আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিচ্ছার বিয়ে এবং অতঃপর...

বিয়ের আগের রাতে নাকি কনেকে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন, একা ঘুমানো যাবে না,মুরব্বীদের সাথে ঘুমাতে হবে...আরো কত কি(!)। এসব নিয়মের বাড়াবাড়ি দেখে মেয়েটি হয়ত সারারাত ঘুমাতেই পারে না। বিয়ে নিয়ে ছোটবেলা থেকেই মেয়েরা স্বপ্ন দেখে, সেই সুখস্বপ্ন যখন সত্যি হবার পথে তখন না ঘুমানোই স্বাভাবিক। তবে সবার বেলায় সেটা হয় না।

এই যেমন আমি, কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই সেই রাত্রি কেটে গেছে। আমি জানতাম, ওদের ক’জন আসবে আমাদের বাসায়, দুইপক্ষের মতের মিল হলে হয়ত এনগেজমেন্ট হতে পারে। তাই টেনশাণ ছাড়া এক ঘুমে রাত্রি শেষ। বেলা ১০টায় আম্মুর ডাকাডাকিতে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। বেলা ১২ টায় তিনি ফোন করলেন, ঃ আমি কি চাঁদপুর আসবো? (তার যে এইমাত্র ঘুম ভেঙ্গেছে বেশ বুঝতে পারছিলাম) ঃ আপনি কি করতে আসবেন? আপনি আসলেওতো আমাদের বাসায় আসতে পারবেন না।

ঃ আপনি কি শাড়ি পরবেন? ঃ জানি না। হয়ত... ঃ শাড়ি পরেন। সবাই চলে গেলে আমি আপনাকে দেখতে আসবো। ঃআজব(!)। কি করে? ঃ আপনি আপনাদের বাসার গেটে আসলেই হবে।

ঃ আমি পারব না। এটা সম্ভব না। রাত ৯ টা। আবার তার ফোন। এতক্ষনে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শেষ।

কিছুক্ষণের মধ্যে মেহমানরা চলে যাবেন। ঃ আপনাকে না বলেছিলাম, কাবিনের কথা বললে রাজি হবেন না। ঃ আরে... আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন কেন? আমি কি রাজি নাকি? (আমি সত্যি খুব অবাক) ঃ তাহলে এখন ভাইয়া আমাকে আপনাদের বাসায় আসতে বলছে কেন? আমি ঢাকা চলে যাচ্ছি। ঃ আপনাকে আমি আসতে বলেছি? চলে যান আপনি। (কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার কথায় তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন।

মেজাজ খারাপ করিয়ে দিয়েছে) তারা একটা শাড়ি এনেছে। অদ্ভুত সুন্দর শাড়িটা। আম্মু এসে বলল শাড়িটা পরতে হবে। আমি কি শাড়ি পরতে জানি? আমাকে তো শাড়ি সবসময় লাবনী পরিয়ে দেয়। এটা নাকি বিয়ে বাড়ি।

আম্মু আর কাকী ছাড়া বাসায় মহিলা বলতে আর কেউ নেই। আমার শাড়ি আমি-ই পরলাম। কবুল পরাতে এসে দুই হুজুর ঝগড়া শুরু করলেন। একজন বলছেন ‘কবুল’ বলতে, আরেকজন বলছে, ‘আলহামদুল্লিল্লাহ’ বলতে। ভয় পেয়ে কি বলেছি মনে করতে পারছি না।

কোন অনুভূতি হচ্ছিল না। হাতে মেহেদি নেই, অথচ বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ে শেষ হবার পর আন্টি আকাকে বললেন আমার হাতে একটু মেহেদি দিয়ে দিতে। আকা নিজের হাতেই মেহেদি দিতে পারে না, তবু চেষ্টা করল আঁকাবুকি করার। শুক্রবার ফুল পাওয়া যাচ্ছিল না।

আন্টি অনেক কষ্টে ফুলের দোকান থেকে ফুল এনে রুমটা সাজিয়েছিল। এখনও মনে পরলে খুব খারাপ লাগে, আমার বিয়ে এভাবে হবার কথা ছিল না। ছিল কি??? রাত ১২টা। ১২টা বাজতেই বাসা পুরোপুরি খালি। ফুল দিয়ে বাসর সাজানো রুমে এরোসল স্প্রে করাতে সে আমাকে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে বলল।

ঠাণ্ডা বাতাসে যেন স্বস্তি ফিরে পাচ্ছিলাম। সেই সময় সে যেন আমার মনের কথাটিই বলল, “১৪দিন আগে আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা। মাত্র চারদিন কথা বললাম, এত দ্রুত আমাদের বিয়ে হবে এটা কখনো ভাবিনি”। সত্যি এত দ্রুত, কোন মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া কারো বিয়ে হয়??? আজ সেই দিন। একে একে তিন তিনটা বছর চলে গেল।

আমাদের দু’জনের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেদিন আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ভালোই হয়েছিল। সেদিন শুধু এনগেজমেন্ট হলে পরে সত্যি বিয়ে আদৌ হত কিনা আমাদের দু’জনেরই সন্দেহ আছে। কিছুদিন আগেও আমাদের খুব মতের অমিল হত। ক’মাস ধরে হচ্ছে না।

বরং দু’জনের মতের এখন দারুন মিল। সন্ধ্যে হলেই মন কেমন করে, সে বাসায় এখনও আসছে না কেন? তাকে দেখলেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে। তার মন খারাপে আমারও মন খারাপ হয়। সে আসেপাশে থাকলে কোন কাজে মন বসে না। সে বিকেলে বাসায় থাকলে তার সাথে থাকা কাটানো মুহূর্তগুলোর জন্য চেম্বারে যাই না।

হুমম, আমার মনের অলিগলিতে এখন শুধুই তার বসবাস। “ভালবাসি, অনেক ভালবাসি শুধু তোমাকেই”।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।