আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশুরাই হতে পারে সামাজিক বিপণনের দূত .............ফিলিপ কটলার

আমারে দিবো না ভুলিতে বিশ্বব্যাপী বিপণন-গুরু হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ফিলিপ কটলার। তঁার নতুন মিশন সামাজিক বিপণন। এটি কীভাবে সমাজকে বদলে দিতে পারে, সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে পারে, তা-ই শুনিয়ে গেলেন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব বিপণন সম্মেলনে (ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট)। ১ মার্চ গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। আমি বিশ্ব বিপণন সম্মেলন ও সামাজিক বিপণন নিয়ে কিছু কথা বলতে আপনাদের সামনে এসেছি।

বর্তমানে গণমাধ্যম সমাজের খুবই প্রভাবশালী একটি অনুষঙ্গ। নানা বিষয় মানুষকে জানানোর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সমাজকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে বিপণন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার বিপণনব্যবস্থায় বিদ্যমান পণ্য সম্পর্কে জানাতে হয়। কোনো একটি ধারণা তৈরি ও এর প্রসার ঘটাতে হয়।

মানুষকে ওই ধারণার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হয়। মূলত পণ্যের সঙ্গে ভোক্তাদের সংযোগ তৈরি করাই বিপণনের মূল লক্ষ্য। এখনকার বিপণনব্যবস্থায় যে জিনিস উপেক্ষিত তা হলো, কীভাবে আরও উন্নত জীবনযাপন করা যাবে, কীভাবে জীবনযাপনে সন্তুষ্টি আনা যাবে∏সেটি বিপণনে থাকছে না। এ জন্যই প্রয়োজন সামাজিক বিপণন। সামাজিক বিপণন হচ্ছে একটা নতুন বিপণনব্যবস্থা, যেখানে সামাজিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এটি এমন একটি কেৌশল, যা মানুষ ও সমাজের ভালোর জন্য ব্যবহূত হবে। সামাজিক বিপণন অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সমস্যা সমাধানের কার্যকর পন্থা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পরিবার পরিকল্পনার কথা। বাংলাদেশে অনেক পরিবারই জন্মনিয়ন্ত্রণ করে না, বেশি সন্তান নেয়। কীভাবে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানো যায়, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।

নানা কর্মকাণ্ড ও প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো যায়। এটি সামাজিক বিপণন। তামাক ও মদের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে, জুয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা। দরিদ্র মানুষের জন্য ধূমপান শুধু অর্থের অপচয়ই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। অনেকেই মদে আসক্ত হয়ে পড়ে।

কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না। এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো উচিত। বিপণনের মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব গড়তে আমরা একটি মডেলের কথা বলছি, যার নাম দেওয়া হয়েছে ইনকিউবেটর। এ মডেলের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করার বিষয় আলোচনা হচ্ছে। আটটি ইনকিউবেটর এসব বিষয় নিয়ে কয়েকটি দেশে কাজ করবে।

এখন ভাবা হচ্ছে, বিপণন কর্মকর্তারা কীভাবে শিক্ষাকে উন্নত করতে পারেন। অসুখ হলে অনেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান∏এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কাজ নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিপণন ভূমিকা রাখতে পারে। বিপণন কীভাবে শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে? একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

মুঠোফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মটোরোলা সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে প্রকেৌশল শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ বিনিয়োগ করেছে। ভালো প্রকেৌশলী তৈরির তাগিদ থেকেই তারা এ কাজ করেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন সমাজের জন্য একটি বড় কাজ করল, তেমনি ভবিষ্যতে নিজের প্রতিষ্ঠান চালাতে দক্ষ ও যোগ্য প্রকেৌশলী পাবে। একইভাবে বেভারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে পানির মান বাড়াতে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে পানির বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে পারে।

মোট কথা, বিপণন শুধু নতুন নতুন ধারণাই তৈরি করবে না, এগুলো কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পঁেৌছানো সম্ভব, সে বিষয়েও কাজ করবে। সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিবারের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিশুরা হতে পারে বড় প্রভাবক। তারা সামাজিক বিপণনের সবচেয়ে বড় দূত। কারণ, শিশুরা তাদের মা-বাবার ওপর ভালো প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

তাই তাদের উদ্দেশ করে বিভিন্ন বার্তা দেওয়া হলে তা দিয়ে তাদের মা-বাবার খারাপ আচরণ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারবে। সরকার কীভাবে কার্যকরভাবে সামাজিক বিপণন করতে পারে∏এটা একটা ভালো প্রশ্ন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই তিনটি প্রধান খাতে উন্নয়নকাজ হয়। সরকারি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ও এনজিও। এ ক্ষেত্রে সরকারি খাতের বিপণন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, নাগরিকদের সেবা করার জন্যই সরকার থাকে। রাজনীতিবিদেরা হচ্ছেন জনগণের সেবক। তাই সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি। এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকার তার জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

তারা জনগণকে সাহায্য করতে চায়। বাংলাদেশ একটি দ্রুত অগ্রসরমান দেশ, ধীর প্রবৃদ্ধির নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান সামাজিক বিপণন করছে কি না, সেটা জানতে হলে প্রথমে সিএসআর ও সামাজিক বিপণনের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে হবে। আমরা চাই, সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই মুনাফা করুক। কিন্তু এর পাশাপাশি মুনাফার একটি অংশ সাধারণ মানুষের উন্নয়নেও ব্যয় করা প্রয়োজন।

এটিই সিএসআর। আর কোনো প্রতিষ্ঠান যখন সুনির্দষ্টি লক্ষ্য নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে, সেটা সামাজিক বিপণন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই সুনির্দষ্টি একটি সামাজিক বিষয়কে ফোকাস করে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সেগুলোই স্মার্ট প্রতিষ্ঠান, যেগুলো কোনো একটি সুনির্দষ্টি বিষয় নিয়ে কাজ করে। এটি একদিকে যেমন তাদের বর্্যান্ডের পরিচিতি বাড়াবে, তেমনি সমাজেরও উপকার হবে।

বাংলাদেশের অন্যতম নায়ক হচ্ছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বাংলাদেশের দারিদর্্য দূর করতে চান; এ দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে চান। বিপণনের নৈতিকতা নিয়ে আজকাল প্রশ্ন উঠছে। অনেক অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। আমার মতে, বিপণনের সবচেয়ে বড় নৈতিক সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি।

দেখুন, যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করতে ভয় পায় না, সেসব প্রতিষ্ঠানেই প্রচুর দুর্নীতি হয়। তাই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বিপণন নৈতিকতার কথা বলতে হলে বিজ্ঞাপনের কথা বলতেই হয়। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নৈতিকতা মানা হচ্ছে না। কোন বিজ্ঞাপনে কতটুকু বলা যাবে, কোন বিষয়গুলো বলা অনৈতিক হবে না, তা এখন ভেবে দেখা দরকার।

অনেক বিজ্ঞাপনেই বলা হয়, ক্রিম মাখলে কয়েক সপ্তাহেই তোমার ত্বক লাবণ্যময় হয়ে যাবে। সেটা দেখে ভোক্তা ওই ক্রিম কিনছে। কিন্তু কেনার পর হতাশ হচ্ছে। আবার বিজ্ঞাপনে বলা হয়, এ গাড়ি খুবই স্মার্ট। ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যায়।

কিন্তু কেনার পর দেখা গেল এটি ঘণ্টায় যায় ২০ কিলোমিটার। তাহলে তো আপনাকে মিথ্য তথ্য দেওয়া হলো, এটা অনৈতিক। বাংলাদেশে আমি আগেও এসেছি। বাংলাদেশ একটি শানি্তপ্রিয় দেশ। এর মানুষও শানি্তপ্রিয়।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শানি্তর বিপণনকারী। আমি এ দেশের অনেক সম্ভাবনা দেখি। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আবুল হাসনাত বাংলা ফরেক্স স্কুল Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।