Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
দিন দিন বাড়ছে ইলেকট্রিক গাড়ির জনপ্রিয়তা। কেননা এই তো গত ২-৩ বছর আগেই ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে ছিল না কারও মাথাব্যথা। কেউ চিন্তাই করেনি কোনো রংচংয়ে ইলেকট্রিক গাড়িটার মালিক হব নিজেই। তবে এই ধারণা পাল্টে দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। সাধ্যের মধ্যে সবকিছু এই অঙ্কে এখন সবাই চাইছে কোনো ইলেকট্রিক গাড়ি আমার হোক।
আর তারই কারণে দিন দিন যেমন চাহিদা বাড়ছে, তেমনি জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ির। আবার দামটাও সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে গাড়ির নির্মাতা কোম্পানিগুলো।
লিন্ডা ও মাইকেল পিয়ার্স দম্পতি বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে। পৃথিবীর উষ্ণতা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত। উত্তপ্ত করার পেছনে নিজেরা আর ভূমিকা রাখতে চান না।
সেজন্য পরিবেশবান্ধব গাড়ি চালানোর পক্ষপাতী তারা। অফিস টু বাসা যাতায়াত করতে চান ইলেকট্রিক গাড়িতে। কিন্তু যেসব ইলেকট্রিক গাড়ি পাওয়া যায় সেগুলোর যে গতি, তার চেয়ে যেন হামাগুড়ি দিয়ে চলাই ভালো। গলফ খেলার সরঞ্জামাদি বহন করানোর জন্যই এগুলোকে ভালো মানায়। শেষমেশ তারা সমাধান খুঁজে পান।
২০০৭ সালের শেষ দিকে বাজারে যুক্ত হয় ঘণ্টায় ৬৪ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ইলেকট্রিক গাড়ি। ২০০৮ সালের শুরুতেই স্বামী-স্ত্রী দুজনে কিনে নেন দুটি গাড়ি। মাইকেল কেনেন চীন থেকে আমদানিকৃত চার দরজার মাইলস আর লিন্ডা পছন্দ করেন ২ সিটের কানাডিয়ান জেন। উভয়েই মনে করছেন, তার নিজেরটা চমৎকার। কিছুটা দেরিতে হলেও ইউরোপ ও আমেরিকায় এখন ইলেকট্রিক গাড়ির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
শূন্য নির্গমন অটোমোবাইল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইতিহাস কিন্তু নতুন নয়, পুরনোই। ১৯৯০-এর দশকে জেনারেল মোটস প্লাগ-ইন ভেহিকল তৈরির পরও নিরাপত্তার প্রশ্নে আর বাজারে ছাড়েনি। মূল সমস্যা তৈরি হয় কম গতি এবং দূরে যেতে না পারার কারণে। যে কারণে অনেকে এটিকে মানসিক প্রতিবন্ধক মনে করেন, কিন্তু সিটি ড্রাইভারদের তো আর বেশি গতি ও দূরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাদের টার্গেট করেই তৈরি করা হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি।
পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক কারমেকার রেভা ইলেকট্রিক কার কোম্পানির সহসভাপতি চেতন সাইনি বলছেন, ‘বর্তমান সময় এসে ইলেকট্রিক গাড়ির গতি অনেক বেড়েছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ’ আর এই গতির সঙ্গে কম মূল্য ও সহজ চালনা যুক্ত হওয়ায় এ গাড়ি লোকজন কিনবেইবা না কেন! লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সানফ্রান্সিসকো যাওয়ার জন্য এগুলো তৈরি করা হয় না। একবার ব্যাটারি চার্জ করে ৬৪ কিলোমিটার যেতে পারা কম কথা নয়! মেট্রোপলিসের ভেতরে ইলেকট্রিক গাড়ি বেশ ভালোভাবেই চলার ক্ষমতা রাখে তা সে টোকিও, লন্ডন কিংবা ঢাকাই হোক। ইউরোপে এগুলোর পরিচিতি মিডিয়াম স্পিড ভেহিকল, আর উত্তর আমেরিকায় ডাকা হয় নেইবারহুড ইলেকট্রিক ভেহিকলস।
টরন্টোভিত্তিক জেনে মোটরের সিইও ইয়ান ক্লিফোর্ড বলছিলেন, ‘আপনি এখন পর্যন্ত ইলেকট্রিক গাড়ির কথা না শুনে থাকলে দ্রুত এ ক্লাবে যোগদান করুন।
এটা মূলধারার অটোমোটিভ শিল্প নয়। তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার হয়ে যাওয়ার চিন্তাটা সবার মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া পরিবেশকে তো বাঁচাতে হবে। ’ তবে এই মুহূর্তে জিএমের বিক্রির সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে চলবে না। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর রেভা ইলেকট্রিক মোটর্স গত ৪ বছরে উৎপাদন করে ২০ হাজারেরও বেশি গাড়ি।
খুব শিগগিরই তারা বছরে উৎপাদন করবে ৩০ হাজার গাড়ি। তারা ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন টেস্টনা নামক ইলেকট্রিক সুপারকার প্রস্তুত করছে।
আগামী বছর হয়তো অনেকেই তা কেনার সুযোগ পাবে। এই গাড়ি হাইওয়েতে চলাচল করতে পারবে নির্বিঘ্নে। লন্ডনের সর্ববৃহৎ শূন্য নির্গমন অটো ডিস্ট্রিবিউটর গোইনগ্রিনের প্রতিষ্ঠাতা কিথ জনসনের মতে তারা কোনো গাড়ি বিক্রি করছেন না, বিক্রি করছেন একটি নতুন ধারণা।
ইলেকট্রিক গাড়ি সবচেয়ে বেশি চলাচল করছে লন্ডনের রাস্তায়। এর পেছনে অবশ্য সরকারের গৃহীত নতুন নীতি কাজ করেছে। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ব্যস্ততম রাস্তায় গাড়ি চালালে প্রতিদিনের জন্য চার্জ গুনতে হয় প্রায় ১৬ ডলার সমপরিমাণ অর্থ। রাস্তা অবরোধ করে রাখার জন্যই এ চার্জ কিন্তু ইলেকট্রিক গাড়ি চালালে কোনো চার্জ নেই। বছরে ৩ হাজার ডলার অবরোধ চার্জের ভয়েও অনেকে ইলেকট্রিক গাড়ি বেছে নিচ্ছে।
লন্ডনে এ রকম গাড়ির সংখ্যা ১৫ হাজার অতিক্রম করেছে গত বছরেই। তবে ভবিষ্যতে ইলেকট্রিক গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার ভাবা হচ্ছে ভারত ও চীনকে। ১৯৯৯ সালে ইলেকট্রিক বাইক ও স্কুটার চালুর পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রায় ১৯ মিলিয়ন ইউনিট। সামনের দিনগুলোতে যে এর প্রভাব গাড়ির ওপরও পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে কানাডা হচ্ছে পথিকৃৎ।
অথচ ব্রিটিশ কলম্বিয়া বাদে অন্য সব প্রদেশে এখন পর্যন্ত ইলেকট্রিক গাড়ি নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রেও মাত্র ৫টি অঙ্গরাজ্যে প্লাগ ইন কার চালানোর অনুমতি রয়েছে। নিরাপত্তার কথা ভেবেই তারা অনুমোদন দিতে চায় না। তবে ক্যালিফোর্নিয়া লন্ডনের দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করতে চাচ্ছে। ২০১২ সাল নাগাদ ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় চলবে ১০ হাজারেরও বেশি ইলেকট্রিক কার।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, আমেরিকায় এখন সব মিলিয়ে মাত্র কয়েক হাজার ইলেকট্রিক গাড়ি চলে। কিন্তু এ সংখ্যাটা মিলিয়ন অতিক্রম করবে খুব তাড়াতাড়ি। সেই দিন বেশি দূরে নয়। জীবনের গতি ধীর করে হলেও সবার উচিত পরিবেশকে সবুজ রাখার চেষ্টা করা। নইলে যে আমাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
সচেতন কেউই অন্তত এ ব্যাপারটি ঘটতে দিতে চাইবেন না। আর তাই পিয়ার্স দম্পতির মতো অনেকেই সামনের দিনগুলোতে বেছে নেবে ইলেকট্রিক কার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।