আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"হুজুর কইছিলেন বড় একখান ওয়াজ মাহফিল আছে, জনেরে ২০০০ টেহা দিবো। হের লাইগা আইছি। আর এইখানে দেখি যুদ্ধ শুরু।’ কেমনে কী !!!

‘হুজুর কইছিলেন বড় একখান ওয়াজ মাহফিল আছে, জনেরে ২০০০টেহা দিবো। হের লাইগা আইছি। আর এইখানে দেখি যুদ্ধ শুরু। ’ এভাবে কেঁদে বলছিলেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র। চোখে মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ।

জিজ্ঞেস করা হল, কত টাকা পেয়েছে সে? তার উত্তর, “টেহা পামু কই, হুজুরেরা যে কই ভাগছে দেখবার পারিনাই। ” এভাবেই টাকার লোভ দেখিয়ে রবিবার হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীতে মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্রদের নিয়ে আসে কওমী মাদ্রাসার হুজুরেরা। কিন্তু রবিবার সারাদিন চলে তান্ডব। পুরো ঢাকা শহরজুড়ে যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় পরিণত হয়। মতিঝিল, পল্টনে চলতে থাকে হেফাজত পুলিশ সংঘর্ষ।

কমলাপুর স্টেশনে আরো ৪জনের খোঁজ মেলে মঙ্গলবার সকালে। শুনু মিয়া, ইমতিয়াজ আহমেদ, রবিউল খান, মোতালেব হোসেন নামে চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র। বয়স বেশীতে ১৪-১৫ বছর। তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে , ‘মাদ্রাসার হুজুর আঁরারে মিছা কথা কইয়ি(মাদ্রাসার হুজুর আমাদের মিথ্যা কথা বলেছে)। আঁরারে টিঁইয়া দেয়নর কথা আছিল(আমাদের টাকা দেবার কথা ছিল)।

রাতুয়া যেঁত্তে বৃষ্টির নান গুলাগুলি শুরু হইয়ে, বুম মারের হেঁত্তে কোনো হুজুররে ন দেখি(রাতে যখন বৃষ্টির মত গোলাগুলি শুরু হয়েছে, বোম মারা শুরু হয়েছে তখন কোনো হুজুরকে দেখিনি)। আঁরা দুড়িয়েরে ধাই হেডেত্তুন(আমরা দৌঁড়ে পালিয়েছি ওখান থেকে)। দুইজন কালা পুলিশ (র‍্যাব) আরারে ১০০০টিইয়া দিইয়ি যাইবাগুল্লাই(দুইজন র‍্যাব আমাদের ১০০০টাকা দিয়েছে চলে যাওয়ার জন্য)। অহন থিয়ায় রই, ট্রেন আইলি যাইয়ুমগুই(এখন দাঁড়িয়ে আছি, ট্রেন আসলেই চলে যাবো)। এই জনমত আর আইসতাম ন ঢাহা শহরত(এই জন্মে আর আসবোনা ঢাকা শহরে)।

ইমতিয়াজ বলে, ‘যেঁত্তে মাগরীবর আযানর ফরে এক এক হুজুর বক্তিতা দের হেঁত্তে আর পাশত্তুন কতিক্কিন ফুয়া উডিয়েরে পুলিশ মাইরতি গেইয়ি(যখন মাগরীবের আযানের পর এক একজন হুজুর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন পাশ থেকে কতগুলো ছেলে উঠে পুলিশ মারতে গিয়েছে)। এরপরদি ছাইদ্দি রাইত হইতু হইতু হুজুর বেগ যারগুই(এরপর দেখছি রাত হতে হতে হুজুর সবাই চলে যাচ্ছে)। আঁরা বই থাইক্কি(আমরা বসে রইলাম)। নাউজুবিল্লাহ আজুয়া হুনিজ্জি আরার মইচ্চদ’র মইধ্যি অইন দিইয়ি, কুরান পুড়িয়েরে ছাই গরি ফেলাইয়ি। (আজকে শুনছি আমাদে মসজিদের মধ্যে আগুন দিয়েছে, কোরআন পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে)।

নাউজুবিল্লাহ। আঁরার আল্লাহর ঘরত অইন দিইয়ে। (আমাদের আল্লাহর ঘরে আগুন দিয়েছে!) নাউজুবিল্লাহ। ইতারা বলে আঁরার ইসলামর হেফাজত গইরত আইস্যি(ওরা বলে আমাদের ইসলাম হেফাজত করতে এসেছে)। ইতারা বেক জালিম।

(ওরা সবাই জালিম) আর জিন্দেগিত মাদ্রাসাত পইড়তাম যাইতাম ন। (আর জীবনেও মাদ্রাসায় পড়তে যাবোনা)। ঢাহা শহরতও আইসতাম ন(ঢাকা শহরেও আসবোনা)। ’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবে দেশের শত শত কওমি মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও মতিঝিলের সমাবেশে আনা হয়। হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মাদ্রাসাছাত্রেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে।

অনেকের মা-বাবাও জানেন না তাঁদের সন্তানদের ঢাকায় হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা। অনেক মাদ্রাসাছাত্র জানায়, আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে যারা মাঠে নামছে, তাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দেওয়া হবে- এমন কথা বলেই শিক্ষকরা তাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচীতে অংশ নিতে। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে, কোনো ধরনের হট্টগোল হবে না- এমন আশ্বাস দিয়ে দুই দিন আগেই ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় আনা হয় তাদের। রবিবার ফজরের নামাজ পড়েই ঢাকা প্রবেশের ৬টি পভিমুখেই অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয় তারা। দুপুরে সবাই মতিঝিলের সমাবেশে অংশ নেয়।

পরে রাতে আতঙ্ক আর ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। বাংলারিপোর্ট/বিডি. কেমনে কী !!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।