মুক্ত কর ভয়/ আপনা মাঝে শক্তি ধর/ নিজেরে কর জয়।
আবারও কপচানি। বুঝতাছি না, কপচানি ঠিক হইতাছে না। কই যাই। পুরানগোরে ডাইকা ফিরান যাইতাছে না।
সবাই চইলা যাইতাছে, আর ৩-৪ মাসে ১টা পোস্ট দেওয়া পাব্লিক বিশাল বিশাল ক্যাতা কইতাছে। কই যাই!!
উপরের কথাগুলা কাউরে উদ্দেশ্য কইরা কই নাই কিন্তু!! এখন, আসল ঘটনায় যাই।
এতদিন চিল্লা-চিল্লি করলাম, মনপুরা দেখা হয়নাই বলে। কাউকে সঙ্গে পাচ্ছিলাম না, আবার একলা যেতেও মন চাইছিল না। তাই, দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাইলাম হিমালয় আর শম্পা'র লেখা থেকে।
কাল নিজেই দেখে এলাম অবশেষে।
আগে দুই দিন গিয়ে ফিরে আসছি, তাই কাল ঠিক করলাম শেষ শো দেখব। বলাকায় রাত ৯.০০টার। তাড়াতাড়ি যাই। ঠিক ৭টায় পৌঁছে জানলাম টিকেট দেওয়া হবে আধঘন্টা আগে।
কাজেই দেড়ঘন্টার ঘোরাঘুরি নিউমার্কেটে!!
সিনেমা শুরু হয় ৯টায়। ২ ঘন্টা ৩২ মিনিটের ছবি।
প্রথম থেকেই আমরা ৪জন খুব হাসাহাসি মুডে!! এটা দেখে হাসি, সোনাইকে যথন মনপুরা'য় নামিয়ে দিয়ে গাজী সাহেব ইঞ্জিন লাগানো নৌকা নিয়ে ফিরছেন তখন নৌকায় আরও দু'টি প্রপেলার লাগিয়ে কিভাবে এটিকে না ঘুরিয়ে আড়াআড়ি অবস্থায়ও চালানো যায়; সেটি নিয়ে গবেষণা, সোনাই'র গেঞ্জি দেখে হাসি, পরী'র শাড়ি পড়ার ঢং দেখে কিঞ্চিৎ বাংলা সিনেমার প্রতি ইংগিত করে হাসি!!
কিন্তু ঠিক সোয়া ১১টার দিকে যথন পরীকে মিথ্যে করে সোনাই'র পরিণতির কথা জানানো হয় তখন থেকেই আমরা নিশ্চুপ। একদৃষ্টে দেখে গেলাম অসহায় আত্মসমর্পন ভাগ্যের হাতে কিংবা পরিচালকের হাতে।
সিনেমা শেষে বেরিয়ে এক বন্ধুর আমাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য, "তোর সাথে আর কখনো সিনামা দেখতে আসব না।
১১০/- খরচ করে মুড অফ করার কোন মানে আছে?" বাকি দু’জনও দেখি চুপচাপ।
এখন মনপুরা নিয়ে কিছু কথা বলি। আমি মনপুরা দেখতে গিয়েছি মূলত ক্যামেরার অসামান্য কাজ দেখতে। সেদিক থেকে হিসেব করলে আমার উদ্দেশ্য ষোলআনা সফল!!
কয়েকটি দৃশ্য বলি..
#সোনাইকে যখন প্রথমবারের মত মনপুরা’য় নামিয়ে দেয়া হল, তখন উপর থেকে শট নেওয়া। একই রকম আর একটি শট নেওয়া হয় একেবারে শেষ দৃশ্যে; যখন সোনাই একা নৌকা নিয়ে ভেসে যাচ্ছে।
#মনপুরায় ঘর বাঁধছে সোনাই। নিচে থেকে শট।
#পরী’র সাথে সোনাই’র দ্বিতীয় স্বাক্ষাৎ। পরী নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে আর সোনাই পেছন পেছন হাঁটছে।
#যাও পাখি বল তারে গানটি যদি আলাদা করে মিউজিক ভিডিও করা হত, এটি নি:সন্দেহে একটি সেরা ভিডিও হত।
পুরো গানটিতে আলোর কাজ অসাধারণ।
#এই গানটি শেষে পরীকে পৌঁছে দিতে সোনাই যখন নৌকা বাইছিল, তখন পেছনে আকাশ রেখে সোনাই আর পরীকে নিয়ে যে দৃশ্য। কিন্তু, এখানে একটি প্রশ্ন আছে, একই সাথে আকাশ আর মানুষ দুই অবজেক্টকে ফোকাস করল কিভাবে?
#আমার সোনার ময়না পাখি গানটির শেষে পরী’র ছুটে চলা.. লং শট।
#একই কথা বলা যায়, শেষ গান সোনাই হায়, হায় রে গানের ক্ষেত্রেও। অসাধারণ ক্যামেরার কাজ।
#জেলে বন্দী সোনাই বসে আছে। জেলের একটুকরো কুঠুরি দিয়ে বাইরে থেকে আলো এসে ঠিকরে পড়ছে সোনাই’র পায়ের কাছে।
চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু’কে আন্তরিক অভিনন্দন এই কাজের জন্য।
যে কয়েকটি দৃশ্য মনে দাগ কাটবেই..
#সোনাই’র ছাগল ধরার দৃশ্য,
#দুপুরবেলায় ঘরে পরী-সোনাই’র হাতে হাতে ছোঁয়া-ছুঁয়ি খেলা,
#বিবাহিত স্ত্রীকে কোলে তুলে নিয়ে গাজীর ছেলের পাগলামি কিংবা,
#স্ত্রী’র কাছে বকা খেয়ে তার দূরে বসে কান্না করা,
#মশাল হাতে রাতে একাকী পরীর সোনাই’র জন্য অপেক্ষা।
সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে পরিচিত গান মনে হয় মনপুরা’র-ই।
সিনেমা দেখার আগে গানগুলোর যে রকম দৃশ্যায়ন যেমন ভেবেছিলাম, তেমনটা না হলেও যা হয়েছে সেটা অনেক ভাল; একথা অনস্বীকার্য।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সম্পর্কে এটুকু বলা যেতে পারে.. সোনাই চরিত্রে চঞ্চলের চঞ্চলতা, পরীর আবগে প্রদর্শনে মিলি’র পারদর্শীতা, পাগল চরিত্রে শিমুলের অল্প সময়ের উপস্থিতি তাদের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। আর পরী’র পিতার চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু যথারীতি অনবদ্য। তবে মামুনুর রশীদ, নাসিমা রহমান তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে মাত্র ৩-৪ মিনিটের একটি অতিথি চরিত্রে দিলারা জামান তার বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়ে দিলেন!!
পুরো ছবির দূর্বল দিক হচ্ছে এর ধীর গতি।
মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল কাহিনী ঝুলে যাচ্ছে। তবে এটি সাময়িক।
সিনেমার একটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষী দিক ছিল পরীর পোশাক!! প্রথম অংশের পোশাক দেখে কিছুটা সচরাচর বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাদের মত লাগে। আবার দ্বিতীয় অংশে তার পোশাকে কিছুটা আভিজাত্য পরিলক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে পরিচালক কি ধনী-দরিদ্রের পোশাক পরিধানের যে পার্থক্য সেটাকে ইংগিত করেছেন কিনা, ঠিক পরিষ্কার না।
ছবিতে যে ব্যাপারটি দৃষ্টিকটু, তা হল একটি বিখ্যাত বাক্যের বিকৃত ব্যবহার। হয়ত, পরিচালক এর মাধ্যমে আমাদের যে রোজকার কথ্য ভাষা তুলে আনতে চেয়েছেন। কিন্তু, এ ধরনের বক্তব্য পরিহার করলেই মনে হয় ভাল হত।
পরিশেষে বলা যায়, এই সিনেমায় পরিচালক যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গিয়াসউদ্দীনের অন্যান্য কাজ দেখলে যেমন বোঝা যায়, এটা তার।
ঠিক একইভাবে এখানেও এমন একটি দৃশ্য আছে, যা আপাত দৃষ্টিতে অর্থহীন, কিন্তু গিয়াসউদ্দীনীয়!!
আমার দুইবন্ধুর কথা দিয়ে শেষ করি..
- বলতো, এই সিনামা কি অফ ট্র্যাকের?
: না, এইটাতো ভাবের সিনামা না। এইখানে নাচ-গান সবই আছে।
- তাইলে এর সাথে আর বাংলা চটুল সিনেমাগুলার তফাৎ?
: দেখস নাই, এইখানে পুলিশ ২বার আসছে!!
- আরে ধূর!!
: হ, আরো আছে! ঐগুলায় পুলিশ আসে সবশেষে। আর এইখানে পুলিশ আসছে মাঝে!!!
ছবিগুলো এখান থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।