মা বাবার দেয়া নাম বহন করে এসেছি আমি এতদিন। কে জানে আমার অস্তিত্বের সংজ্ঞা কি?”
মাথার ভেতর পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরতে থাকে নিস্তব্ধতা। কান ঝালাপালা করে দেয় এপিটাফের উপর ঝড়া পাতার গান। চিৎকার করে কাঁদতে পারিনা কোনভাবেই। চিন্তার ফসল ফলেনা কোন দরিদ্র জমিনে।
আছড়ে পড়ে প্রশ্নের বালুকনা। আমি তাতে কোন সংজ্ঞা খুঁজে পাইনা। শুধু বিচ্ছুরিত হয় অজানা জোছনা। আমি জোছনার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে আকাশ নেই। কালচে ব্যাকগ্রাউন্ডে শুধুই হতাশার অন্ধকার।
“ কে তুমি?”
নিজের ভেতর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রশ্নাভ রশ্মি। আমি কোন কালেই কোন মানুষ ছিলাম নাকি? কে জানে। সংজ্ঞার পেছনের সংজ্ঞা জড়ো হয়। সামনে গড়ে ওঠে রেললাইন। আমি সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে নিতে শুরু করি সংজ্ঞা পত্র ।
বুঝতে পারিনা কেন সংজ্ঞা পরবর্তী উত্তর সঙ্গীত খুঁজে পায়না মনের অলিগলি।
আবার বেজে ওঠে-
“কে তুমি? কেন তুমি? কি তুমি?”
হটাত সামনে জড়ো হয় একটা সাদাটে আয়না। খুব সাধারন একটা আয়না। সেই আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের ভেতরে নিজেকে খুঁজে পেতে চেয়েই দেখি- সেখানে অন্য কেউ- একদম অপরিচিত কেউ। একদম অচেনা কেউ।
একদম অপরিচিত সে মুখের ভ্রু আছে- চোখ আছে- চুল আছে- নাক আছে। চোখের মনি আছে- শুধু পরিচয় নেই। নাম নেই। পদবি নেই। দুঃখ নেই।
যন্ত্রনা নেই। কালো কালো লোভ নেই। হিংসা নেই। বিদ্বেষ নেই। আয়নার ভেতরের আমি তে কোন আমিত্ব ও খুঁজে পাইনা আমি।
“ জানো? তুমি কে? জানো জীবন কি?” বিবমিষা চিৎকার ওঠে।
সামনে পড়ে থাকা পান পাত্র নিয়ে আমি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলি কিছু জলকণা। জলের ভেতর নিজের অস্তিত্ব খুঁজে আমি নিনাদ করি- এই নিনাদে ভাঙতে শুরু করে আমার ভেতরে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে নিজের ভেতরের সংজ্ঞা সমূহ। জীবনের মানে জানার জন্য আমি হাতড়ে মরি পূর্বপুরুষের অমলিন চেতনা।
খুঁজে পাইনা কোন জান্তব উত্তর। জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পাই ভুলে যাওয়া গল্পের ছাই। হারিয়ে যাওয়া ধর্মীয় গান। আমি সেই গানের কলি ভেঁজে ভেঁজে গাইতে গিয়েই নিজের অপরিচিত কণ্ঠস্বর খুঁজে পাই। এই কন্ঠ আমার ছিলনা কোনকালেই।
এই আমি আমি নই। এই জিহবা থেকে জানু- কন্ঠ থেকে জঙ্ঘা- কিছুই আমার ছিলনা কোন কালেই।
আমি ভ্রুন থেকে শৈশব হাতড়াই জিজ্ঞাসা খুঁজে ফেরার জন্য। আমি জীবন থেকে মরন খুঁজে বেড়াই নিজেকে খোঁজার জন্য। দেখি রক্তের ধারা আমার আংগুলে।
কেটে গেছে আমার অগোচরে। আমি কেটে যাওয়া আংগুলের ভাঁজে রক্তের ভেতরে লালচে লোহিত কণিকাকে জিজ্ঞেস করে উত্তর না পেয়ে চলে যাই শরীরের গহীনে। ফুসফুসের কাছে খুঁজে না পেয়ে হাতড়াতে থাকি ডায়াফ্রাম। খুঁজে পাইনা কিছুই। শেষে এসে হৃদপিন্ডে থেমে দেখি- সেখানে জমাট ছিল একদলা ভালবাসা।
সেখানে জমাট ছিল কালচে রং। আমি সেই কালোর ভেতর আলো খুঁজে পাব ভেবে ফালি ফালি করে ফেলি অন্ধকারের গান। হৃত সঙ্গীত। আমার হৃদয়ের ভেতর লুকিয়ে ছিল এক রাশ ধুলোবালি। সেখানে আমার সংজ্ঞা ছিলনা কোনকালেই।
শেষে আমি আবার ফেরত আসি আবার নিজের স্থির অবয়বে। সেখানে আমার ভেতর আমি ছিলাম না বলেই- দেহের ভেতর খুঁজে পাইনি আপন সত্ত্বা। অনেক দুর থেকে ভেসে ভেসে আসে কান্নার গান। অন্ধকারের সুষম শব্দার্থ। আমি সেখানে ব্যাবচ্ছেদ করেছিলাম নিজের নামের অক্ষর গুলো।
পেয়েছিলাম একাকী কঠিন এক স্বর।
“পদ্ম”
“পদ্ম” চিরকার একা ছিল । চিরকাল ভেসে এসেছে নিলয় বিড়ালাক্ষী জলস্রোতে। আমি সেই স্রোত কল্পনা করে ভেসে যাই জলজ সঙ্গীতে। সেই সঙ্গীত আমার কানে বাজায় কোন এক আদুরে বালিকা।
আমি সেই বালিকার হাত ধরে প্রশ্নালু কন্ঠে তাকাতেই তার চোখে নিজেকে দেখি। তারপর নিজের ভেতর হারিয়ে গিয়ে অন্ধকারের গান শুনতে শুনতে আবার ফিরে আসি সেই বাক্সের ভেতর। সেখানে আমি ছাড়া কিছুই ছিলনা কোন কালে। ।
ছবি এবং আঁকাআঁকি- নষ্ট কবি
লেখাটি সৃজন এ প্রকাশিত
সৃজনি ডাউনলোড করতে http://www.mediafire.com/?0p063aibz8lh23x ক্লিক করুন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।