I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. সব মানুষই নিজেকে খুব ইম্পর্ট্যান্ট ভাবে, তাই না? মানুষ সত্যি কি নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে?
সকাল থেকে সারাদিন আমি কিভাবে পার করি, তার হিসেব মনে হয় চাইলেও দিতে পারবোনা। একেবারেই ছকবিহীন জীবন আমার। সকালে ৫ টা থেকে ৯ টা, এর মধ্যে যেকোনও একটা সময়ে ঘুম ভাংলেই হলো। বাচ্চাদের বেশিরভাগ সময়ে আমার মা-ই খাইয়ে, রেডি করে স্কুলে নিয়ে যান, কদাচিৎ ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে পারলে আমি। অফিসটা বাবার, কাজেই স্বাধীনতা তো আছেই আমার অনেকটা।
যান্ত্রিক ঢাকা শহরের ১৫টা বছর আমাকে এত বেশি ছকে বেঁধে ফেলেছিল, যে চট্টগ্রামে এসে প্রথমেই নিজেকে ছকের বাইরে নিয়ে গিয়েছি।
যে কথা বলছিলাম, নিজেকে ভালোবাসা। এই ব্যাপারটা মাথায় ঢুকেছে গতকাল রাতে মুখ ধোবার সময়। প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে তারপর দাঁতব্রাশ করি। তখন মনে হয়, বাথরুমের বেসিনের এই আয়নাটা সারাদিন চোখের সামনে থাকেনা কেন? এই একটা আয়নাকে এত ভালো লাগে, মনে হয় এই আয়নাটাই সত্যি আমার চেহারায় বেশ রূপবতী রূপবতী একটা ভাব এনে দেয়।
আপনাদের কি মনে হয়না, এই একটা আয়না সবচেয়ে বেশি আপন? সারাদিনে আমার আয়না দেখা হয়না, হতে পারে এটাও কোনও কারণ। হিজাবের কারণে চুল বাঁধা হয় কোনওরকমে, কোনওকিছু মাখিনা, কাজেই সকালে বের হওয়ার আগে আমার রেডী হওয়াটাও হয় আয়না-বিহীন। হয়তো সেকারণেই ঘুমানোর আগে ব্যস্ততাহীন সময়ে এই বেসিনের উপরের আয়নাটাই নিজের চোখে নিজেকে দেখার একমাত্র সময়। তবুও কাল থেকে মনে হচ্ছে অন্যদের জিজ্ঞেস করি, “ভাই তোমার কি মনে হয়না বাথরুমের বেসিনের উপরের আয়নাটাতে নিজেকে খুব বেশি সুন্দর দেখায়?”। ভাবছেন এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে কেন এত ভাবছি? আমিও অবাক, এই ব্যাপার নিয়ে এত ভাবার কী আছে? তখনই মনে হলো মানুষ মনে হয় নিজেকেই বেশি ভালোবাসে।
যতই বলি, বাচ্চাদের জন্যে আমি, ওদের জন্যেই আমার জীবন---নিজের জন্যে ভালোবাসা মনের কোনও একটা গহীনে তো লুকিয়ে থাকেই। ফাঁক পেলেই সে ভালোলাগাটা ছিটকে বেরিয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে যায়।
নিজেকেই যদি ভালো না বাসলাম, তবে কেন জীবনটা নিয়ে এত এক্সপেরিমেন্ট করলাম এত বছর? কী করলে আরও একটু ভালো থাকা যায়, সারাক্ষণই তো এমন চিন্তায় পার করে দিলাম কতগুলো বছর! হুম, ক্যারিয়ার ছেড়েছি, নিজের ভালো লাগতোনা বলেই তো ছেড়েছি। মাস্টার্স করিনি, ইচ্ছে করেনি বলেই তো করিনি, নো এক্সকিউজ!! ঢাকা ছেড়েছি, কারণ জানতাম চট্টগ্রামে লাইফ অনেক কম্ফোর্টিং! বাচ্চা মানুষ করা সুবিধা, কর্পোরেট দাসত্বের ঝামেলা নাই, নাই অফিসের ডেইলি পাওয়ার এন্ড পলিটিক্স…ভাই রে ভাই, সব তো নিজের আরামের জন্যেই সাজিয়ে নিলাম!!
আমি নিজেকে এত ভালোবাসি, এটা আগে কখনই টের পেলাম না!
আচ্ছা টিপিক্যালি কী হয়? মানুষ যখন প্রেম করে, বলে তোমাকে আমি জানের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তাই যদি হয়, তবে তোমার জন্মদিনে ও তোমাকে গিফ্ট কেন দিলোনা সেটা নিয়ে এত মন খারাপ কিসের? নিজের বার্থডে কেন নিজের কাছেই এত ইম্পর্ট্যান্ট? আচ্ছা কেন তোমাকে “ভালোবাসি” কথাটা বলছেনা, এই নিয়ে তো এত মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
তুমি ওকে ভালোবাসলেই তো হলো।
আসলে আমাদের ভালোবাসাতেই গলদ। আমরা “পাওয়ার আশা” নিয়েই ভালবাসি। অথচ ভালোবাসা পড়া উচিৎ সম্প্রদান ক্যাটাগরিতে। একেবারে স্বত্ত্ব-ত্যাগ করে দিয়ে দেওয়া।
আমি সারাক্ষণ “এটা চাই, সেটা দাও” করতে থাকবো, তবে আমি আর অন্যকে ভালোবাসলাম কিভাবে?
আমার এক ছোটবোনের খুব মন খারাপ, কালকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে তার বয়ফ্রেন্ড অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিতে পারবেনা। মেয়েটা রীতিমত ঝগড়াঝাটি করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সকাল থেকে তাকেও বুঝাতে পারছিনা, এত হাঙ্গামা করার কী হলো এতে? ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে তার বাইরে ঘুরার ইচ্ছে ছিল, ভালো জামা পরে ভালো কোথাও খাওয়া দাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আমি তাকে বললাম- “সামনে তো উইকেন্ড, তখন এইসব করো!! মানুষ নিজেদের বিবাহবার্ষিকী উৎযাপন পর্যন্ত উইকেন্ডে করার জন্যে ডেট চেঞ্জ করে ফেলে, আর এইটা তো তোমার নিজস্ব কোনও ইভেন্ট নয়!!” সে আমার উপর খেপে-টেপে একাকার। “আপু সবাই তোমার এত আন-রোমান্টিক নয়, বুঝছো?” না ভাই, বুঝলাম না।
আমি আসলেই বুঝলাম না। মানুষের জন্যে দিবস, না দিবসের জন্যে মানুষ? পরে শুনলাম এই মেয়ের বান্ধবীরা তাকে খেপিয়েছে, বলেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে সেলিব্রেট না-করার মানে হচ্ছে ওকে ওর বয়ফ্রেন্ড ভালোবাসেনা।
কী আজব থিয়োরি, শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তারমানে ভালোবাসার মাপকাঠি গিয়ে ঠেকেছে এখন ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেশনে? আর আমরা বারবার বলতে থাকি “তোমাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি”? এর ব্যাকগ্রাউন্ডে যে কতশত “যদি” উহ্য আছে, তা কি আর বলি? ভালবাসি, যদি ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে গিফট দাও, বাইরে নিয়ে যাও, অফিস কামাই করো, বান্ধবীদেরও খাওয়াও…ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাধে কি বলি, মানুষ আসলে নিজেকেই ভালোবাসে।
ভালোবাসা দেওয়ার আগে চিন্তা করে কতটুকু ভালোবাসা “পেলো”। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।