কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী। ভিন্ন মতের চার ব্যক্তি ঈশ্বরের সমীপে নিজ নিজ পাপের বিষয়ে অনুতপ্ত হইয়া কনফেশন করিবার মনস্ত করিলেন। এই উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের সমীপে হাজির হইয়া নিজেদের পাপ স্বীকার করিতে লাগিলেন-
প্রথম ব্যক্তিঃ পরম করুণাময়, আমি আমার দেশকে ভালোবাসিতাম। আমার দেশের স্বাধীনতার জন্যে যাঁহারা প্রাণ বিসর্জন দিয়াছিলেন তাঁহাদের প্রতি আমার অতিশয় কৃতজ্ঞতা ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে যাহারা এই স্বাধীনতার বিরোধিতা করিয়াছে, যুদ্ধে আমাদের মা-বোন, বাবা-ভাই, শিশুদের নৃশংসভাবে, অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করিয়াছে, ধর্মের নামে অধর্ম করিয়াছে, মন্দির, গির্জা পুড়াইয়া দিয়াছে, যাহাদের আমরা রাজাকার, আল বদর, আল শামস, জামাত-শিবির, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিশেবে জানিয়াছি, তাহাদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল বলিয়া আমি আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়।
কিন্তু তাঁহারা ক্ষমতায় গিয়া দূর্নীতি, খুন-হত্যা, রাহাজানি, সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। তাঁহারা তাঁহাদের প্রতিশ্রুতি পালনে গড়িমসি করে। কোন কোন সময় বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করিবার ফন্দি-ফিকির করে। আমি আমার এই কৃত পাপের জন্য শাস্তি চাহিতেছি, প্রভু তোমার কাছে। আমি না বুঝে এই পাপ সঙ্ঘটিত করিয়াছি।
প্রভু বলিলেন, তুমি মহা অন্যায় করিয়াছ। ইহারা চিরকালই এরকম। এইবার বুঝিয়াছ, অতএব, ফিরিয়া আইস।
দ্বিতীয়জন বলিলেন- প্রভু, আমি আওয়ামীলীগের অনাচারে অতিষ্ঠ হইয়া, তাঁহাদের বিরুদ্ধে খাড়াইতে গিয়া বিএনপি করিয়াছি। পরবর্তীতে দেখিলাম তাঁহারা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের লালন-পালন করিতেছে, আওয়ামীলীগ অনাচার চালাইলেও আন্দোলন করিতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য...
প্রভু তাঁহাকে বেশিদূর আগাইতে না দিয়া বলিলেন, তুমি তো হত্যাকারী, ধর্ষকদের রক্ষাকারী, খুনি-মানবতাবিরোধী অপরাধী, ধর্মের নামে বজ্জাতীদের রক্ষার মিশনে শামিল হইয়াছিলে।
ফিরিয়া আইসো বৎস। তোমার প্রভু দয়ালু।
দ্বিতীয়জন বলিলেন, প্রভু আমি আপনাকে বড্ড ভালোবাসিতাম। আপনার ধর্মের কথা শুনিলে আমি ঝাঁপাইয়া পড়িতাম। আপনার ধর্মের কথা শুনিয়া, আমি জামাত-শিবিরকে সমর্থন করিয়াছিলাম।
আমি বুঝিতে পারি নাই তাহারা......
প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে আর আগাইতে দিলেন না। বলিলেন তুমি স্বয়ং ঈশ্বরকেই হত্যা করিয়াছ। তুমি স্বয়ং ধর্মকেই নাপাক করিয়াছ। তুমি স্বয়ং পৃথিবীকেই নোংরা বানাইয়াছ। তুমি স্বয়ং আমার পবিত্র গ্রন্থকেই অপবিত্র করিয়াছ।
তুমি স্বয়ং আমার মহিমাকে কলুষিত করিয়াছ। খোদ হাবিয়া দোযখও তোমার জন্য অনুপযুক্ত, তোমার পাপের ভার বহন করিবার জন্য অপ্রস্তুত।
এইবার চতুর্থজন বলিতে লাগিলেন, প্রিয় প্রভু, আমি এই জামাত-শিবিরের হাত থেকে আপনার ধর্মকে রক্ষা করিবার জন্যেই হেফাজতে ইসলামে যোগ দিয়াছিলাম। আমি বুঝিতে দেরি করিয়াছিলাম তাহারা আসলে জামাতি ইসলামেরই প্রেতাত্মা। আমি ভুল করিয়াছি প্রভু...
এইখানেই ঈশ্বর তাহাকে স্টপ করিয়া দিয়া বলিলেন, তুমি তো খোদ মৃত ঈশ্বরকেই হত্যা করিয়াছ।
তাহারা ঈশ্বরকে হত্যা করিয়াছে আর তুমি সেই মৃত ঈশ্বরকে টানিয়া-হেচড়াইয়া খুচাইয়া খুচাইয়া মারিয়াছ। আর এই কারণে, এই হেফাজতে ইসলামের কারণে নিহত ঈশ্বর লজ্জায়, ঘৃণায়, রাগে দুঃখে ক্ষোভে দ্বিতীয়বার আত্মহত্যা করিয়াছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।