প্রদীপ হালদার,জাতিস্মর। আমরা প্রত্যেকে এক একটা আওয়াজ ।
আমরা প্রত্যেকে এক একটা আওয়াজ । মুখ থেকে আওয়াজ বের হয় । এই আওয়াজ লিপিবদ্ধ হলে তাকে বই বলি ।
মানুষ বিভিন্ন বই-এর আওয়াজ নিয়ে শিক্ষিত হয় । একসময় আওয়াজ লিপিবদ্ধ হতো না । মনে রাখতে হতো । সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়াজ ।
বাবা মা আমার নাম রেখেছে প্রদীপ ।
এটা আমার গায়ে লেখা নেই । কেউ যখন আওয়াজ দেয় "প্রদীপ" , আমি ভাবি আমাকে ডাকছে , আমি উত্তর দেবার জন্য প্রস্তুত হই , আর তখনই দেখতে পাই অন্য একজন উত্তর দিচ্ছে । তখন আমি বুঝতে পারি তার নামও প্রদীপ । যদি ভাবি আমি প্রদীপ নই তাহলে কেউ আমাকে ঐ নামে আওয়াজ দিলে উত্তর দেবো না । মাথার মধ্যে এত আওয়াজ থাকে কি ।
মানুষ যখন আওয়াজ দিয়ে বলে আমি মানুষ তখনই আমি মানুষ ।
আওয়াজ আমাদেরকে তৈরী করে । যার মাথায় যেমন আওয়াজ ঢুকবে তার মাথা থেকে তেমন আওয়াজ বের হবে । তাই আমরা বুঝতে পারি না কার আওয়াজ ঠিক । ভালো আওয়াজ আমাদেরকে আনন্দ দেয় ।
আর যেটাকে খারাপ আওয়াজ বলে জেনেছি সেই আওয়াজ আমাদেরকে দুঃখ দেয় । আমরা সবাই মারা যাবো । থেকে যাবে আওয়াজ ।
পৃথিবীতে একই জিনিস দু রকমভাবে থাকে । আছে অথবা নাই ।
মাঝামাঝি কিছু নেই । আমার হাতে টাকা আছে । খরচ করলাম । এবার বলতে পারি আমার হাতে টাকা নাই । আমি একজনকে ভালোবাসলাম ।
তাহলে বলতে পারি ভালোবাসা আছে । আবার কিছুদিন পরে জানলাম সে আমায় ভালোবাসে না । আমি দুঃখ পেলাম । আমাকে ছেড়ে সে চলে গেলো । তাহলে এবার বলতে পারি ভালোবাসা নেই ।
আমার চোখে জল আছে আবার জল নেই । দুঃখ হলে চোখের জল দেখতে পাওয়া যায় কিংবা খুব আনন্দে চোখে জল আসে । খিধে আছে আবার খাবার খেলে খিধে নেই । নদীতে ঢেউ আছে আবার ঢেউ নেই । ঝড় আছে আবার ঝড় নেই ।
শীত আছে আবার শীত নেই । গরম আছে আবার গরম নেই । মাঝামাঝি বলে কিছু নেই । রাত আছে আবার রাত নেই । ভালো আছে আবার ভালো নেই ।
আমরা সবাই এই রকম আওয়াজের মধ্যে আছি । আর এই আওয়াজ সঠিক ।
মানুষ নিজেকে যা ভাববে সে তাই হবে এবং সেই রকম আওয়াজ বের হবে । তাহলে প্রশ্ন ঈশ্বর আছে ? উত্তর হবে ঈশ্বর আছে আবার ঈশ্বর নেই । প্রশ্ন ভূত আছে ? উত্তর হবে ভূত আছে আবার ভূত নেই ।
দুটোই ঠিক । আমার চোখ আছে তাই বলবো চোখ আছে । আবার অনেকের চোখ নেই তাই বলবো চোখ নেই । আমি ঘরে আছি । তাই বলবো আমি ঘরে আছি ।
এখন আমি ঘরে নেই । তাই বলবো আমি ঘরে নেই । কারোর অস্তিত্ব কারোর দেখার ওপর নির্ভর করে না । পৃথিবীতে যা কিছু দেখছি তার অস্তিত্ব আমার দেখা বা না দেখার ওপর নির্ভর করে না । কেউ বলে ভূত আছে , তারা ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে ।
আবার কেউ বলে ভূত নেই । তারা ভূতকে অবিশ্বাস করে না , তারা ভূতের অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাস করে। আসলে নানান জনের নানান আওয়াজ । আওয়াজের জালে আমরা আটকা পড়ে আছি ।
আওয়াজই আমাদেরকে পরিচালনা করে ।
পথে যখন বের হই তখন গাড়ীর হর্ণের আওয়াজ আমাকে পথ চলতে সাহায্য করে । মানুষের আওয়াজ শুনে শুনে আমরা চলি । তারপরতো ঠিক করি কার আওয়াজ ঠিক । তাহলে "ঈশ্বর" একটা আওয়াজ । "ভূত" একটা আওয়াজ ।
আওয়াজ আছে আবার আওয়াজ নেই । সবই আছে আবার কিছুই নেই । কিন্তু কোন কিছুকে ধ্বংস করা যায় না । ঘর ভেঙে ফেলতে পারি কিন্তু ভরকে ধ্বংস করা যায় না । শক্তিকে ধ্বংস করা যায় না ।
আওয়াজকে ধ্বংস করা যায় না । আমি জীবিত তাই আওয়াজ দিতে পারি । আমি মৃত । আমি আর আওয়াজ দিতে পারছি না । কিন্তু আমি বলছি আমার ভেতরকার আওয়াজের মৃত্যু নেই ।
আমার মৃত্যুর পর আমার আওয়াজ বের হয়ে ভূতের আকারে থেকে আওয়াজ দেয় । সত্য । আওয়াজের মৃত্যু নেই । এক শরীর থেকে আর এক শরীরে ঢোকে । তাই কোন জাতিস্মর যখন কোন মানুষের কথা বলে আসলে সেটি অন্য মানুষের আওয়াজ ।
আমাদের নিজেদের জীবনে গত সাতদিনের ঘটনা বলতে পারি না , সেখানে গত জীবনের কথা বলা অসম্ভব । আসলে ভূত ঢুকে আছে , সেই কথা বলছে , আর তাকেই আমরা জাতিস্মর বলছি । ভূত আছে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।