যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের বিষয়টা নতুন না। বহু রাজনীতিবিদ তাদের সন্তানদের রাজনীতির হাতে খড়ি দিয়ে রাজনীতিতে এনেছেন। সমাজ উত্তরাধিকার সূত্রে হয়তো পূর্বসুরীর চেয়ে প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ পেয়েছে উত্তারাধিকারের মধ্যে। যেমন আমাদের পাশের দেশে নেহেরু আর ইন্দিরা তার একটা উদাহরন হতে পারে।
কিন্তু রাজনীতিকদের মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসাবে রাজনীতিতে আসার বিষয়টা খুব একটা পুরাতন না।
বিশেষ করে বাংলাদেশে একজন প্রেসিডেন্টের নিহত হওয়ার পর দলের মধ্যে চরম বিশৃংখলার কারনে কন্যাকে রাজনীতিতে আনা হয় ৬ বছর পর। আরেক প্রেসিডেন্ট নিহত হবার বছর খানেকের মধ্যে দলের বিশৃংখলা থামাতে বিধবা পত্নীকে রাজনীতিতে আনা হয়। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি - মৃত রাজনীতিকের বিধবা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা যা হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে - তাকেই ওয়ারিশ সূত্রে পদায়ন করা হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রেজেন্টেশন হবে মরহুম আবদুর রাজ্জাকের পুত্রের এমপি হওয়ার মাধ্যমে।
উদাহরন দিয়ে লেখা লম্বা করা ঠিক হবে না।
তবে দেখি সাম্প্রতিক নরসিংদীর মেয়র, নারায়গঞ্জের মেয়র বা কুমিল্লার মেয়র সবাই ও
এখানে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে যে - যে রাজনৈতিক বিশৃংখলা ঠেকাতে এই দুই নেত্রীকে আনা হয়েছিলো - উনারা দলের পুরো শৃংখলা এমন ভাবে ভ্যানিস করেছেন যেন ভবিষ্যতে বিশৃংখলার কোন সুযোগ থাকে না। যেখানে শৃংখলাই নাই - সেখানে বিশৃংখলা আসে কিভাবে?
রাজ্জাক পুত্রকে রাজনীতিতে আনার জন্যে অভিজ্ঞ রাজনীতিক এনামুল হক শামীমকে সাইড লাইনে নেওয়া হয়েছে দলীয় পদে বসিয়ে। বিশৃংখলা কাকে বলে। আবার দেখি বড়ভাইকে জেলে যেতে হয়েছে বিরোধীদলের উপর গ্রেনেড হামলার অপরাধে - তার জন্যে ছোট ভাইকে ছাত্র শাখার প্রধান করা হয়েছে - যদিও ভদ্রলোক (!) তিন সন্তানের জনক একজন চল্লিশোর্ধ মানুষ।
(২)
এই রাজনীতির উত্তরাধিকার যে শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবেই পদায়নের মাধ্যমে হচ্ছে তা নয় কিন্তু।
অনেকেই স্বপ্রনোদিত হয়ে পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার মিশনে নেমে যাচ্ছে। যেমন ৭১ এর ঘাতক দল জামায়াতের উত্তরাধিকার হিসাবে কাজ করছে শিবির। ৭৫ এর ঘাতক ( বঙ্গবন্ধু ও জেলে হত্যার) দের উত্তরাধিকার হিসাবে যুবকমান্ড নামে পরিচিতরা এখন বিএনপির ব্যানারে তাদের আরাধ্য মিশনে ব্যস্ত। এরপর আগামীতে ২১ এ আগস্টের গ্রেনেড হামলার উত্তরাধিকার নিয়ে আসবে আরেকদল। এরা নিজের খেয়ে বনে মোষ তাড়ানোর মতো অবিরাম খেটে যাচ্ছে তাদের পূর্বপুরুষের অসমাপ্ত অথবা ব্যর্থ মিশনগুলোতে সফল হতে।
(৩)
মেধাহীন রাজনীতির নেতুত্বে উত্তরাধিকারের প্রবল জোয়ার দেখে সমর্থকরা স্বপ্নহীন হয়ে গেছে। এরা রাজনীতিতে মেধার ব্যবহারের চেয়ে কূটকৌশলকে বেশী ব্যবহার করছে। কারন এরা জানে মেধা খরচ করে লাভ নেই - কারন শীর্ষপদগুলোতে যারা আসীন হবে তারা পূর্ব নির্ধারিত। হাওয়া ভবন করে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যদি কোন উত্তরাধিকার লন্ডনে কোন জ্ঞাত আয় ছাড়াই বছরের পর বছর বসবাসও করে - তারপরও এই মতাদর্শের উত্তরাধিকারা একবারও প্রশ্ন করবে না - আমার ভবিষ্যত নেতার আয়ের উৎস কি? এই প্রশ্ন তাদের মাথায় আসলেও উচ্চারন করবে না - কারন কে নেতা হলো তা তাদের বিষয় না - তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন হলো তাদের পূর্বপুরুষের ব্যর্থ অথবা অসমাপ্ত কাজগুলোর দিকে দল এগুচ্ছে কিনা?
এই মেধাহীন আদর্শহীন উত্তারিধারের রাজনীতি আর একদল মানুষের ওয়ারিশসূত্রে নেতা হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত গন্তব্য কি হবে তা ভেবে হতাশ হতেও ভয় হয়। কিছুটা আশার জায়গা ছিলো বাম রাজনীতিতে - সেখানেও উত্তরাধিকারের প্রভাব প্রবলভাবে বয়ে যাচ্ছে।
তাইলে - মুক্তির পথ কি? একজন ছাত্রকে ভাবতে হবে - সবচেয়ে ভাল ফলাফল করে বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকুরী করে যখন সর্বোচ্চ পদে যাবে - তখন তার বস হবেন তারই ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটি - যার বাবা হয়তো রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন। তাই এই ওয়ারিশানদের জন্যে ওয়াকওয়ার না দিয়ে মেধাবী ছাত্রদের রাজনীতিকে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত - সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে একসময় জনগন মেধাহীন ওয়ারিশ এবং উত্তরাধিকারীদের প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবে এবং জনগন তাদের প্রজ্ঞা দিয়ে মেধাবীদের যোগ্য আসনে বসাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।