আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধূমপান ও তামাক, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড এবং কোমল পানীয় বর্জনের মাধ্যমে ক্যান্সার রোধ করা সম্ভব

“আসুন সকলে একসাথে প্রতিরোধ করি ক্যান্সার” স্লোগান নিয়ে সারাবিশ্বে ৪ ফেব্রুয়ারী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার আজও মানুষের কাছে মরণব্যাধি হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র তথ্য অনুসারে ২০০৫ সালেই সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭৬ লক্ষ মানুষ মারা যায়। তাই ক্রমবর্ধমান মৃত্যু রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের কর্মপরিকল্পণা গ্রহনকল্পে ২০০৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলণে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক একটি নীতি প্রণয়ন করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ মারা যাবে।

যার ৬০%-ই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও মধ্য আয়ের দেশের জনগোষ্ঠী। এর মধ্যে মুখ গহবরের ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সারসহ ব্রেস্ট ক্যান্সার, বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে নিরাময় করা সম্ভব। তব্ওু এটি এমন একটি রোগ, যে রোগের চিকিৎসা জটিল ও ব্যায়বহুল। তাই ক্যান্সার চিকিৎসার চেয়ে এর প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরী। এছাড়াও মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে দায়ী করা হয় তার মধ্যে তামাকের (বিড়ি, সিগারেট, পান, জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা) ব্যবহার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় গ্রহন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর বলে গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যে নিকোটিন, ডিডিটি, কার্বন মনোক্সাইড, টার বা আলকাতরা, আর্সেনিক, মিথানল, ন্যাপথালিন, বেনজোপাইরিন, সায়ানাইড, এমোনিয়া, অক্সিডেন্টসহ ৪০০০ এর বেশী ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৪৩টি সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টির সাথে জড়িত। তামাকের ভয়াবহতার কারনে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তাই তামাকজনিত ক্যান্সার প্রতিরোধে ধূমপায়ীদের পাশাপাশি অধূমপায়ীদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ উন্নয়নপূর্বক এর সংশোধন একটি অপরিহার্য বিষয়। কোমল পানীয়, জাঙ্কফুড এবং ফাস্টফুড ক্যান্সার ও অতিরিক্ত মোটা হওয়ার অন্যতম কারন।

কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই ধরনের খাদ্যদ্রব্য গ্রহনের অভ্যাস ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল পণ্যের নিত্য নতুন বিজ্ঞাপন মানুষকে এ সকল খাদ্যদ্রব্য গ্রহনে উৎসাহী করছে। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এ সকল খাদ্যের ব্যবহার। যা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির সম্মুখীন করছে। কেননা প্রতিনিয়ত বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপন মানুষকে এ সকল খাদ্যদ্রব্য গ্রহনের লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করছে।

সাধারনত কোমল পানীয় পানি, সুক্রজ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বনিক এসিড , ফসফরিক এসিড, এ্যাসপার্টেম কৃত্রিম রং ও সংরক্ষক (কৃত্রিম রং ও সংরক্ষক কয়েক ডজন কেমিকেল উপাদানে তৈরি হয়) সমন্বয়ে তৈরি হয় যদিও এ সংখ্যা সীমাবদ্ধ নয়। এছাড়াও ফাস্টফুডে বাসি-পঁচা, ক্যামিকেল ও বিষাক্ত রং মিশ্রিত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কার্সিনোজেনিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী তামাক, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় বর্জনের মাধ্যমেই দূরারোগ্য ক্যান্সারের প্রতিরোধ করা সহজতর। সচেতনতা, কর বৃদ্ধি ও আইনী পদক্ষেপের মতো সমন্বিত কার্যμম এ সকল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তামাকের ক্ষতি থেকে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা, সিগার, খৈনী ইত্যাদিকে তামাকের সংজ্ঞাভূক্ত করা সহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের ৫০% অংশে সচিত্র সতর্কবাণীর বিধান, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ ও তামাকের উপর অধিক হারে কর বৃদ্ধির নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন।

সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ও অংশগ্রহনই পারে এ ধরনের ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। তাই আসুন ক্যান্সার রোধে সকলে একসাথে সচেতন হই এবং কাছের মানুষকে এই ক্ষতি থেকে রক্ষায় কার্যকর অংশগ্রহন করি। অর্থ দিয়ে মৃত্যু না কিনে পুষ্টিকর প্রাকৃতিক খাদ্য কিনে পরিবারের অপুষ্টি দূর করি। সোচ্চার হই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ সংশোধনের জন্য। এস.এম.সৈকত মানবাধিকারকর্মী ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.