আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৈশিক জাতীয়তাবাদ ও বৈশ্বিক উম্মাহ-চেতনা

১  এই লেখা সহজ ও সহজের জাতীয়তাবাদ পানির মতো সহজ এবং বরফের মতো কঠিন একটি বিষয়। জাতীয়তাবাদের ধারণা সর্বজনীন, কিন্তু তত্ত্ব বিজ্ঞজনীন। এর তাত্ত্বিক রূপ ও মূল্য নিয়ে গভীর কৌতূহল, কিঞ্চিৎ পড়াশোনা ও সামান্য চিন্তাভাবনা আমার আছে। কিন্তু এইটুকু দিয়ে বিজ্ঞজনকে তত্ত্ব বোঝানো যেমন সম্ভব নয়, তেমনি তার দরকারও নেই। বিজ্ঞ মানুষেরা যে বহুকিছু জানেন ও বোঝেন, এটা খুব ভালো; তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কেননা তাঁরা সমাজে গরিষ্ঠ নন, লঘিষ্ঠ। বিজ্ঞের তত্ত্বজ্ঞানের চে’ সমাজে যারা গরিষ্ঠ, সেই সহজ লোকদের সরল সত্যজ্ঞান বেশি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ তারা সমাজ বদলায়, নির্ণয় করে সমাজ-চারিত্র। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের দীর্ঘ ঐতিহাসিক কালক্রমে জাতীয়তাবাদ নিয়ে অনেককিছুই ঘটে গেছে: রাজনীতিবিদরা তর্ক করেছেন, পণ্ডিতরা বিশ্লেষণ করেছেন, চিন্তাবিদ লেখকরা বই লিখেছেন। সেসব রচনাবলি মননশীল পাঠকদের। আমার এই ক্ষুদ্র নিবন্ধের নিবেদন একান্তই আমজনতার কাছে, যাঁরা তেল-নুন আর ধর্মকর্ম নিয়ে সাদাসিধে জীবনযাপন করেন।

২  জাতীয়তাবাদ বোঝার দরকার কী? আসুন তাহলে, বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করা যাক। মুশকিল হলো, এই শুরুতেই তর্ক উঠতে পারে। আপনি আপত্তি করতে পারেন: ‘বিসমিল্লাহ্ বলে কেন শুরু করবো? হরি হরি বা হলি কাউ বললে কী সমস্যা?’ দুঃখিত। সম্ভাবনার হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম আমার পাঠক মুসলিম। আসল কথা হলো, আপনি তা-ই বলবেন যা বলতে আপনার জাতীয়তা সায় দেয়।

মোটকথা, ঠিক এ মুহূর্তে আপনি এবং আমি, আমরা দু’জন দরোজা ধাক্কা দিয়ে শুরুতেই বিষয়টির অন্দরমহলে ঢুকে পড়েছি। আমরা বুঝতে পারছি— আমাদের বলা, ভাবা, করা সবকিছুতেই জাতীয়তা আছে। কাজেই জাতীয়তা বোঝার দরকারও আছে। একমত? ৩  জাতীয়তাবাদের অর্থ দুনিয়ায় এখন সাত শো কোটি মানুষ। সবাই এক রকম নয়।

একত্রেই বাস করছি এই উপগ্রহে, কিন্তু আমরা এক নই। আমাদের অনেক ধর্ম, বিভিন্ন বিশ্বাস, বিচিত্র মূল্যবোধ। আমরা সবাই সবার কথা বুঝি না, কারণ আমাদের ভাষা এক নয়। ইচ্ছেমতো যে-কোনো জায়গায় ঘরবাড়ি বেঁধে বসবাস শুরু করতে পারি না, কারণ সব দেশ স্বদেশ নয়। আমাদের গায়ের রঙ ভিন্ন ভিন্ন: কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ তামাটে।

গঠনেও বিস্তর বৈচিত্র: কেউ খাটো, ফর্সা, চ্যাপ্টা নাক, পাতলা ঠোঁট, ছোট ছোট চোখ; আবার বহু মানুষ দীর্ঘাঙ্গী, খাড়া নাক, কোঁকড়ানো চুল। আমরা অনেক মানুষ, আমরা অনেক রকম। এই সমস্ত ‘রকম’ এর মধ্য থেকে কী কী গুণে কারা কারা প্রায় এক রকম, তা দেখে এই ‘এক রকম’ লোকজনকে চিহ্নিত করা হয়। তারপর এদেরকে বলা হয় জাতি। জাতি থেকে এসেছে জাতীয়, জাতীয়তা, জাতীয়তাবাদ।

জাতি অর্থ সামলক্ষণিক শ্রেণী, প্রায় এক রকম অনেক মানুষের সমষ্টি। আর জাতীয়তাবাদ মানে স্বজাতিপ্রেম, জাতির স্বরূপ ও স্বার্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা। (চলবে...। ) 01735-530000 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।