আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বরকতের হাতটি ধরা হলো না

কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ পুরো দেশে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবার মাঝেই ক্ষোভ । যেকোন সময় তা বিস্ফোরণ হতে পারে। কারণ আর কিছু না মায়ের ভাষার উপরে উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা। মোড়ে মোড়ে, চায়ের স্টলে , বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, শিক্ষকদের আড্ডায় সবজায়গায় একই আলোচনা।

১৯ ফেব্রু'৫২ । মনটা ভালো যাচ্ছিল না । তাই দুপুরটাতে হলের বিছানায় উশখুশ করে বিকালটায় একটু মনটা ভালো করার জন্য বের হলাম মিষ্টি রোদটা গায়ে লাগানো আর চারদিকের পরিস্থিতিটার খোজ নিতে। হলের বারান্দায় দেখা খালেকের সাথে। - কিরে রশিদ কোথায় চললি? - এইতো , একটু বের হচ্ছি।

- চা টা খাবি নাকি ? - চল বের হয়েছি যখন একটু খেতে কোন সমস্যা নাই - আচ্ছা চল , পথে বরকতকে আর ওকে সাথে নিয়ে নিবো - ওকে মানে ? হুম বুঝেছি সোনিয়া ছাড়া ও আর কে হবে? - বুঝে আবার প্রশ্ন করছিস কেন? হল থেকে বের হয়ে বরকতের রুমে গিয়ে চায়ের নিমন্ত্রন করতেই উৎফুল্ল হয়ে সাড়া দিলো বরকত। - চল। তবে আজকে বিলটা কিন্তু রশিদ দিবে - আরে না না , সোনিয়া সাথে থাকলে রশিদ চায়ের পয়সা দিলে খালেকের মান থাকবে? - আচ্ছা , এই কথা ? ও যাবে নাকি? - হুম তিনবন্ধু বরকতেরর রুম থেকে বের হয়ে আসল রাস্তায়। গল্প করতে এগিয়ে গেল টিএসসির দিকে। পেয়ে গেলো সোনিয়াকে।

নীল রং এর শাড়ী পড়েছিলো সোনিয়া। ভারি সুন্দর লাগছিলো ওকে। চারজন হাটতে হাটতে চলে যাচ্ছিলাম সরওয়ার্দীর ভিতরে। বিকালের রোদের বড় ভালো লাগছিলো। আমাদের আগে আছে ছায়াগুলো দৌড়ে চলছিলা ।

গল্পগুজবের ফাকে স্বভাব কবি খালেক বলে উঠলো বল বীর বল উন্নত মম শির............ একুটু বলেই ছাড়লো নিজের লেখা কবিতার ভান্ডার থেকে অভিমান নামরে কবিতাটা। কবিতা শুনতে শুনতে চলে আসলাম রমনার কোণায়। ওরটা শেষ হতেই বরকত দিলো হালকা করে গানের টান। আমি আর সোনিয়া দিলাম ছোট্ট করতালি। এভাবে গল্প কবিতা আর গান চলতে চলতে চলে আসলাম রমনার পূর্ব পূর্ব পাশটায়।

ঘাসের বিছানায় চারজন মিলে চুটিয়ে আড্ডা হলো কিছুক্ষন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই উল্টো হাটা দিলাম । সেন্টু মামার দোকানের চা না খেলে যে বিকালটা মাটি। সেন্টু মামার দোকানের চায়ের বিল পরিশোধ করে বরকত আর আমার থেকে আলাদা বিদায় নিয়ে খালেক আর সোনিয়া। আমরা আরো কিছুটা সময় সেন্টুর মামার দোকানে বসে কার্ফুর আলাপ আলোচনা শুনে চলে গেলাম হলের দিকে।

পরদিন তেমন একটু যোগাযোগ হলো না বরকতের সাথে। ২১ তারিখ সকালে হাটতে হাটতে চলে গেলাম হাসপাতাল গেটে। ভিতরে হোস্টেলের সামনে ছাত্ররা ছাড়াও আরো লোকজন। অনেকের হাতেই প্লাকার্ড। কিছুদূরে খালেক আর সোনিয়াকেও দেখলাম।

আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আরো অনেককে দেখলাম। বাহিরে ১৪৪ ধারা রক্ষায় খাকী পোষাকীরা বন্দুক উচিয়ে দাড়িয়ে আছে। ছাত্র জনতার ক্ষোভ কিছুক্ষনের ভিতরেই বিক্ষোভে রূপান্তরিত হলো। হোস্টেলের সামনের স্থানটা জনতার ভীরে রাস্তায় চলে গেল। কিছু দূরে হঠাৎ চোখে পড়লো বরকতকে।

ইতিমধ্যে শ্লোগান মিছিল শুরু হয়ে গেছে। চিৎকার করে কয়েককদম এগুতেই প্রায় কাছে পেয়ে গেলাম বরকতকে। আরেকটু এগুলেই পেয়ে যাবো বরকতকে। আমাদের কয়েকগজ পিছনে তখন হাতে হাত ধরা ছিলো খালেক আর সোনিয়া। মাতৃভাষা বাংলা চাই শ্লোগানে প্রকম্পিত হওয়ার সাথে সাথে গর্জন করে উঠলো বন্দুকের নল।

ঠাস! ঠাস! ঠাস............... গুলিবৃষ্টিতে লুটিয়ে পড়লো অনেকেই। বরকতের কাছে পৌছতে না পৌছতেই বরকতও লুটিয়ে পড়লো মাটিয়ে । তলপেটে গুলি লাগলো ওর । লুটিয়ে পড়া দেহটার দিকে ছুটলাম কিন্তু হঠাৎ আর কি যেন হলো .............. আহ!!!!!! মাগো বলে বলে বসে উরুতে হাত দিয়ে বসে পড়লাম। চোখে কিছু আর দেখছিনা।

সবকিছু অন্ধকার লাগছে । শেষবারের মতো হাত আর উরু রক্তে রঞ্জিত হতে গেছে....... ............................. লুটিয়ে পড়লাম ............. জ্ঞান ফিরলো রাত ৯.৩০ দিকে। চোখ খুলে দেখলাম খালেক আর সোনিয়াকে। চোখে অশ্রু ........... দুর্বল স্বরে জানতে চাইলাম - খালেক , বরকত কইরে ? খালেক কিছু বলল না। সোনিয়া পাশে এসে আমার হাতটা ধরলো।

আরেকবার দুর্বল কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম.... - বরকতের কি হয়েছে? - বরকত চলে গেছে, সে আর নেই সোনিয়াকে ডুকরে কেদে একটু দূরে চলে যেতে দেখলাম। আমার মুখ থেকে শুধু উচ্চারণ হলো ................... - বরকত আর নেই ????? আবার জ্ঞান হারালাম। । । ( ৫২ সালে বরকতের একজন কাছের বন্ধু কল্পনা করে লিখা ) সকল শহীদদের জণ্য সামাম , দোয়া আর সম্মান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।