মিথ্যার চেয়ে সত্য বলা কঠিন। এই কঠিন কাজটিই করে যাচ্ছি এবং যাবো বড় কোন জাহাজ দুর্ঘটনার কথা বলতে গেলে আমরা বারবার স্মরণ করি টাইটানিকের কথা। কিন্তু এমন আরো কিছু জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে আরো বেশী প্রানহানী ঘটেছে। এরকম এমনই একটি হলো এস এস সুলতানা।
১৮৬৩ সালে জন লিথারবারি শিপইয়ার্ড তৈরী করে ১৭১৯ টন ওজনের এই স্টীমবোড প্যাডল হুইলার জাহাজটি।
যারা ঢাকা থেকে বরিশাল গামী সরকারী স্টিমারগুলোতে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা পরিচিত প্যাডলগুইলার স্টিমারগুলোর সাথে। প্রাথমিকভাবে ৮৫ জন ক্রু নিয়ে এই জাহাজটি সেন্ট লুইন থেকে নিউ অরলিনস চলাচল করতো। কিছুদিনের মধ্যেই এই জাহাজটিকে ওয়ার ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক সৈনিক পারাপারের জন্য নিযুক্ত করে।
১৮৮৬ সালের এপ্রিলের ২১ তারিখে ক্যাপ্টেন জে সি ম্যাসেনর অধীনে জাহাজটি নিউ অরলিনস থেকে রওনা দেয়। জাহাজের মূল ধারন ক্ষমতা ৩৭৬ জন হলেও ওইদিন জাহাজে ২৪০০ যাত্রী এবং প্রচুর সংখ্যক গবাদী পশু ছিলো।
জাহাজের প্রত্যেকটি কেবিন বোঝাই হওয়ার পরে ডেকও পরিপূর্ন হয়ে যায়। বেশীরভাগ যাত্রী ছিলো যুদ্ধফেরত সৈন্য। যাত্রাপথে কয়েকবারই স্টিমারটির বয়লার রিপেয়ার করা হয়।
২৭ই এপ্রিল রাত ২টায় হটাৎ জাহাজটির ৪টি বয়লারের ৩টিই বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরনের শক ওয়েবে ডেকে থাকা অনেক যাত্রী ছিটকে পানিতে পড়ে যায়।
জাহাজের বিরাট অংশে দিয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। কাঠের কাঠামোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। আগুনের শিখা এত মারাত্মক ছিলো যে ৯ কিলোমিটার দূরের মেম্পিস শহর থেকেও তা দৃশ্যমান ছিলো। যাত্রীদের সামনে দুটো মরনপথ ছিলো। জাহাজে লেলিহান আগুনের সামনে বসে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করা অথবা বরফ ঠান্ডা পানিতে ঝাপিয়ে পড়া।
বিস্ফোরনের ১ ঘন্টা পর বসটোনিয়া নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌছায়। কিছুক্ষনের মধ্যে আরেকটি স্টিমার আরকানসাস, এসেস্ক, নেভীর গানবোট ইউএসএস টাইলার উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। জাহাজটিকে টেনে নদীর পশ্চিম তীরে নিয়ে আসে তারা। ততক্ষনে জাহাজের ১৫০০ এর মত যাত্রী মারা গিয়েছিলো। বেশিরভাগই বাচার জন্য নদীতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এবং ঠান্ডা পানিতে টিকতে পারেননি।
সর্বমোট ৫০০ যাত্রীকে বাচানো সম্ভব হয় যাদের মধ্যে ৩০০ জন আগুনে পোড়ার কারনে পরে হাসপাতালে মারা যান। পানিতে ডুবে ১৫৪৭ এবং হাসপাতালে ৩০০ সর্বমোট ১৮৪৭ এর মত যাত্রী মারা যায় সে দুর্ঘটনায়। পরবর্তী এক মাস মেম্পিস নদীতে হতভাগ্য যাত্রীদের লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছিলো।
বয়লার বিস্ফোরনের কারন :
কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় ৪টি বয়লারে পানির পরিমানের তারতম্যের কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। ৪টি বয়লারই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ছিলো।
জাহাজটি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই থাকার কারনে একবার একপাশে বেশী হেলে যেতো। যার কারনে একটি বয়লার থেকে পানি সম্পূর্ন সরে যেয়ে বয়লারটি অতিরিক্ত হিট হয়ে যেতো। তারপরে জাহাজটি অন্যপাশে হেলে গেলে মাত্রারিক্ত হিট হয়ে যাওয়া বয়লার আবার পানি দিয়ে পূর্ন হয়ে অতিরিক্ত বাস্ফ সৃষ্টি হতো। এভাবেই হটাৎ বিস্ফোরন হয় বয়লারে। তদন্তে বলা হয় বয়লারে পানি পরিমান একি রাখলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।
ইস্ট টেনেসাতে প্রতি বছর এস এস সুলতানা ট্রাজেডীতে বেচে যাওয়া যাত্রীরা বার্ষিক সম্মেলন করতো। শেষ সম্মেলন হয় ১৯২৮ সালে যখন আর মাত্র ৪ জন জীবিত ছিলো।
১৯৮২ সালে একদল আর্কিওলোজিস্ট সুলতানার ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করে একটি সয়াবিন ক্ষেতের ৩২ ফিট নিচে। স্থানটি মেম্পিস থেকে ৪ কি:মি দূরে। ১৮৬৫ সালের কোর্স থেকে নদী এতদিনে প্রায় ৩.২ কি:মি সরে গিয়েছে।
এস এস সুলতানার বেশীর ভাগ যাত্রী ছিলেন ইউনিয়ন সোলজার এবং যুদ্ধ বন্দী। সবাই বাড়ি ফিরছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। প্রিয়জনদের দেখার স্বপ্ন, মুক্তির আনন্দ সব ডুবে গিয়েছিলো সেদিন এস এস সুলতানার সাথে।
লিংক -
Sultana: Titanic of the Mississippi
The SS Sultana
S. S. Sultana Article from the Fire Service History
একটিমাত্র অক্ষত ছবি পাওয়া গেলো এসএস সুলতানার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।