আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৈশিক জাতীয়তাবাদ ও বৈশ্বিক উম্মাহ-চেতনা

৫  ইসলামে জাতীয়তার উপাদান ও ধরন ইসলাম মানে শান্তির জন্যে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, অস্তিত্ব-চেতনা-সম্পদ সবকিছু নিয়ে আত্মসমর্পণ। সর্বান্তকরণে মেনে নেয়া যে আল্লাহ্ই একমাত্র মা’বূদ ও বিধানদাতা। যে- ব্যক্তি আল্লাহ্কে একমাত্র স্রষ্টা ও উপাস্য বলে স্বীকার করলো, কিন্তু তাঁকে সর্বোচ্চ হুকুমকর্তা বলে মেনে নিতে রাজি হলো না– সে মুয়াহহিদ (একেশ্বরবাদী) হতে পারে, কিন্তু মুসলিম নয়। প্রকৃত মুসলিম তার জীবন-মরণের সকল বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে অবিচল। এই অবিচল বিশ্বাসী ও একনিষ্ঠ আদর্শবান মানুষদেরই সম্মিলিত নাম ‘মুসলিম উম্মাহ্’ বা মুসলমান জাতি।

এরা পরস্পর ভাই ভাই। এদের ভ্রাতৃত্ব রক্তসম্পর্কের চে’ মযবুত, আত্মীয়তা-সম্পর্কের চে’ ঘনিষ্ঠ। এদের বিশ্বাস, আদর্শ, ভালোবাসা ও কল্যাণকামিতায় তৈরি জাতিসত্তাগত বাঁধন চির-অটুট, অবিচ্ছেদ্য। রাসূল সা. বলেছেন: সমস্ত মুসলিম একটি দেহের মতো, এর যে- কোনো অঙ্গে আঘাত লাগলে সারা দেহই ব্যথিত হয়। বিভিন্ন দেশ-ভাষা-বর্ণ-গোত্র-সংস্কৃতির অসংখ্য মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসে এই জাতিসত্তায় মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো।

প্রাণখোলা আল্লাহ্ভক্তি ও উদার মানবপ্রেমের বন্যায় খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিলো জাহিলী বংশগরিমা ও আঞ্চলিক বিভক্তি। আল-উখুয়্যাহ ফিল্লাহ-এর মহা আহবানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর সৈনিক হিসেবে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কুরাইশ বংশের হামযা, গিফারী গোত্রের আবূ যার, পারস্যদেশের সালমান, হাবশার বিলাল ও রোমের সুহাইব প্রমুখ দূরত্বজয়ী মানুষেরা। বস্তুত মানুষের জন্যে বিশ্বাস ও আদর্শের চে’ শক্ত আর কোনো ঐক্যসূত্র যে নেই, ইসলাম এর বাস্তব প্রমাণ ও বেনজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মদীনার মুসলিমগণ তাঁদের দূরাগত বিদেশি ভাইদেরকে নিজেদের সবকিছুতে সমান মালিকানা উপহার দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। মহানবী সা. ও তাঁর সাহাবা কিরাম কুরআনের বৈশ্বিক চেতনা অনুযায়ী মুসলিম জাতির অধিবাসকে কোনো স্থির-নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সীমিত করেন নি, কখনো আঞ্চলিক বিভক্তি স্বীকার করেন নি।

এক দেহের মতো এ জাতিকে তাঁরা এক দেহের মতোই অবিভাজ্য রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। দিন দিন নতুন অঞ্চল বিজিত হচ্ছিলো এবং ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছিলো নববী রাষ্ট্র, একসময় জাযিরাতুল আরব ছাড়িয়ে পারস্য, আফ্রিকা, রোমসহ আধা দুনিয়া মুসলিমদের পদানত হয়। তখনও রাষ্ট্র একটাই ছিলো– অর্ধ জাহান নিয়ে এক ইসলামী রাষ্ট্র। ইসলামের আদর্শিক দার্শনিক তাৎপর্য সম্পর্কে যাঁদের ধারণা আছে, তাঁরা বুঝতে পারেন যে পুরো দুনিয়া মুসলিম করায়ত্ত হলেও রাষ্ট্র একটাই থাকতো– এক দুনিয়া, এক জাতি, এক দেশ। আজকের পৃথিবীতে এতো মুসলিম, কিন্তু তাঁদের অধিকাংশ নববী আদর্শ থেকে বিচ্যূত, ফলে শতধাবিভক্ত।

কুরআনের পরিবর্তে আজ আমাদের মাথার ভেতরে ভূগোল ঢুকে পড়েছে, সেই ভূগোল দিয়ে আমরা কেবলই পরস্পরের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর নির্মাণ করছি। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।