আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিযায়ী শিশির

নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই ১ জন্মগত ক্ষমতায় কি আসে যায়। অধিকাংশ পাখিই নিচু বৃক্ষডালে বসে ঝিমোয় । শিশির জন্মের লিখনে তৃণলতায় ঝরে যায়, অপেয় জল শুষ্ক শিলা থেকে গড়িয়ে সমাধিতে শুষে যায়। অথচ বেসিনের আয়নায় যে সামান্য কয় ফোটা শিশির জমে ছিল তারাও উড়ে যেতে চেয়েছিল। শুধু অভিজাত জলের ফোয়ারা শাহরিক নলে বহমান হয়, সলিলের মিছিলে মার্চপাস্ট-হাটুসৈনিকের মত প্রভুর পেয়ালায় তৃষ্ণা নিবারণ করে।

সংস্কারের মধ্যাকষ বল সমস্ত জলের পা টেনে ধরে। মনে হবে মৃত বা নির্ভরশীল হলেই সব সমাধান। বয়সে যেমন মাংসের সঞ্চয় বেড়ে যায়, সাওতালপুরুষদের বাঁশে করে পশু বহন করার মত ভারী হয়ে পিণ্ড কণ্ঠহাড়ে ঝুলতেই থাকে। বড় বেশি লঘু এবং দৈনন্দিন লাগে তাকে । পরিযায়ী পাখি মাতৃভূমিকে ছেড়ে পরদেশে উড়ে যাচ্ছিল।

শিশির জলও পাখিদের পালে উড়তে উড়তে রাতের সীমান্তে অভিবাসী হতে চাইছিল। অথচ জলবাষ্পের ডানা ঋজু নয়, পাখির মত স্বাধীনও নয়, শীতের আতঙ্কে সে কাঁপে, ধপ করে বসে পড়ে যেখানেই তাপমাত্রা শূন্যগামী হয়। প্রবেশাধিকারে জন্য সে অদৃষ্টরক্ষীর সঙ্গে তর্ক করে, তবুও সে ওড়ে। খানিক সময় পরই দেখতে পেলাম সড়কবাতির কাচের শীতল মোড়কে অসহায় এক চিমচিকার মত ঝুলছিল সে । এখন তৃণলতার জলবিন্দুরা তার উর্ধ্বগামী হবার ইচ্ছেকে বিদ্রুপ করছে।

কি লাভ তবে বিফল স্বপ্নে? আদতে জল তো জলই রইল। ব্যক্তিত্ব কমে গেল, যেন সব চুমকিঝরা ইচ্ছে নয়, আড়ালে থাকা অক্ষমতাটা আমাদের পরিচয়। রঙিন আঠাটেপে যে টেনিস বল, বাহ্যত কর্কবল হয়ে বালকদের ক্রীড়া হয়, তার অন্তরে ঠুনকো টেনিসের বল। এ ছাড়া কান্নার জলবিন্দুতে যতই রঙ থাকুক বেদনার দিনগুলো কখনোই একত্রে মেশে না। ২ জন্ম আমার অঘ্রাণে।

কখনো পাতলা ঘ্রানটুকুও আমার ইন্দ্রিয় এড়াতে পারে না। এত যে বিচিত্র দ্বন্দ্ব আমার জানা ছিল না আগে। স্বচ্ছ মাধ্যমে বর্ণহীন মাধ্যমে কিছু আঁকলে কেউ চিত্রকলা বলে না। কিছুদিন হল জেনেছি প্রেম ও মৃত্যুর ও অরূপ অন্বয় থাকে । উড়ন্ত শিশির কণা যে ছবি এঁকেছিল আয়নায় আমি হলে সেখানেই থমকে থাকতাম।

অথচ আজকে অনুপস্থিতিটাও তাও ভাল লাগছে। আমি পারি নি সেই কষ্ট কমে গিয়ে দেখি বকুল ফুলের মত ভেজা এক মিষ্টি একটা সৌরভ থাকে আমার না পারা জুড়ে। আমি ব্যস্ত হয়ে যাই নি। সেজন্য ইন্দ্রিয়ে খড় পুড়িয়ে ধান সেদ্ধের মত কিছু গন্ধ পাই । সেদ্ধ হবার সময় চোকলার আচ্ছাদনে ধানের টুকরো ভাগ হয় দৃশ্যের অন্তরালে।

শুনেছি অদৃশ্য কিছু পুড়ে গেলে তার ছায়াটাও উল্টো হয়, উল্টো চিলের মত শ্মশানের উপর দিয়ে উড়ে যায়। চতুর্দোলার পিছনে শোকার্ত বেহারা যেভাবে অনিচ্ছায় চলে, আর দেখতে পায় শববাহী ছায়া ছায়া গন্ধটা উড়ে গিয়ে পাথুরে ধ্বনি সৃষ্টি করেছ। যে পাথরটাও নদীতে ডুবে থাকে, জলছবি শুকিয়ে গেলে, ছায়া আর তার প্রতিবিম্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে লেপ্টে থাকে। অনুভব শিল্পকে নির্ধারণ করে। কাব্য দর্শনের জন্য সুক্ষ্ম অনুভূতি প্রয়োজন।

বৈথেলহামে যিশুর সংবাদ জানতে পরিব্রাজকদের আকাশের তুচ্ছ নক্ষত্র ধরে পথ চলতে হয়। অথচ খালিচোখে বড় নক্ষত্রই দেখতে পায়। ভোঁতা আলো দেখতে পায়, আর পিনফোটানো কষ্টে সুখের দুর্ভিক্ষ, অন্ধকার ব্যতিত যেন কিছু নেই। তবে কীটদংশনে পর্বতের গায়ে বৃক্ষ কম্পিত হলে যতটুকু স্পন্দন হয় সেই চারু কম্পনেও কিন্তু ভাবনার জন্ম হতে পারে। শূন্যতাকে এভাবে দেখা শিখিনি আগে।

একজন মা যার সন্তান নেই বলে কষ্ট আছে, অন্য একজন যার সন্তান গর্ভে থেকে মরে গেল, আর তৃতীয় জন যার সন্তান থেকেও অজ্ঞাতবাসে - প্রত্যেকেই শূন্যতাকে নিয়ে বসবাস করে, তারপরও তিনটি গল্পের শূন্য গুলো পৃথক। জনৈক স্কেচকর আঁকতে পারছিল না। বন্ধাত্বের জন্য সে তার হৃদয়কে দায়ী করে যায়। যে খাতার মুখোমুখি পাতা চোখের পাতার মত লাগালাগি ঘুমিয়ে ছিল, শত চেষ্টাতেও কোন আঁচড় দিতে ইচ্ছে হল না। দ্বিতীয় এক চিত্রকরের মন যখন প্রস্তুত তার হাতের কাছে রঙ নেই, হয়তো তুলিও ছিল না ।

মাঝ রাতে প্রবত চায়ের প্রবল তেষ্টার কৌটো উপুর করেও চা পাতা মিলল না - এভাবে বহু রকম শূন্যতা কিছু না থাকায় অস্তিত্ব জানান দেয়। আসল কথা কিছু আঁকি নি। লিখিও নি। সান্ত্বনা দেই - যে দিন খাতা খুলে কিছুই আঁকা হয় না, সেই শূন্যতা একেবারে বন্ধ খাতার চাইতে পুরোপুরি আলাদা। কেননা বস্তু নয়, পারস্পরিক গল্পসমূহই আমাদের নির্মাণ করে।

-- ড্রাফট ১.০ /পরিমার্জনরত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।