আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপকুলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র কেন?

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রচেষ্টায় সরকার সুন্দরবনের সন্নিকটে বাগেরহাটে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র ¯হাপন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদল রামপাল এলাকায় প্রাক সম্ভাব্য যাচাই সম্পন্ন করেছে। সুন্দরবন থেকে মাত্র ৯ কিমি দুরত্বে বিদ্যুতকেন্দ্রটির অব¯হান। আর এ লক্ষ্যে রামপালে প্রায় ২০০০একর জমি একোয়ার করা হচ্ছে। সুন্দরবন পৃথিবীর একমাত্র দীর্ঘতম ম্যানগ্রোভ বন।

যেখানে ২৪০০০ প্রজাতির প্রাণীকুলের বসবাস রয়েছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত দিক থেকে সুন্দরবনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সুন্দরবনের বাঁচা মরার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের দখিনাঞ্চলের ১৭ টি জেলার বাঁচা মরা। সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলা হলে তা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাড়াবে। কারণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে যে পরিমানে কোল ডাস্ট বা কয়লা ধুলোর সৃষ্টি হবে তা সুন্দরবনের বাতাসে মিশে জীব বৈচিত্র্যে উপর মারাতœক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

কার্বন নিসরনের পরিমান বেড়ে গেলে বাতাসে সীসার পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে কম সহনশীল প্রাণী টিকিয়ে থাকার প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়বে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ মিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন। আর এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে র্নিগত পানিতে প্রচুর পরিমানে সালফার, সীসা, আর্সেনিক ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত থাকে যা পরিবেশকে ওষ্ঠাগত করে তুলে। কয়লাপুড়ে বিদ্যুত উদপাদনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটে।

প্রচুর পরিমানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদপন্ন হওয়ায় পরিবেশকে ভারাক্রান্ত করে তুলে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে আসে ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রের বিশাল এলাকা ধীরে ধীরে মরুকরনে পরিনত হয়। এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উদপাদনে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮০০ গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুতের যোগান দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

যে জাতি যতবেশি বিদ্যুত ব্যবহার করে সেজাতি ততবেশি উন্নত। বিদ্যুতের কারনে ইতোমধ্যে অনেক শিল্পকারখানা উদপাদনে যেতে পারছেনা। নতুন করে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন। যেকোন বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে সরকারকে বিদ্যুতের ব্যব¯হা করতে হবে।

কিন্তু তারপরও ভাবতে হবে কোথায় বিদ্যুত কেন্দ্র ¯হাপন সহজ ও কম ঝুকিপূর্ণ। সুন্দর বন ও তার আশপাশ এলাকা কোনক্রমেই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানে উপযোগী নয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহে নাগরিক জীবনে স¦াচ্ছন্দ্য রয়েছে কিন্তু সেসব দেশে সুন্দরবন নেই। ঘেওয়া কেওড়া কাঠের সাড়ি প্রকৃতিকে অভিনšিদত করেনা। বিরল প্রজাতির শতাধিক গাছ সুন্দরবনকে মহিমান্ডিত করেছে।

ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজের এ বনটিকে কোন ক্রমেই ধ্বংস হতে দেয়া যাবেনা। কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যকে ধূলিস্মাত করে দিবে। তাই কোন যুক্তিতে কোন অযুহাতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যুগোপযুগী হবেনা। ২. বাংলাদেশ সরকার যেহেতু নিজ দেশের কয়লা খনি উন্নয়নে মনোযোগী নয়। তাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে কাচামাল হিসেবে যোগান দেয়া কয়লা ভারত থেকে আমদানী করতে হবে।

ভারতের কয়লা নি¤œমানের। আর নি¤œমানের কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত উদপাদন করা হলে কোল ডাস্টের পরিমান বেড়ে যাবে। সীসা ও সালফারযুক্ত এসব ডাস্ট বাতাসে মিশে দুই তিন বছরের মধ্যেই প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করে তুলবে। শুধু তাইনা এসব ক্ষতিকর পদার্থ ক্রমাগতভাবে বায়ু মন্ডলের ওজোনস্তরকে ক্ষয় করতে থাকে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌছে পৃথিবীকে উত্ত্বপ্ত করবে তুলবে।

৩. ৫০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর ১২৫০০০ টন কোল ডাস্ট ও ১৯৩০০০ স্লাড বা বর্জ্য উদপন্ন হয়। সাধারনত এইসব বর্জ্য খালি জায়গায় বা খাল বিল, নদী নালায় ফেলা হয় । ফলশ্রুতিতে বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি এতোই দুষিত হয়ে পড়বে যা ভূগর্ভ¯হ পানির স্তরকে পর্যন্ত কলুষিত করে তুলবে। যা মানবজীবনে ভয়াবহ দুর্যোগ ডেকে আনবে। কোন কারনে এসব দুষিত বিষাক্ত পানি প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করলে তা কশেরুকার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়াবে।

কোল ডাস্ট বা কেন্দ্র থেকে উদপাদিত বর্জ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসং¯হানকে সাময়িক বা সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়। ৪. কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র কোলিং সিস্টেমে প্রচুর পরিমানে পানি ব্যবহার করতে হয়। ১৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উদপাদনে প্রায় ২.২ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করতে হবে। এবং ব্যবহৃত পানিকে পুনরায় নদীতে ছেড়ে দিতে হবে আর তখন ব্যবহৃত পানির গড় তাপমাত্রা হবে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এতো বিশাল পরিমানে গরম পানি যখন নদীতে ছাড়া হবে তখন নদীর দুষনরোধ করার কোন উপায়ই থাকবেনা।

জলজ প্রাণী তাপমাত্রার কারনে মরে ভেসে উঠবে। শৈবাল ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যা পানির নিচে বেচে থাকে, এসব উদ্ভিদ গরম পানির কারনে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রের আশপাশ এলাকার বায়ো-ডাইভার্সিটি চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। ৫. সাধারনত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে ৩০ থেকে ৩৫% কয়লাকে পুড়িয়ে বিদ্যুত উদপন্ন করা হয়। আর কয়লা থেকে উদপন্ন তাপ কে প্রকৃতিতে অপ্রকৃতি¯হ অব¯হায় ছেড়ে দেয়া হয়।

অথবা কোলিং বা গরম অব¯হায় পানির মধ্যে শোষন করা হয়। যা উভয় অব¯হায়ই প্রকৃতিকে বিরুপ করে তোলে। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সবচেয়ে বাজে দিক বর্জ্য ব্যব¯হাপনা। পৃথিবীজুড়েই এসব বিদ্যুত কেন্দ্র্গুলো বর্জ্য ব্যব¯হাপনা ঠিকমতো করতে না পেরে পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছে। বাংলাদেশের মতো সুন্দরবনের মতো একটি জায়গায় এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কেন প্রয়োজন তাও বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মনুষ্য বসতি নেই। একেবারেই বিরান ভূমি। অপেক্ষাকৃত কম ঝুকিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র ¯হাপনে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেয়া অত্যাবশ্যক। হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলাম লেখক। ংধিঢ়হধধ০০৭@ুধযড়ড়.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।