বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি। ট্রেনের আলাদা একটা নিজস্ব গন্ধ আছে। সবাই এই গন্ধটা সব সময় পায় না। সবাই যেটা পায় তা হলো তেল পোড়া আঠালো একটা গন্ধের সাথে প্রশ্রাব, সিগারেট আর ঝালমুড়ির পেয়াজ মরিচ কাটার একটা গন্ধের একযতা মিক্স গন্ধ।
কিন্তু কেউ ট্রেনের নিজস্ব গন্ধটা পায় না। রমিজ নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করে। তার কাছেও ট্রেনের গন্ধটা আর সবার মতোই লাগে। আলাদা ঘ্রাণটা সে সব সময় পায় না। ট্রেনের এই ঘ্রাণটা সে প্রথম পায় আজ থেকে আড়াই বছর আগে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময়।
শীতের মাঝে রাতের ট্রেন ছুটে চলছিলো। সিগারেট খাওয়ার জন্য সে দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছিলো। ম্যাচে আগুন জ্বালাতে গিয়ে সে এই ঘ্রাণটা প্রথম পায়। কেমন যেন টক টক মিষ্টি মিষ্টি একটা গন্ধ। কারোর বডি স্প্রের গন্ধ না যে এটুকু বোঝা যাচ্ছিল।
সিগারেট না ধরিয়েই সে ঘ্রাণটা বেশ কয়েকবার শোকার জন্য জোরে জোরে নি:শ্বাস নিচ্ছিলো। কেমন যেন মাতাল একটা গন্ধ। সেবার ঘ্রাণটা পুরোপুরি মন ভরে শুকে নিতে পারেনি। সিগারেট খেয়ে সিটে গিয়ে ঘুমিয়েই রাত পারি করেছিলো। ঘুম থেকে ওঠার পর সে ঘ্রাণটা শোকার চেষ্টা আবার করেছিলো।
কিন্তু তখন আর সেই গন্ধটা নেই। নাকে সর্দি জমেছিলো কিনা দেখার জন্য টয়লেটে গিয়ে নাক পরিস্কারও করে এসেছিলো। তাও গন্ধটা নেই।
অদ্ভুতভাবে আজ সিলেটে যাবার রাতের ট্রেণেও সে সেই একই গন্ধ পাচ্ছে। হঠাৎ হারানো বস্তু ফিরে পেলে মানুষ যেমন আত্মহারা হয়ে পুলকিত অনুভব করে, ঠিক সেভাবেই রমিজ আচমকা লাফিয়ে উঠে পাশের যাত্রীকে ডেকে বললো,
-ভাই কি কোন টক টক মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছেন?
সহযাত্রী যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন রমিজ তা দেখেনি।
তাই ঘুম থেকে ডেকে অবান্তর প্রশ্ন করায় ভদ্রলোক রেগে জবাব দিলেন,
-কেন ভাই সাতদিন গোসল না করেই কি মিষ্টি ফ্লেভারের বডি স্প্রে মারছেন নাকি? নাকি হজমি খায়া পাদতেছেন যে টক টক মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ পাইতে হবো? ঝালটাও দিতেন। পুরাই চাটনী হইয়া যাইতো।
ভদ্রলোককে রমিজ আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সহযাত্রীটিও কোন কথা না বলেই আগের মতো ঘুমানোর ভংগি করে সিটে হেলান দিয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন।
রমিজ জোরে জোরে নি:শ্বাস নিচ্ছে।
সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে এটা ট্রেনেরই সেই গন্ধটা। জানালার গ্লাস নামিয়ে দিয়ে সে মাতাল হয়ে সেই ঘ্রাণ শোকার চেষ্টা করছে। চেনা গন্ধের ভীড়ে অচেনা গন্ধটিকে তার কাছে কেন যেন হঠাত বড় ভালো লাগছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।