প্রিয় বরকত ,
আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় বাবার মুখে। আমি তখন কতোই বা!ছয় কিংবা সাত। ততোদিনে আমার বর্ণমালার প্রায় সবগুলো অক্ষরের সাথে পরিচয় হয়ে গেছে। স্বর আর ব্যান্জন মিশিয়ে নিজের নামটা লেখা শিখে গেছি। সেই সাথে শিখে গেছি এ ভাষায় দিগন্ত লেখা যায়।
এ ভাষায় সমুদ্র লেখা যায়।
এ ভাষা দিগন্তের চেয়েও বিশাল,এ ভাষা সমুদ্রের চেয়েও গভীর। তারপর পেড়িয়ে গেছে বেশ ক'টা বছর। ইতিমধ্যে আমি ইশকুলের গন্ডি পেড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে গেছি। আমার ঘরে এখন আপনার একটা ঝাপসা ছবি ঝুলিয়ে রেখেছি।
মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে জানালার ফাঁক দিয়ে রোদ এসে পড়ে আমার ঘরে। আপনাকে তখন রক্ত মাখা মনে হয়। প্রিয় বরকত সাহেব,আমাদের উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিশেবে এখনও বাংলা প্রতিষ্ঠা পায় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশগুলোতে তাই আমার মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমাদের বাবা মারা অনেকেই সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম ইশকুলে পড়িয়ে আভিজাত্য অনুভব করে সন্তানের শুদ্ধ করে বাংলা বলতে না পারাতে গর্ব অনুভব করে।
আমাদের লুলায়িত প্রজন্ম নিজেকে smart প্রমাণ করার জন্য বাংলার ভেতর ভুলভাল ইংরেজি মিশেল করে। এ প্রজন্মের আমরা লালনকে চিনি না,হাসনকে চিনি। আমরা বাংলা গান শুনতে রীতিমত লজ্জাবোধ করি। পশ্চিমা অপসংগীতকে ধারন করে আমরা নিজেদের আধুনিক প্রমাণ করতে ব্যস্ত। এ প্রজন্মের একজন হিশেবে তাই আপনার কাছে আমি করজোড়ে ক্ষমা চাইছি।
আপনার উত্তরসূরী হিশেবে ভাষার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন না। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
ভালো থাকবেন। আকাশের তারা ,ছায়া আর রোদ্দুর হয়ে।
বাংলার আকাশে ঘাসে ।
ইতি
উত্তরসূরিদের পক্ষে
রিয়াদ আরিফ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।