Bangladesh: Dream সর্বশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাও প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের অভিযোগ থেকে বাঁচতে পারেনি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য এটি নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলছে, যেটা বিলি করা হয়েছে, সেটা ভুয়া প্রশ্নপত্র আর পুলিশ এ অভিযোগে ২২ জনকে আটক করেছে। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আলোচিত একটি পরীক্ষা, যেখানে দেশের ৬১টি জেলার প্রায় সাড়ে ১০ লাখ প্রার্থী অংশ নেন। মন্ত্রণালয়ের নাকচ আমলে নিলেও এটা ঠিক, প্রশ্নপত্র ফাঁস দেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিসিএস থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরীক্ষা বাকি নেই, যেখানে এমন অভিযোগ নেই। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে বাতিল হয় খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা। তারও আগে ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত নার্সিং ইউনিটের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও ঢাকা মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগগুলোও প্রায় সাম্প্রতিক ঘটনা।
বাংলাদেশে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিয়োগে ঘুষের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।
যারা সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা করে যোগ্যতার বলে চাকরি পেতে চান, তাদের চাকরির নিশ্চয়তা কমেছে এতে। এখানে টাকার কাছে যেন মেধা অসহায়। মনে হয়, মগের মুল্লুক চলছে। একজন শিক্ষার্থী ডিগ্রি বা অনার্স পাস করে ১৫-১৬ ও মাস্টার্স করলে ১৭-১৮ বছর পড়াশোনা শেষ করে যখন চাকরির বাজারের এ অবস্থা দেখেন, তখন তার হতাশ হওয়া ভিন্ন পথ খোলা রয়েছে কি? এটা আমাদের জন্য কতটা লজ্জার তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার মধ্য দিয়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ঠিক তখনই জানা যায়, আসলে এর সঙ্গে জড়িত কারা। সে সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে সরকারি বিজি প্রেসের নাম সামনে আসে। যেখান থেকে একটি শক্তিশালী চক্র বিসিএসসহ অন্যান্য পরীক্ষা মিলিয়ে মোট ৬৪ বার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এবং এর জন্য এ পর্যন্ত ২৯টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটি প্রতিবেদন দেয়, তবে শাস্তি হয়নি কারোরই।
সম্প্রতি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে অবশ্য গণমাধ্যমও বলছে, ‘ভুয়া প্রশ্নপত্র’ বিক্রি অর্থাৎ মূল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি।
অনেকে ফাঁস করার কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করে ভুল প্রশ্নপত্র বিক্রি করেন। ঘটনাটি বিশেষত উত্তরাঞ্চলে ঘটেছে; যেখানে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে আটক করা হয়েছে ২২ জনকে। উত্তরাঞ্চল থেকে এর আগেও খাদ্য বিভাগের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়, যারা সত্যিকার অর্থেই প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিল। এ অঞ্চলে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটু বেশিই হয় সম্ভবত। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে বিতরণ করা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি, কিংবা ভুয়া প্রশ্নপত্র বিতরণের চেষ্টা বলেই কিন্তু প্রশাসন দায়মুক্ত হতে পারে না।
এ রকম ঘটনা কেন ঘটল তারও সুষ্ঠু তদন্ত দরকার।
সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার হওয়ার পর থেকেই বাতাসে ভাসছিল যে, ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দিলেই চাকরি। অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব অনুসারে এমন টাকার অঙ্কের কথা প্রায়ই শোনা যায়। যা কিছু রটে, তার কিছু না কিছু তো ঘটে। আর এটা যদি হয় বাস্তবতা তাহলে বলা যায়, যার টাকা নেই তার চাকরি নেই।
মনে শঙ্কা জাগে, ভারতের কৃষকদের অনেকে যেমন ঋণের ভার সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন; তেমনি বাংলাদেশের সৎ, যোগ্য, মেধাবী কিন্তু দরিদ্র ঘরের সন্তানরাও এভাবে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করবেন।
তবে আইনের দিক থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই আমরা। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ ও সংশোধনী ১৯৯২-এর ৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের শাস্তির বিধান আছে। বলা হয়েছে, এটি ফাঁস বা বিতরণে জড়িত থাকলে ৩ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড হবে। তবে এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়নি কোথাও।
কারণ প্রত্যেক ঘটনার পেছনেই রাঘব-বোয়ালরা জড়িত, যাদের গায়ে আঁচড় দেয়ার ক্ষমতা বোধহয় কারোর নেই।
বাংলাদেশের সর্বত্র দুর্নীতির যে ছাপ আমরা দেখছি, তার সূচনা চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই। যেখানে যাবেন সেখানে যদি বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে চাকরি পেতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী সময়ে সে টাকা ওঠানোর জন্য বৈধ-অবৈধ উপায় অবলম্বন করবেন। এটা একদিকে যেমন দুর্নীতি বাড়ায়, আবার যারা টাকা দিয়ে এভাবে চাকরি পান তারা সংশ্লিষ্ট কাজের যোগ্যও হন না অনেক ক্ষেত্রে। আমাদের প্রশাসনের সর্বত্রই এ অযোগ্যরা যদি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পান, সেটা দেশের জন্য কতটা ভয়াবহ ফল বয়ে আনবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস আর নিয়োগ পরীক্ষা এবং চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি এভাবে আর কত দিন চলবে? আমাদের পিছিয়ে পড়াটা তো এ কারণেও ঘটছে। এ থেকে মুক্তি চান সবাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।