৭ হাদীসের ভাষায় জাতীয়তা মূর্খতা
বাংলাদেশের আধুনিক জাতীয়তাবাদীদের কাছে ধর্ম অরাজনৈতিক এবং একটি গৌণ বিষয়। তাই ধর্ম যদি কেউ মানতে চায়, তবে ব্যক্তিগতভাবে মানবে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি ধর্মের চে’ বড়। আর ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের সংগ্রামী জাতীয়তাবাদীরা জাতীয়তাবাদী চক্রান্তের গায়ে ধর্মীয় পোশাক পরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, মুসলিমদের ধর্ম ও তাহযীব রক্ষা করতে হলে ইংরেজকে বিতাড়িত করতে হবে; এবং ইংরেজকে বিতাড়িত করতে হলে হিন্দুদের সাহায্য নিতে হবে, তাদের সঙ্গে এক হয়ে সংগ্রাম করতে হবে, কেননা শুধু মুসলিমদের পক্ষে ইংরেজ খেদানো সম্ভব নয়।
অথচ কাফিরদের সাহায্য গ্রহণ হারাম। সারা দুনিয়ার প্রাজ্ঞ ইসলামী আইনজ্ঞদের মতে এমনকী অন্য কোনো শত্রুর মুকাবিলায় শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যেও কাফিরদের সাহায্য নেয়া বৈধ নয়। শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায তাঁর “নাক্বদুল ক্বাউমিয়্যাতিল আরাবিয়্যাতি আলা যূ-ইল ইসলামি ওয়াল ওয়াক্বি” গ্রন্থে (পিডিএফ, পৃষ্ঠা ৬৩) লিখেছেন:
“মুসলিমদের জন্যে কাফিরদের বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুর বিরুদ্ধে ওদের সাহায্য গ্রহণ অবৈধ। কেননা ওরাও শত্রু এবং সুযোগ পেলে ওরাও বড় রকমের ক্ষতি করতে পারে। আল্লাহ্ কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারাম করেছেন এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
তিনি ঘোষণা করেছেন, যারা ওদের বন্ধুজ্ঞান করবে তারা ওদেরই অন্তর্ভুক্ত এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরা সবাই যালিম। ইতোপূর্বে বর্ণিত স্পষ্ট আয়াতসমূহে এর উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া মুসলিম শরীফে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিকে রওনা হলেন। তিনি যখন ‘হাররা আল-ওয়াবরা’তে ছিলেন তখন একটি লোক সেখানে রাসূলুল্লাহর সঙ্গে মিলিত হয়। লোকটির সাহস ও বীরত্বের কথা সবাই বলাবলি করতো।
রাসূলের সঙ্গীরা তাই লোকটিকে দেখে অত্যন্ত খুশি। কিন্তু সে রাসূলের সঙ্গে মিলিত হয়ে যখন তাঁকে বলল, “আমি আপনার সহযাত্রী হয়ে আপনার কষ্টের অংশীদার হতে এসেছি। ” তখন তিনি তাকে বললেন : “তুমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছো?” লোকটি বললো, “না”। তিনি বললেন: “তাহলে তুমি ফিরে যেতে পারো, আমি কোনো মুশরিকের সাহায্য নেবো না। ” লোকটি চলে গেলো।
তারপর আমরা যখন ‘আশ-শাজারা’তে পৌঁছি, তখন লোকটি আবার এসে পূর্বের ন্যায় একই কথা বললো। রাসূল সা.-ও তাকে একই জবাব দিলেন। অর্থাৎ তিনি ‘না’ বলে দিলেন। তিনি বললেন, “তুমি ফিরে যাও, আমি কোনো মুশরিকের সাহায্য নেবো না। ’ লোকটি ফিরে গেলো।
কিন্তু ‘আল-বীরা’ নামক স্থানে সে আবার এলো। রাসূল সা. তাকে এবারও প্রথমবারের মতোই বললেন: “তুমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছো?” লোকটি এবার বললো, ‘হ্যাঁ’। তখন আল্লাহর রাসূল সা. তাকে বললেন: “তাহলে চলো। ” এই মহান হাদীস আমাদেরকে মুশরিকদের সাহায্য বর্জন এবং কেবল মুমিনদের সাহায্য গ্রহণ করার পথনির্দেশ দেয়। ”
শায়খ বিন বায উক্ত গ্রন্থের ২৩ পৃষ্ঠায় জাতীয়তাবাদকে ‘প্রতারণা’ আখ্যায়িত করে লিখেছেন:
“ইসলামের নীতি অনুযায়ী আরব কিংবা অন্য যে- কোনো জাতীয়তাবাদ প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও মহাপাপ।
এই প্রচার মূলত ইসলাম ও মুসলিমদের জন্যে একটি সুস্পষ্ট প্রতারণা। ”
শাইখুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়া (র) একটি বিশুদ্ধ হাদীসের বরাত দিয়ে জাতীয়তাবাদকে “জাহিলিয়্যাত” বলেছেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “মাজমূ’ আল-ফাতাওয়া” (২৮:৩২৮)-তে লিখেছেন:
“ইসলাম ও কুরআনের আহ্বান-বহির্ভূত সবকিছুই- যেমন বংশ, দেশ, জাতি, মাযহাব, তরীকা ইত্যাদি জাহিলিয়্যাতেরই এক-একটি নিদর্শন। একবার এক আনসার ও এক মুহাজিরের মধ্যে বিবাদ লেগে গেলে উভয়ে “হে আনসারগণ ও হে মুহাজিরগণ” সম্বোধনে যার যার সম্প্রদায়কে সাহায্যের জন্যে ডাক দেয়। তখন রাসূল সা. ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন:
'‘আ-বিদা’ওয়াল জাহিলিয়্যাহ্, ওয়া আনা বাইনা আযহারিকুম?’– “জাহিলিয়্যাতের দিকে আহ্বান জানানো হচ্ছে! অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি।
'’ এই ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। ”
আবূ দাঊদ ও ইবন মাজা শরীফে হযরত হারিস আশ্’আরী থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সা. বলেছেন:
“আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজ করতে বলছি, আল্লাহ্ আমাকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। কাজগুলো হলো: শ্রবণ ও আনুগত্য, জিহাদ, হিযরত ও জামায়াত তথা সংঘবদ্ধভাবে থাকা (পৃথক না হওয়া)। যে- ব্যক্তি সংঘবদ্ধ জীবন থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যাবে সে তার গলা থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলবে, যতক্ষণ যতক্ষণ না আবার ফিরে আসে। আর যে- ব্যক্তি জাহিলিয়্যাতের মতাদর্শ গ্রহণের আহবান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানিতে পরিণত হবে।
” একজন প্রশ্ন করলেন: “হে আল্লাহর রাসূল! যদি সে নামায-রোযা করে তবুও?” তিনি বললেন: ‘ওয়া ইন সাল্লা ওয়া সামা ওয়া যায়িমা আন্নাহু মুসলিম’ – “হ্যাঁ, যদিও সে নামায-রোযা করে এবং মনে করে যে, সে মুসলিম। ”
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।