ভেজাল রোধে ও খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০ ধরনের অপরাধের শাসি্তর জন্য বিভিন্ন মেয়াদে লঘু হতে গুরুদণ্ডের সাজা ও জরিমানার বিধান রেখে Èনিরাপত্তা খাদ্য আইন ২০১৩ ' খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের ২৩টি স্টেকহোল্ডার সংস্থা থেকে লিখিত মতামত, সেমিনার ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এ গুরুত্বপূর্ণ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
এ আইনুযায়ী নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন সদস্য কোন অপরাধ বা ক্ষতি সংঘটন বা সংঘটনের প্রস্তুতি গ্রহণ বা সংঘটনে সহায়তা সংক্রান্ত কোন ঘটনার বিষয়ে কেউ ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারন বা গ্রহণ করলে বা কোন কথাবার্তা বা আলাপ আলোচনা রের্কড করলে ওই ভিডিও, স্থিরচিত্র, অডিও ওই অপরাধ বা ক্ষতি সংশি্লষ্ট মামলা বিচারের সময়ে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
এর আগে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর এক বৈঠকে বিশুদ্ধ খাদ্য উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহণ, মোড়ক, বাজারজাতকরণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধ সংক্রান্ত সব আইন ও অধ্যাদেশ পর্যালোচনা করে Èদি পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯' এর বদলে দ্রুত Èনিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩' নামে এ আইন প্রণয়নের সদ্ধিান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন আইনের বৈশষ্ট্যি
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সংস্থার আওতায় প্রচলিত খাদ্যে ভেজাল রোধে ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম একই ছাতার (আমব্রেলার) নিচে এনে যুগোপযোগী আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ আইনে জাতীয় নিরাপদ Èখাদ্য ব্যবস্থা উপদষ্টো পরিষদ' নামে শক্তিশালী উপদষ্টো পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কমিটিতে খাদ্যমন্ত্রী সভাপতি এবং মনি্ত্রপরিষদ সচিব সহ-সভাপতি থাকবেন। এছাড়া জনস্বাস্থ্যে, পুষ্টি, খাদ্য উত্পাদনে, শিল্পে, খাদ্যেভোগে ও ভোক্তা বিষয়ে দীর্ঘ পেশাগত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে Èনিরাপদখাদ্য কতর্ৃপক্ষ' গঠন করা হবে এবং তাদের কারিগরী জ্ঞান ও সহায়তার মাধ্যমে দেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যবাধকতা
আইনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কোন মাছ, খাদ্য বা পশুখাদ্য বা খাদ্যপণ্য আমদানি বা মজুদ বা বিতরণ বা বিক্রয় করা যাবে না। যদি কোন ব্যবসায়ী মনে করেন, তিনি যে সব খাদ্যদ্রব্য উত্পাদন বা প্রক্রিয়াকরণ বা সরবরাহ বা বিক্রয় করেছেন সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন আইন বা বিধি মানা হচ্ছে না, ভোক্তার জন্য অনিরাপদ তবে তার কারণ উলে্লখ করে তিনি তা দ্রুত সন্দেহজনক প্রশ্নবদ্ধি খাদ্যদ্রব্য বাজার বা ভোক্তার কাছ থেকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করবেন এবং উপযুক্ত কতর্ৃপক্ষকে তা জানাবেন।
ক্ষতিপূরণ
ইচ্ছাকৃত বা অবহেলার কারণে ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি, হয়রানিমূলক মিথ্যা অভিযোগ বা মামলা, প্রতিষ্ঠানের বিধান লংঘন করা বা অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি ইচ্ছাকৃত বা অবহেলার জন্য যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কোন কাজের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি, খাদ্য স্থাপনা বা ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষতি করে, তা হলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
কোন ব্যক্তি বা সত্তাকে হয়রানি বা জনসমক্ষে হেয় করা বা ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা বা অভিযোগ দায়ের করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা সত্তা ওই ব্যক্তি বা সত্তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করতে করা যাবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে যেই অংশীদার, পরিচালক, নির্বাহী বা কর্মচারীর ওই অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশি্লষ্টতা থাকবে, তিনি ওই অপরাধ বা বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে গন্য হবেন। যদি তিনি প্রমাণ করতে না পারেন যে ওই অপরাধ বা বিধান লঙ্ঘন তাকে না জানিয়ে করা হয়েছে।
জরিমানা ও শাসি্ত
জীবননাশক বা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোন রাসায়নিক বা ভারি ধাতু বা বিষাক্ত দ্রব্য মিশ্রিত কোন খাদ্যদ্রব্য উত্পাদন, আমদানি, প্রস্তুত, মজুদ, বিতরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের অপচষ্টো করলে অনুর্ধ্ব সাত বছরের কারাদন্ড বা অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
পুনরায় একই অপরাধ করলে সাত বছর থেকে অনুর্ধ্ব ১৪ বছরের কারাদন্ড বা অনূ্যন দশ লাখ টাকা জরিমানা। এছাড়া দূষণকারী মিশ্রিত কোন খাবার বিক্রি করলে, ভেজাল খাবার বিক্রয় বা বিক্রয়ের অপচষ্টো করলে, হোটেলে বা রেসে্তারঁা বা প্রতিষ্ঠানের অবহেলা, মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে, শর্ত ভঙ্গ করে কোন খাদ্যদ্রব্য মজুদ বা প্রস্তুত করলে, অনুমোদিত ট্রেডমার্ক বা ট্রেডনামে বাজারজাতকরা কোন খাদ্যপণ্যে নকল করে বিক্রয়ের চষ্টো করলে, খাদ্যদ্রব্য উত্পাদন বা সংরক্ষণের স্থানে শিল্প কারখানার তেল বা খনিজ বা বর্জ্য থাকার অনুমোদন দেওয়াসহ এমন ২০ ধরনের অপরাধের জন্য অনুর্ধ্ব সাত বছর থেকে শুরু করে কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত শাসি্ত এবং অনধিক দশ লাখ টাকা এবং কমপক্ষে তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ পুনরায় করলে শাসি্ত ও জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানোর বিধান রাখা হয়েছে।
মামলা ও বিচার
কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ অনুযায়ী আইনে যাই থাকুক না কেন সরকার বা নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক এই আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারার্থে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত আমলে গ্রহণ করতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, কোন অপরাধ সংঘটনের সাথে সাথে আইনের ৪৯ ধারার অধীন স্থাপিত বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে লিখিত মামলা দায়ের করবেন।
নিরাপদ খাদ্য কতর্ৃপক্ষ দিনে বা রাতে যে কোন সময়ে অপরাধীকে গ্রপ্তোরের জন্য পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা না হলে মামলাটি নিরাপত্তা খাদ্য কতৃপক্ষের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত হবে এবং তারা এ অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।