আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনপুরায় মন পোড়ে : এ ট্রাভেলগ অন মনপুরা আইল্যান্ড ও ছবি ব্লগ

মনপুরা যাবো বলে সামুর ব্লগে পোষ্ট দিলাম দুবার। একবারো যেতে পারলাম না। একবার লঞ্চ ধরতে পারিনি আরেকবার বউ বাগড়া দিলো। এরি মাঝে দুচারজন ব্লগে এসে প্রায়ই জানত চায় সে-ভাই মনপুরা টুর কেমন দিলেন? আমি লজ্জায় দুটো পোষ্টই ড্রাফট করে ফেল্লাম। তবে এবার অনেকটা জেদ করেই বের হলাম যে যাবোই যাবো মনপুরা।

যাত্রা হলো শুরু থাই এয়ারের টিজি'র একটি ফ্লাইট ছাড়ে ব্যাংককে সাড়ে ১২ টায়। আমিও বাসা থেকে নেমে বাসে উঠলাম একই টাইমে। টিজির ফ্লাইট ব্যাংকক গিয়ে বসে আছে আর আমি খাবি খাচ্ছি জগন্নাথ কলেজের সামনে-এমনি জ্যাম। শেষমেষ সাড়ে ৪ টার দিকে পৌছলাম সদরঘাট। হাজারো জনতা ঠেলেঠুলে খুজে বের কললাম টিপু-৫ লঞ্চটি।

ঠাই নাই, ঠাই নাই লঞ্চে উঠেই আক্কেল গুড়ুম। একটা ফোটা জায়গা নাই। পরপর ৩ দিন বন্ধ পেয়ে সব দক্ষিনারা ছুটে চলেছে দেশের পানে। কেবিন ফেল মেরে ডেক তল্লাশী শুরু করলাম, তা সেখানেও জায়গা নেই। শেষে একটি ঘের দেয়া বিশেষ জায়গা পেলাম যেখানটায় ভীড় একটু পাতলা।

আমি ব্যাগটা রেখে বসতেই একজন দৌড়ে এলো- ভাই, এ জায়গাটা আমাদের রিজার্ভ করা। আমি না উঠেই জবাব দিলাম- ডেক এর জায়গা রিজার্ভ করার দিন চলে গেছে বহুত আগে। এখানে নিয়ম হলো-আগে আসলে আগে শোবেন। কিন্তু সে ঘ্যান ঘ্যান করতেই লাগলো। আমিও কথায় কানি না দিয়ে গ্যাট হয়ে বসে রইলাম।

যাহা ৪২ তাহাই ৪৩ সেই ৪২ জন যাদের আমি ৪৩ করেছিলাম সেই লোক গিয়ে দলনেতাকে নিয়ে আসলো এবং একই বয়ান। বলে- আমরা ৪২ জন একসাথে (ফেসবুকের কি একটা ট্রাভেল গ্রুপ)। এবার আমি পাঞ্চ কষালাম- এখানে জায়গা ৭০ জনের আর আপনারা ৪২ জন দখল করছেন। এই কথা মালিক জানলে ভাড়া ডাবল করে আদায় করবে। আর ৪২ জন যা ৪৩ জনও তাই।

তাই ভাই, চুপ করে থাকেন। দলনেতা হতাশ হয়ে উঠে গেলেন। এবার আমার চিন্তা হলো রাতে থাকবো কি করে এই ঠান্ডায়। আমি কেবিন পাবো ভেবে কিছু আনিনি। এদের যা অবস্থা আমাকে কম্বলের ভাগ দেয়া দুরে থাক পারলে ফ্যান ছেড়ে দেবে।

তাই ব্যাগটায় জায়গায় রেখে একটা আনসারকে বলে বাইরে গেলাম। ১০০ টাকা দিয়ে একটি পাটি আর ২৫০ টাকা দিয়ে একটা কম্বল কিনে ফেল্লাম (হে..হে..তবু আমার ৪০০ টাকা বাচলো। কারন কেবিন পেলে ভাড়া গুনতে হতো অনেক বেশী। পাটিটা ডেকে বিছেয়ে কম্বলটা পেতে আমার জায়গা পোক্ত করে নিলাম। রাত ১০ টার দিকে খাবার খেয়ে ঘুম।

ঐ দেখা যায় মনপুরা সকাল ৬ টার দিকে ঘুম ভাংলো। লঞ্চের সামনে চলে এলাম। লঞ্চ তখন সবে মনপুরার আগের ষ্টেশন তজুমুদ্দিন এর ঘাট থেকে ছাড়লো। অকুল পাথার কি জিনিষ এবার বুঝলাম। লঞ্চ এক পর্যায়ে এমন এক জায়গায় আসলো যে চারদিকে পানি ছাড়া কিছু নেই।

নদীও এত বড় হতে পারে আমার ধারনা ছিলোনা। ৭ টার সময় লঞ্চ থামলো মনপুরার রামনেওয়াজ ঘাট এ। আমি লঞ্চ থেকে নেমে ভাল করে দেখলাম এতদিনের আরাধ্য মনপুরাকে। একটু সামনে গিয়েই একটা মোটরসাইকেল আরোহীকে ভাড়া করে নিলাম। কোন দাম করতে হলোনা।

বল্লো- বস, খুশী হয়ে যা দেবেন তাই দিয়েন। ওকে নিয়ে সবার আগে গেলাম উপজেলা চত্বরে। খাবার আগে, মারামারির শেষে কোন নুতন জায়গায় আমি বেড়াতে গেলেই সবার আগে যে কথাটি মনে হয় তা হলো- দুপুর বেলা খামু কি? এখানেও তাই হলো। হোটেলের তরকারী খুব একটা সুবিধার মনে হলোনা। ওই হোটেলে আমার মতো আরো ঢাকার আরো ৪ ফ্যাকলু দেখলাম চিন্তিত ভাবে দাড়িয়ে আছে কাধে ব্যাগ নিয়ে।

আমি খাতির জমিয়ে বল্লাম চলেন, আমরা মাছ মুরগি কিনে দেই ওরা রাধুক। ওরাও রাজী হয়ে গেলো। আমি পাশের গৃহস্থ বাড়ি থেকে একটা বড় মুরগী (আহা কতদিন যে বাড়ির পালা মুরগী খাইনা) আর ঘাটে দেখে আসা তাজা নদীর পাংগাশ মাছ কিনলাম ১ কেজি। তারপর সেই হোটেলে দিলাম রান্না করার জন্য। সাথে সীমের একটা সব্জি আর মোটা চালের ভাত।

যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। আহা মুরগীতো নয় যেনো অমৃত যাই হোক ৩ টা পর্যন্ত মনপুরা ঘুরে গেলাম তজুমুদ্দিন। সেখান থেকে লঞ্চে করে আবার ঢাকা। যেভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে টিপু-৫ / পানামা নামে একটি লঞ্চ ছেড়ে যায় সন্ধে সাড়ে ৫ টার সময়। এটি মনপুরা হয়ে হাতিয়ে যায়।

মনপুরা পৌছাবে সকাল ৭ টার সময়। ভাড়া- ২০০ টাকা (ডেক), ৮০০/১৫০০ (কেবিন), ফোন : পানামা ০১৭৪০৯৫১৭২০। টিপুর নম্বর এখান থেকেই নিতে পারবেন কারন মালিক একজনই। কোন কারনে এটা মিস করলে সাড়ে ছয়টার সময় ছেড়ে যাওয়া ভোলার চরফ্যাশনগামী টিপু-৪/ফারহান লঞ্চে উঠে পড়বেন। এতে উঠে তজুমুদ্দিন এ নেমে পড়বেন ভোর ৪ টার দিকে।

তারপর ট্রলারে/লঞ্চে ১ ঘন্টার পথ মনপুরা যাবেন। বোনাস হবে তজুমুদ্দিন র্দশন। কি করে ঘুরবেন : বেষ্ট সল্যুশন একটা মোটারসাইকেল ভাড়গা করা। চালকই সব ঘুরে দেখাবেন আপনাকে। সারাদিনের জন্য হাজার দেড়েক টাকা নেবে।

আমি আমার মোটর সাইকেল ড্রাইভারের নম্বর দিলাম। নাম নয়ন, ফোন- ০১৭৬-৪৬৮৬৭৮২। কোথায় থাকবেন : ক্যাম্পিং করার ন্য আদর্শ জায়গা মনপুরঅ। চোর ডাকাতের বালাই নেই। আছে আদিগন্ত কোলা ভুমি।

একটা ভালো জায়গা দেখে তাবু ফেলে নিন। পড়শীদের সাথে রফা করে রান্নার আয়োজন করতে পারবেন। আর যাদের তাবু নেই তারা নীচের দুটো হোটেলে থাকতে পারেন (সাধারন মান) - হোটেল দ্বীপ : ০১৭১-৩৯৬৫১০৬ (ভাড়া ৭০/১৪০ টাকা) - প্রেস ক্লাব গেষ্ট হাউস : ০১৯১-৩৯২৭৭০৬ (ভাড়া ৫০ টাকা) ফেরার দিন : সময় থাকলে সকাল ১০ টার লঞ্চে করে তজুমুদ্দিন চলে আসুন। সারা দিন ঘুরুন। সন্ধ্যায় টিপু ৪/ফারহান লঞ্চে ফিরে আসুন।

কথাতো অনেক হলো এবার মনপুরা দেখাই। মনপুরার ক্যানভাস মনপুরার প্রকৃতি মনপুরার পথঘাট বাসন ভাঙ্গা দ্বীপ তিনি দুটি দরিয়াকে পাশাপাশি প্রবাহিত করেছেন। এদের মাঝে একে দিয়েছেন সীমারেখা যা তারা অতিক্রম করেনা (সুরা আর রাহমান, আয়াত ১৯-২০) মাছ ধরার ট্রলার হোটেল দ্বীপের একটি রুম নদীর ছোট পাংগাস। ওখানেই নিলামে দর উঠেছে ২০৯ টাকা কেজি। এর কিছু অংশ গেছে আমাদের উদরে।

হাজিরহাট ল্যান্ডিং ষ্টেশন ফান্দে পরিয়া বগা থুক্কু ট্রলার কান্দেরে..(জোয়ারে এসেছিল, টাইমলি যেতে পারেনি। পরের জোয়ারের অপেক্ষায়) বাচ্চু চৌধুরীর খামারবাড়ির সামনে বায়লা ১২০....বায়লা ১২০....বায়লা ১২০ কেউ নাই? বারি... (চলছে মাছের নিলাম) ষ্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এক ১৫০ জন এসেছিলো পুরো লঞ্চ ভাড়া নিয়ে তজুমুদ্দিন, সে আরেক কাহিনী। আরেকদিন বলবো। আমার মোটর সাইকেল সাথী নয়ন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.