"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "
'আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনু' রচিত 'ইসলামী জীবন পদ্ধতি' নামক বই থেকে সংগৃহিত
=========
ধূমপান করার প্রচলন যদিও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে ছিলনা, তবে ইসলাম একটি সাধারণ বিধান প্রণয়ন করেছে যে, যেসব বস্তু স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর বা পাশের লোকের জন্য কষ্টদায়ক কিংবা যার দ্বারা ধন-সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয় তা হারাম।
ধূমপান হারাম হওয়ার দলিলসমূহ নিম্নরূপঃ
মহান আল্লাহ বলেন, "...তিনি তাদের জন্য পাক জিনিস সমূহ হালাল করেন, আর অপবিত্র জিনিস সমূহ হারাম করেন। ..." (সূরা আ'রাফঃ আয়াত ১৫৭)
মহান আল্লাহর ইরশাদ হচ্ছে, "এবং তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসে পতিত করো না। " (সূরা বাকারাঃ আয়াত ১৯৫) ধূমপান ক্যান্সার, যক্ষা প্রভৃতির মত ধ্বংসাত্মক রোগের কারণ।
আরো ইরশাদ হচ্ছে, "তোমরা নিজে নিজেকে হত্যা করো না। " (সূরা নিসাঃ আয়াত ২৯) ধূমপান নিজে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়।
মদ্যপানের ক্ষতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, "এর গুনাহ, লাভের (উপকারের) চেয়ে অনেক বড়। " (সূরা আল-বাকারাঃ আয়াত ২১৯) তেমনি ধূমপানের মধ্যেও উপকার পাওয়া তো দূরের কথা বরং এর পুরোটাই ক্ষতিকারক।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, "তোমরা অপব্যয় অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী লোকেরা শয়তানের ভাই।
" (সূরা বনী ইসরাইলঃ আয়াত ২৬-২৭) আর ধূমপান করার অর্থই হচ্ছে অপচয় (খরচ), যা শয়তানী কাজের অন্তর্গত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'তোমরা নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না এবং অপরের ক্ষতি সাধন করো না। ' (মুসনাদ আহমদ - সহীহ্ হাদীস) আর ধূমপান এমনই একটা বস্তু যা নিজের ক্ষতির সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী লোকের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায় এবং ধন-সম্পদেরও অপচয় হয়।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ 'আল্লাহ তোমাদের জন্য সম্পদ বিনষ্ট করা হারাম করেছেন। ' - (বুখারী ও মুসলিম) আর ধূমপান সম্পদ ধ্বংসকারী যা আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন না।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ 'ভাল ও মন্দ সাথীর উদাহরণ এরূপ যেমন আতর বিক্রয়কারী এবং কামারশালার হাপরে ফুঁকদানকারী ব্যক্তি। ' - (বুখারী ও মুসলিম) আর ধূমপানকারীও মন্দসাথী যে আগুনে ফুঁক দিয়ে থাকে।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করা হবে কিন্তু পাপকার্য প্রচারকারীকে মাফ করা হবে না। আর ধূমপানকারী হচ্ছে গুনাহকে প্রকাশকারী অতএব তার ক্ষমা নেই।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ 'যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন অথবা পিয়াজ খাবে, সে যেন আমাদের থেকে এবং মসজিদ থেকে আলাদা হয়ে নিজ ঘরেই বসে থাকে।
' - (বুখারী ও মুসলিম) অথচ সিগারেট বা ধূমপানের গন্ধ রসুন ও পিয়াজের থেকে অধিকতর দুর্গন্ধময়।
অনেক আলেম ও বিদ্যানগণ ধূমপান হারাম বলেছেন আর যারা হারাম বলেননি তারা আসলে ধূমপানের নতুন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদি সম্বন্ধে অনবহিত।
একটু ভেবে দেখুন, যদি কেউ একটি টাকা জ্বালিয়ে দেয় তবে আমরা তাকে বলবো এই লোকটি পাগল হয়ে গেছে। তাহলে শত শত টাকাকে ধূমপানের জন্য জ্বালিয়ে দেয়াকে কি বলতে পারি? অথচ এর দ্বারা আর্থিক ও শারিরীক ক্ষতির সাথে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিরও কষ্ট হয়ে থাকে। অতএব হুক্কা এবং সিগারেট বিড়ি দ্বারা লোকদের কষ্ট দেয়া এবং পবিত্র ও মুক্ত বায়ুকে দূষিত করা সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে কিভাবে ঠিক হতে পারে।
আর মনে রাখবেন যে, বায়ুকে দূষিত করা পানিকে দূষিত করারই নামান্তর। আমরা যদি কোন ধূমপানকারীকে জিজ্ঞেস করি যে, কিয়ামতের দিন সিগারেট, হুক্কা ও তামাক বিড়ি নেকীর পাল্লায় রাখা হবে না গুনাহের পাল্লায়? তখন নিশ্চয় সে জবাব দিবে যে, গুনাহের পাল্লায়।
ধূমপান বর্জন করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চান, যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা করে, আল্লাহ তার সাহায্য করেন। আর ধৈর্য্য ধারণ করুন কেননা আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। রাতের অন্ধকারে এবং আযান ও নামাযের পরে এই বলে দু'আ করুনঃ হে আল্লাহ ! আমাদের অন্তরে ধূমপানের প্রতি ঘৃনা (বিতৃঞ্চা) সৃষ্টি করে দিন এবং এটা খারাপ মনে করে আমাদেরকে এ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক প্রদান করুন।
(আমীন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।