উপরের প্রথম ও শেষ ছবি ২ টি হাসান ইকবাল সজীব এর। মাঝের ছবিটির প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
তার আগে সজিব সম্পর্কে একটু বলে নেই। সজিব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি।
হাসান ইকবাল সজিব গতকাল সকালে প্রয়াত হয়েছেন।
স্বাভাবিক নয় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সজিবের। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বিদ্যাগঞ্জ স্টেশনের কাছে তার ট্রেনে-কাটা মরদেহ পাওয়া যায়।
আমার সাথে সজিব ভাই এর পরিচয় প্রায় ৩ বছর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও ঢাবি ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। খুব বেশি দিন হয় নি আমি ছাত্র ইউনিয়ন এর সাথে যোগ দিয়েছি ।
তবে সজিব ভাই এর সাথে পরিচয় হবার সমসাময়িক দিনগুলো থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সাথে আমার একটা সৌহার্দ্ধপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
যেদিন পরিচিত হই সেদিন তার সাথে হাত মেলাতে গিয়ে একটু থমকে যাই , আমি বলাম “সজিব” উনিও বললেন “সজিব”। কয়েক সেকেন্ড আমি চুপ করে থাকি ; তখন তৃতীয় ব্যাক্তি সংশয় দূর করলেন “আরে, উনার নামও সজিব”।
অনেক দিনের পরিচয় হলেও খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে কখনোই কথা হয় নি। আড্ডাতো নয় ই।
উপলক্ষও তৈরী হয়নি। একটু দূর থেকেই যতটুকু আদান প্রদান তাতেই আমি তার প্রতি যথেষ্ঠ কৈতুহলী ছিলাম। এর প্রথম কারনটা হচ্ছে সজিব ভাই খুব ভাল পোষ্টার-ব্যানার লিখতে পারতেন। ছাত্র ইউনিয়নের বহু পোষ্টার-ব্যানারে সজিব ভাই এর তুলির আঁচড় লেগে আছে । দ্বিতীয় কারনটা হচ্ছে তার হাসি।
দেখা হলে সৈহার্দ্ধ বিনিময় এর সময় ঠৌঁটের কোণায় আলতো করে যে হাসিটি ফুটিয়ে তুলতেন তা আমার কাছে কখনো কৃত্রিম মনে হয় নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন এর ব্যানার গুলোতেও সজীব ভাই এর তুলির আঁচড় লাগাতে হত। গত কিছু দিন আগে নবীনদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যে ব্যানারটি করা হয় তা সজিব ভাই রাত জেগে লেখে দিয়েছিলেন। ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন জবি ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি আবির ভাই তাকে খুব অনুরোধ করেন রাতের মধ্যে ব্যনারটি করে দেয়ার জন্য । সজিব ভাই তার অন্য গুরূত্বপূর্ন কাজ রেখে আমাদের জন্য ব্যানারটি লিখে দেন।
পরেরদিন সকালে আমাদের একজন কর্মী সেটা তার কাছে থেকে নিয়ে আসার কথা ছিল। ঘটনা ক্রমে সেই কর্মী যেতে না পারায় ঐদিন আর ব্যানারটি লাগানো হয় নি। এতে করে সজীব ভাই একটু ক্ষুন্ন হন। আবির ভাই পরদিন ঢাবি ক্যাম্পাসে গেলে তাকে পাকড়াও করেন “তাড়া দিয়া ব্যানার করাইলা, এখন টানাও না কেন। ” কিন্তু জবি ছাত্র ইউনিয়নের কিংবা জবির কোন আন্দোলনে সজিব ভাই এর কোন সাহায্য চাইলে কখনোই বিমুখ করেন নি।
সম্প্রতি জবির “উন্নয়ন ফি বিরোধী” আন্দোলনে “প্রগতিলীল ছাত্র জোট” এর জন্য বেশ কিছু ফেস্টুন দরকার হলে সজীব ভাই এর স্বরনাপন্ন হই। রাত তখন প্রায় ১০ টা । পরদিন সকালে ৮ টার মধ্যে ফেস্টুন চাই। টেনশন ছিল না। কারন সজিব ভাই আলতো করে মাথা নেড়ে জানলেন তিনি পারবেন।
সঙ্গে ঠোঁটের কোনায় আলতো করে একটু হাসি ছড়িয়ে দিলেন.....। আমি জানি না ঐ ফেস্টুনগুলোই তার লেখা শেষ ফেস্টুন ছিল কিনা। উপরের মাঝের ছবিটিতে যে ফেস্টুনটি দেখা যাচ্ছে তা সজিব ভাই এর লেখা ঐ ফেস্টুনগুলোর একটি। ।
সজিব ভাই এর মৃত্যু সংবাদ যখন পাই তখন আমরা (প্রগতিশীল ছাত্র জোট নেতৃবৃন্দ) জবি’র হল এর দাবি ও ২৭/৪ বাতিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জবি গ্রশাসনের সাথে একটি মিটিং এ ছিলাম।
আবির ভাই এর পাশেই ছিলাম আমি । আমাকে আস্তে করে বললেন “সজিব ভাই মারা গেছেন”। আমি তখন আর কিছূই ভেবে উঠেতে পারছিলাম না। সুধু একটা কথাই বারবার তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে...........। বেশ কয়েক মিনিটের জন্য আমি আনমনা হয়ে গেলাম।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে আমি যে তাকে একটা অনুরোধ করেছিলাম আর তিনি বারাবরের মত মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে দিলন। সজিব ভাইকে পোষ্টার ব্যানার লেখার জন্য আর বিরক্ত করবো না বলে আমি ঠিক করলাম আমার জবি ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন সহকর্মীকে সজিব ভাই এর শিষ্যত্ব গ্রহণের জন্য পাঠাবো। তিনি বললেন “হ্যাঁ , পাঠায় দিও। ” আমি পরিকল্পনা করে রাখছি শুক্রবার(আজ) তার সাথে আতিক ও অন্য আর একজনকে পরিচয় করিয়ে দিব। কিন্তু আতিক বাড়িতে চলে যাওয়ায় ভাবলাম ২-১ দিন পরেই যাব।
সজিব ভাই, তুমি কখনো ফাঁকি দেও নাই। যখনই আবদার নিয়া গেছি কখনও ব্যস্ততার অযুহাত দেখাও নাই। আর কখনও তোমাকে রাত জাগিয়ে পোস্টার লেখাব না বলে আমি চাইছিলাম ২টা ছেলে তোমার কাছ থেকে পোস্টার লেখা শিখে নিবে। মুখেমুখে রাজী হয়ে গেলা... ....... । কিন্তু তুমি কি তোমার কথা রাখলা......??? আমারে যে কথা দিছিলা তা তোমার একবারও মনে পড়ে নাই????? মৃত্যুর আগে তুমি নাকি আনমনা হয়ে গিয়েছিলা.........।
রেল লাইন ধরে মাথা নিচু করে হাটতে হাটতে কি ভাবতেছিলা???? মৃত্যুর কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করার জন্য কমরেড সজিব রেল লাইনের উপর ঠায় দাড়িয়ে আছে এই দৃশ্যটা আমি একবার এর জন্যও চিন্তা করতে পারছিনা। যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন তুমি সে জন্য আত্মহত্যা করোনি......!!!! “সজিব আত্মহত্যা করেছে” আমি এই কথাটা কখনোই বিশ্বাস করবো না!!!!!
ছাত্র ইউনিয়নে তুমি আর আমি দুইটা সজিব ছিলাম । আবির ভাই ঐদিন টিএসসিতে বসে আমাদের আন্দোলনের বিষয়ে আলাপ করছিল। আলোচনায় বারবার আমার নাম আসায় এক জন বলল “সজিব তোগ জগন্নাথে যাইব কেন আন্দোলন করতে” । আবির ভাই বলল “আমাগও একটা সজিব আছে।
” আমাদের নাম নিয়া একটা বিভ্রান্তি তৈরী হয়। আমি মনে প্রানে চাই এই বিভ্রান্তি আজীবন চলুক। তোমার নাম বারবার উঠে আসুক আমাদের আলোচনায়। হঠাৎ করে কেউ হয়ত জিগেস করবে “কোন সজিবের কথা বলতেছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সজিব না জগন্নাথের??”
জাহিদুল ইসলাম সজিব,
বাংলদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,
২৭ জানু ২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।