আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেডিমেড বয়ান!!

নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক ফাহিমের কাছে এই সুসংবাদটা না দিলেই নয়। দেশে মনে হয় আবার সুদিন ফিরিয়া আসিতেছে। শান্তি ফিরিয়া আসিবে অচিরেই। না না,স্বপনে নয়,বাস্তবেই আছি,জাগ্রত রহিয়াছি আমি। তবে একটাই ব্যাপার, ফাহিমকে জানানো দরকার।

দেখি না তার পতিক্রিয়া কি হয়?বেচারা সুদিন দেখিবার আশায় বসিয়া রহিয়াছে কতদিন যাবৎ! তাহার কাছে গিয়া বলিলাম,দেখ দেখ দেশে বোধ হয় আবার সুদিন ফিরিয়া আসিবে। ফাহিম চেয়ারে বসিয়া যতদূর সম্ভব হেলান দিয়া শান্তি কত প্রকার হইতে পারে তাহার প্রকারভেদ করিতেছিল। আমার এই কথায় সে এক ফোটাও ভ্রুক্ষেপ করিল না। তাহার চেয়ার দোলানির ডিগ্রী এতটুকুও পরিবর্তন করিল না। অস্বাভাবিক নিস্পৃহ কন্ঠে বলিল,এই ভাবিবার কারণ...? দেখিতেছিস না,আমাদের বড় কর্তারা বলিয়াছেন,ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম।

সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ ছড়াইয়া দিতে পারিলেই সমস্ত দুর্নীতি বন্ধ হইয়া যাইবে। অনিয়ম দূর হইয়া যাইবে। কি সুন্দর অনুভব! তাই না? বলিয়াছে কোথায়?নিশচয়ই কোন সিরাত মাহফিলে। তাই না? হ্যা, সিরাত মাহফিলে। কিন্তু তুই জানলি কীভাবে?পত্রিকাতো এইমাত্র হাতে পাইলাম আমি।

তুই তো টিভিও দেখিস না। তাহা হইলে...? ফাহিম আমার কথার কোন জবাব দিল না। বরং পরম আমোদে চক্ষু মুদিয়া বলিল,বল এই বয়ান দেখিয়াই ছুটিয়া আসিয়াছিস? না আর কোন কারণ রহিয়াছে? না না ,শুধু সেইটাই নয়। আরো রহিয়াছে। যেমন এই যে,খাদ্যমন্ত্রী বলিতেছেন, তোমরা হাদীসের উপর আমল কর।

হাদীসে আসিয়াছে,তোমরা পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা ভরাও। এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা ভরাও। আর এক তৃতীয়াংশ পানি খালি রাখ। হাদীস অন্যযায়ী আমল! বলিতেছেন আমাদের বড়রা! কি বৈপ্লবিক ব্যাপার,তাই না? শোন, এ বয়ানটা দুই জায়গায় হইতে পারে। ফাহিমের বয়ান এই বলিয়াই শুরু হইল।

এক, কোন ইসলামি অর্গানাইজেশন কর্তৃক আয়োজিত খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনার অথবা খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোন সিরাত বা মিলাদ মাহফিলে। দেখিলাম,ব্যাটার কথা একটুকুও বৃথা যায় নাই। তাহার পর...?ফাহিম নির্বিকার চিত্তে জানিতে চাহিল। আমি পেপারের হেডিং খুঁজিয়া আরেকখানা উদ্ধৃতি বাহির করিলাম,দেশের যুবকদের দেশ রক্ষায় কাজে আগাইয়া আসিতে হইবে। নিজের জীবন বাজি রাখিয়া আমরা সবাই দেশ রক্ষার দীপ্ত শপথে আগাইয়া যাইব।

শোন,ইহা নিশ্চয়ই সরকারের উচ্চপদস্থ কোন ব্যাক্তি প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোন অনুষ্ঠানে বলিয়াছেন। এইবার আমি তাহার গায়েবী খবরের ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তিত হইয়া পড়িলাম। বলিলাম,তুই কি আগেই খবর শুনিয়াছিস? না। তাহা হইলে তুই জানিলি কি করিয়া ? তুই কি জ্যোতিষি? নাউজুবিল্লাহ! জ্যোতিষিপনা আমি করি না। যাদু জানিস? আসতাগফিরুল্লাহ।

তাহা হইলে? এক প্রকার ক্ষেপিয়াই গেলাম আমি। রাখ। ক্ষেপিবার কোন কারণ নাই। কারণ একটু চেষ্টা করিলে তুইও হিসাব করিয়া বাহির করিতে পারিবি। কেমন? দেখ,আমদের মন্ত্রী মিনিস্টার মহোদয়ের মধ্যে কয়েকজনেরইবা সেই সময় বা যোগ্যতা আছে যে, তাহারা নিজেরা বক্তৃতা নিজেই লিখিয়া বলিবেন।

তাহাদের বক্তৃতা তাহার লিখেন না! মাথা কাহারটা খারাপ? তোরখানি নাকি তাহাদের খানি? মানে? এতসব সচিব আর সেক্রেটারী কী করিতে রহিয়াছে? আচ্ছা এরপর কী হইয়াছে বল। ইহারাই তো মন্ত্রী মিনিস্টারদের বক্তৃতা লিখিয়া রেডি করিয়া রাখেন। যেই আমলই আসুক না কেন,যে মন্ত্রীই তার ঘাড়ে চাপুক না কেন অনুষ্ঠানে যাইবার পূর্বে অনুষ্ঠান বুঝিয়া তিনি একেকখনা বক্তৃতা ধরাইয়া দেন। মন্ত্রী বা লাট সাহেবরা গিয়া ইয়হাই বলিয়া আসে। মানুষ হাততালি দেয়।

এই আর কি?ইহাতে ইসলামের কোন প্রশংশা ,নৈতিকতার কোন ব্যাপার তাহারা চিন্তাই করিতে পারে না। অন্তরে অনুভব তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু.........। কোন কিন্তু নাই। কিন্তুর কোন অবকাশই নাই।

কারণ বরাবর এই রকমই হইয়া আসিতেছে। ইসলামী অনুষ্ঠানে গেলে ইহারা বলিবে ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইহার মতো ধর্ম আরেকখানা নাই। সুতরাং ইহার আদর্শ সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে পৌছাইতে হইবে। কোন পূজাতে গেলে বলিবে,স্বামী বিবেকান্দ ও মহাত্মা গান্ধীর ন্যায় গীতার অহিংস বাণী সকল স্থানে ছড়াইয়া দিতে হইবে। বৌদ্ধ পূজার অতিথি হইলে হইলে বলিবে, বুদ্ধের আদর্শ যথাযথভাবে মানিতে পারিলেই দেশে যথাযথ শান্তির আগমন ঘটিবে।

বড়দিনের অনুষ্ঠানে গিয়া যীশুর আত্মত্যাগে বলীয়ান হইতে সকলকে উৎসাহিত হইতে বলিবে। ঠিক। আমি বাধ্য হইলাম তাহকে সমর্থন করিতে। চুপ করিয়া দাঁড়া। আমি একখানা জিনিস বাহির করিতেছি।

বলিয়া ফাহিম তাহার মূল্যবান ক্যাবিনেট খুলিয়া খুঁজিয়া পাতিয়া একখানা বাইন্ডিং করা খাতা বাহির করিল। এইবার অন্তত কাড়াকাড়ি করিতে হইল না,ফাহিম এমনিতেই আমার হস্তে অর্পণ করিল। বলিল,আমার বালক বয়সে খেলাচ্ছলে গড়িয়া তোলা এই সম্পদ...। দেখিলাম সূচীতে হেডিং,সাব-হেডিং,সাব-সাব-হেডিং করিয়া সাজানো হইয়াছে। বিশাল সূচী।

খেলা,শিক্ষা,উৎসব,বাণিজ্য,উদ্বোধন ,প্রযুক্তি,বিচার, আইন ইত্যাদি সবগুলোকে পাশ কাটাইয়া চক্ষুখানা ঘুরিতে ঘুরিতে রাষ্ট্রপ্রধান শিরোনামের উপর গিয়া পড়িল। ইহাতেও সাব হেডিং গুতাগুতি করিয়া মরিতেছে। পৃষ্ঠা উল্টাইলাম ৩৫২। তাহাতে লিখা আছে- ধনী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-কুশল বিনিময়ের পর, আপনারা আগেও আমাদের সাহায্য করিয়াছেন,বর্তমানেও করিতেছেন,ভবিষ্যতেও করিবেন। এই টাইপের কথাবার্তা।

মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-তাহাকে মুসলিম উম্মাহ,ওআইসির কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া সম্প্রীতির কথা বলা হইবে। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান-সেই ক্ষেত্রে সার্কের কথা জোর দিয়া বলিতে হইবে। উহার পর ভ্রাতৃত্বসুলভ কথা বলা হইবে। এ ছাড়া অন্যান্য কয়েক পাতার কথা বাদ দিলে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নই ইহার মূলকথা। আবার সূচীতে গেলাম।

বাজেটের পাতাটা খুলিলাম। ইহাতে আছে- সরকারী দল-এই বাজেট গরীবের উন্নয়নের বাজেট,সুষম বাজেটসহ প্রসংসার চাপে ডুবিয়া যাওয়া একখানা বিবৃতি। বিরোধী দল- এইবারের বাজেট গরীব মারার বাজেট,দেশকে পিছাইবার বাজেট,দেশকে ধ্বংস করইয়া ফেলিবার বাজেট। সাবাস! মনে মনে বলিলাম। সাবাসী পাওয়ার যোগ্য বেচারা ফাহিম।

তবে জোরে বলিলাম না। ব্যাটাকে প্রসংশায় প্রশংসিত করিয়া ধ্বংস করিবার কোন মানে হয় না। বয়ান সংকলনটি রাখিয়া দিবার আগে শোক শব্দটির দিকে নজর গেল। ইহার সাব হেডিংগুলি হইল- বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানের শোক,বিদেশী নেতার শোক,দেশীয় সাবেক কেঊকেটার শোক,দেশীয় নেতার শোক,দুর্ঘটনায় শোক। শেষটাই খুলিলাম।

ইহাতেও আবার সাব হেডিং-বাস এক্সিডেন্ট শোক, নোউযান ডুবিতে শোক,গার্মেন্টস দুর্ঘটনায় শোক। বাসের এক্সিডেন্টে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাইয়া খোদার কাছে তাহাদের আত্মার শান্তির দোয়া করিয়া শোকবাণী। নৌযান ডুবির ক্ষেত্রেও উহা থাকিবে। সেই ক্ষত্রে সাথে যোগ হইবে একটি করিয়া ব্লাক বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল প্রদানের ঘোষণা। গার্মেন্টস দুর্ঘটনায় ক্ষেত্রে আগের কত্থা ঠিক থাকিবে।

সেই সাথে নিহতদের ৫০,০০০/১,০০,০০০ করিয়ে টাকা প্রদানের ঘোষণা। খাতাখানি বন্ধ করিয়া কাভারের দিকে তাকাইলাম। দেখিলাম তাহাতে লিখা রহিয়াছে "রেডিমেড বয়ান"। এক নিমিষেই মনে হইল যথার্থ নামকরণ। ভাবিলাম,ভবিষ্যতে হোমড়া চোমড়া যদি কেউ হইতে পারি,তাহ হইলে অন্য কাউকে নয়,এই খাতার ফটোকপিকে ফার্স্ট সেক্রেটারী বানানো যাইতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।