় থাকে। পাহাড়ের উপর থেকে এলাকাটিকে শিল্পীর হাতে আকা ছবির মতো মনে হয়। ভুটানের ঘরবাড়ি গুলো একটি বিশেষ বিল্ডিং কোড বা ডিজাইন মেনে তৈরি হয়। আমি ভুটানের কোথাও বহুতল ভবন দেখতে পাইনি। এদের প্রতিটি ভবনে আছে রাজকীয় ছাপ।

ভিসা অফিস ( থিম্পু ) জেনারেল পোস্ট অফিস ( জি.পি.ও ) গভর্নর হাউসে আমরা থিম্পুর অনুষ্ঠান শেষে থিম্পুর গভর্নর এর পক্ষ থেকে আমাদের পুরো টিমকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলো। রাষ্ট্রীয় ভবনে দাওয়াত খাওয়ার মজাই অন্যরকম। সেখানে খাওয়ার স্টাইল ছিল বুফে। বুফের বেশীরভাগ আইটেম ছিল ভুটানি সবজি। ভাত ছিল, মাছ ছিল, কিন্তু খাওয়ার মতো রুচি পেলাম না।

মাছ ছিল অর্ধসিদ্ধ, কোন মশলা ছাড়া এবং আস্ত। সবাই চামচ দিয়ে মাছের গা থেকে খুবলে নেয়ার মতো নিচ্ছিল। কিছু চাইনিজ আইটেম ছিল, ওগুলো দিয়ে খাওয়া সারলাম। তবে সবজিটা চমৎকার রান্না করে ওরা। খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের একটা অভ্যর্থনার আয়োজন ছিল।

(বা থেকে) সুমি, ববি, গভর্নর স্যার, লিমন, বাঁধন, জুয়েল, বাংলাদেশী অ্যাম্বাসেডর গভর্নর স্যার এর হাত থেকে উপহার গ্রহন করছি আমি ভুটানের একটা সাংস্কৃতিক দল ও আমাদের সাথে দাওয়াতে ছিল। ওদের সাথে পরিচিত হলাম। সবচেয়ে যে বিষয়টি আমাকে বেশী আশ্চর্যান্বিত করেছে তা হোল ওদের ব্যবহার। সবাই খেতে বসেছিল। আমি, ববি, লুৎফর স্যার, বাংলাদেশী অ্যাম্বাসেডর, সুমি আপা, এবং সুমন ভাই খেতে বসে ছিলাম থিম্পুর গভর্নর স্যার এর সাথে।

সবাই বসার পর চেয়ার খালি ছিলো একটা তাই ববি আমাকে বসতে বলে আফসারাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে রইল। অমনি গভর্নর স্যার নিজে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে ববির জন্য চেয়ার নিয়ে আসলেন। আফসারা ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই ববি ও আমার খাওয়ার মাঝে একটু অসুবিধা হচ্ছিল, গভর্নর স্যার এটা দেখে আমাকে ইশারায় বললেন, মেয়েকে আমার কাছে দাও, তোমরা খাওয়া শেষ কর সে পর্যন্ত আমি কোলে রাখি। আমি তার এ ব্যাবহারে গুলোতে একদম অভিভূত হয়ে গেছিলাম। গৌতম বুদ্ধের মূর্তি থিম্পু তে ওই দিন সকালে আমরা থিম্পুর কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছিলাম।

তার মধ্যে অন্যতম ছিল লাভারস পয়েন্ট এবং বুদ্ধার মূর্তি। মূর্তিটি পুরোটা বানানো ব্রোঞ্জ দিয়ে এবং মুখটা গোল্ড দিয়ে বানানো। আমরা যখন গিয়েছি তখনো মূর্তিটি বানানোর কাজ সম্পূর্ণ হয় নি। তাই আমরা সামনে থেকে দেখতে পারিনি। তবে গাড়িতে যখন আমরা পুনাখা রওয়ানা দেই তখন দূর পাহাড়ে দেখেছিলাম অনেক দূর থেকেও সূর্যের আলোতে উদ্ভাসিত “গৌতম বুদ্ধ” লাভারস পয়েন্ট বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত ( সর্ব ডানে ) এর কাছ থেকে উপহার নিচ্ছে ববি, সুমি এবং লুৎফর স্যার ভুটানের আকাশে বাংলাদেশের পতাকা পরদিন বাংলাদেশী এমব্যাসি থেকে দাওয়াত ছিল।

আমাদের এমব্যাসিটি খুব সাধারন একটা বাড়ির মতো। কিন্তু একটা অসাধারন জিনিষ আমার চোখে পরেছিল তা হচ্ছে ভুটানের আকাশে বাংলাদেশের পতাকা। এমব্যাসির পক্ষ থেকেও আমাদের জন্য উপহার সামগ্রী ছিল। এমব্যাসি ছেড়ে যখন বের হয়ে আসি, তখন মনে হচ্ছিল আর একবার বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তো আমাদের থিম্পু মিশন শেষ করে রওয়ানা হলাম পুনাখার উদ্দেশে।

পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে 4WD গাড়ি দিয়ে যখন উঠছিলাম তখন কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছিলো। থিম্পু তে আসার সময় রাতে এসেছিলাম তাই অত ভালো বুঝিনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম আমরা কি পরিমান পাহাড়ে উঠেছিলাম। ভয় ও রোমাঞ্চ মিস্রিত অদ্ভুত একটা অনুভূতি।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.