কয়দিন ধইরা ভারতীয় পণ্য বাদ দেওনের দাবীতে একখান ব্লগীয় আন্দোলনের হাওয়া টের পাইতাছিলাম। সব দেইখা শুইনা নিজেরেও ঐ চলতি হাওয়ার পন্থী করতে মন চাওয়ায়, নিজের খোমাখাতায় এই নিয়া এক্ষান স্ট্যাটাস দিছিলাম- ‘ভারতীয় পণ্য, বর্জনেই পূণ্য’। তয় স্ট্যাটাসখান দেওনের সময়ই বুঝবার পারছিলাম- ব্যাপারডায় বেবাগ ঝক্কি আছে। আমার লাহান পাপী বান্দার খুব বেশি পূণ্য করার শখ পূরণ, সহজ কাম না।
ভালো কইরা বিচরায় দেহি, আমগো দেশতো ঐ দেশের পুরাই শো-কেস।
এমন কুনো সেক্টর নাই, যেইহানে হেগো পণ্য হান্দায় নাই। মনে লয়, হেগো কিছু কিছু জিনিস আছে, যা শুধু আমগো দেশেই পাওন যায়। আমরাতো নিজেগো লাইগা যথেস্ট পরিমাণে কিছুই বানাইবার পারি না। একদিনের লাইগা শুধুমাত্র বেনাপোল পোর্ট বন্ধ হইলে, ঢাকার বাজারে সাইরেন বাইজা ওঠে। পিয়াজের ঝাঁজ বাইড়া যায়, সুগার লেভেল ডাউন খায়।
আমগো আছে শুধু গতর আর উদর। এই গতরের ঘাম বেইচা আরবদেশ আর মালয়শিয়া থেইকা আমগো বাপ-ভাই ট্যাকা কামায়। মা-বোনেরা শেখের ঘরে, দিল্লী-পিন্ডির অন্ধকারে গতর খাটায়। গতর খাটায় আর ট্যাকা পাঠায়। হেই গতর খাটানি ট্যাকা দিয়াই আমরা সারা বছরে ৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি সামলায় রাখি।
হেই ঘাম বেচা ট্যাকা দিয়াই আমরা হেতারার দ্যাশ থেইকা চাইল কিনি, ডাইল কিনি। আদা, রসুন, পিয়াইজ কিনি। পোলাপাইনের গুড়া দুধ কিনি। শাড়ি কিনি, মেন্দি কিনি, ঝুনঝুনওয়ালা লেহেঙ্গা কিনি। কিনি আর খাই, কিনি আর পিন্দি।
যাওগ্গা, কিন্যা আইন্না খাই, কিন্যা আইন্না পিন্দি। এতেতো শরমাইবার কিছু নাই। ভিক্ষা কইরা তো আর খাই না। হেরা তো আর আমগোরে মাগনা কিছু দেয় না। তাই রোজার মাসেও আমগো খাওন বাইড়া যায়, পিন্দনের উৎসব লাইগা যায়।
শুধু গতর খাটানি ট্যাকায় কিন্যা খাইতে খাইতে, আর পিনতে পিনতে আমগো দিল মাঝে মাঝেই বেচাইন হয়া যায়। খাওন পিন্দন শেষে, লুঙ্গির গিট্টি খুইলা চিক্কুর পাড়ি- ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর। অহন, সাস কব বহু থি, জরু কব গরু থি- জানতে মুঞ্চায়। তাই আমরা বাপ-ভাইয়ের আর মা-বোনের গতর খাটানি টাকায় উদর পুর্তি কইরাই – টিভিতে হিন্দি সিরিয়ালের সিরিয়াল লাগাই। জোয়ান-হদ্দ, মাদি-মদ্দ সব ভুইলা, বিশেষ ফজিলত হাসিলের লাইগা জামাতে টিভি ছাইড়াই হিন্দি চ্যানেল খুইলা বসি।
হিন্দি নেশায় বিভোর হইয়া, নানা-নাতি একলগে বইয়া, চিকনি-চামেলি শিলা কি জওয়ানি দেখি আর সিটি মারি।
কিন্তু ব্যাপার স্যাপার দেইখা শুইনা মন অহন চেইতা উঠবার চায়। এই নিয়া যহন বিভিন্ন ব্লগ, খোমাখাতার স্টাটাস, নোট বুক আরো সব আওলা বাওলা জাগায় পিলা চমকানো লেহা পড়ি, তহন নিজেরেই নিজে চাবকাইয়া ধমকাইতে ইচ্ছা করে। এতদিন পানির হিস্যা দেয় নাই, কিছুই কই নাই। এতদিন চুক্তির জমি দেয় নাই, কিছুই কই নাই।
কাঁটাতারের বেড়া দিছে, সীমান্ত আইন মানে নাই, কিছুই কই নাই।
তাই বইলা সইয্য করনেরও তো একটা সীমা আছে, না কি?
হুদা কারণে গুলি কইরা হপ্তায় হপ্তায় মানুষ মারবো,
ফেলানিরে মাইরা থুইয়া বেড়ার মধ্যে লটকায় রাখবো,
একটুখানি ম্যাও তো আমগো করা উচিত, না কি?
পাছার কাপড় খুইল্যা থুইয়া, ইচ্ছামতো মাইরপিট করবো,
তারপরও আমগো চোখ বুইজা থাকন লাগবো?
খোমাখাতায় ওগো পণ্য বর্জনের স্টাটাস দেইখা দ্যাহেন দিদিরা কেমনে আমগো শরম দিতাছে ।
পাছার কাপড় খুইল্যা মারার পরেও আমগো যদি হুশ না হয়, তাইলে তো দিদিরা এইরাম কইতেই পারে।
চিন্তা কইরা দেখলাম, একদিনে তো আর সবকিছু ছাড়ন যাইবো না। আস্তে আস্তে ছাড়তে হইবো।
আগে ছাড়ন দিতে হইবো আমগো চিন্তার পরাধীনতা। আগে বুঝতে হইবো, বিশ্বাস করতে হইবো ওগো জিনিসপত্র ছাড়াও আমরা চলতে পারি। ওরা যেইডা দিয়া আমাগো চিন্তার ক্ষেমতা নষ্ট করতাছে, আমগো মগজে, রুচিতে পচনের নেশা ধরাইতাছে- হেইডা আগে ছাড়ন দিতে হইবো। ওগো লগে গায়ের জোরে না পারি, মনের জোর তো দেহাইতে পারি।
আমি আজ থিকা হিন্দি ছবি/ মুভি কেনা বাদ দিলাম।
আমি আজ থিকা হিন্দি সিরিয়াল দ্যাহা বাদ দিলাম।
আমি আজ থিকা মিরাক্কেল দ্যাহা বাদ দিলাম।
যা কিছু কিন্যা ফালাইছি, তা ফালায় দেওনের ক্ষেমতা আমার নাই। তয় নতুন কিছূ কেননের আগে অবশ্যই ভারতীয়টা বাদ দিয়া, দেইখা কিনমু। আর যদি অন্য উপায় না থাহে, ওগো জিনিস কেননই লাগে, বিএসএফের হাতে পাছার কাপড় খুইলা মাইর খাওনের দৃশ্যটা নিজের জন্য চিন্তা করতে করতে কিনমু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।