অন্ধদের রাজ্যতে এক চোখা মানুষটি রাজা এবং আমি সেই রাজা। কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াত শিবির। ব্লগাররা হয়ে ওঠেন মধ্যমণি। একাত্তরের মতোই ইসলামকে ব্যবহার করে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা চালায় জামায়াত চক্র। গুটিকতক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগেও শুরু হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা।
তাদের নাস্তিক প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। বিরোধীদলের নেতা খালেদা জিয়াও আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে অভিহিত করেন। শাহবাগের নেতাদের নাস্তিক অভিহিত করে জামায়াতের হেফাজতকারীরা চট্টগ্রামে যেতে বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে শুরু হয় ব্লগার বিরোধী সরকারি অভিযান।
সস্তা সেন্টিমেন্টকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম, বিরোধী দলসহ জামায়াতপন্থিরা নাস্তিকতা আর ধর্ম অবমাননার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলে।
ইস্যু হয়ে ওঠে নাস্তিকতা। নাস্তিকদের এত যে গালমন্দ করা হচ্ছে, কেউ কী বলতে পারেন বাংলাদেশে কোন আইনে নাস্তিক হওয়া অপরাধ?
বাংলাদেশের পেনাল কোডে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কোন্ ধরনের কর্মকাণ্ড ধর্ম অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে তাও উল্লেখ রয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত করলে, উপাসনালয় বিনষ্ট বা অপবিত্র করলে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটালে ইত্যাদি অবমাননার আওতায় পড়ে। কোথাও বলা হয়নি কেউ নাস্তিক হলে তা ধর্ম অবমাননা হবে।
১৮৬০ সালে ব্রিটিশদের হাতে আইনটির সূত্রপাত। ইউরোপে তখন নাস্তিক্যবাদের জয়জয়াকার। এর অনেক আগেই আধুনিক নাস্তিক্যবাদের জন্মও হয়। ধর্মের সঙ্গে চিন্তার অসঙ্গতির কারণে চিন্তাবিদদের এক সময় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তখন তা শুধুই ইতিহাস। বিজ্ঞান চর্চা যেমন অবাধ হয় তেমনই অনেক দেশ ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণও করে।
তাই নাস্তিকতা ধর্ম অবমাননা হলে আইনটিতে তা স্পষ্ট করেই লেখার কথা। বরং এ আইন করার সময় ভারতে কোনো রাজনৈতিক দলই ছিল না; ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তো দূরের কথা। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকে সুরক্ষা দেওয়া কোনো উদ্দেশ্য এ আইনের বুনিয়াদে নেই।
হরহামেশা দেখা যায় ‘মালাউন, কাফের, মুরতাদ নাস্তিক’ ইত্যাদি শব্দ হেয় করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কার কী ধর্মী পরিচয় তা নির্ধারণ করার অধিকার রাষ্ট্র রাখে না।
তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তো অধিকার থাকার প্রশ্নই আসে না। ফলে কাউকে ‘মালাউন, কাফের, মুরতাদ নাস্তিক’ বলে অভিহিত করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? কোন আইনে? এসব কি অবমাননা নয়? যারা নাস্তিক বলে তরুণ সমাজকে গালমন্দ করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেই কেন? আইনের শাসন মানে জনগণ এবং রাষ্ট্র উভয়কেই আইন মেনে চলতে হবে। আইন সম্পর্কে সচেতন করার দায়িত্ব রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না। তথচ সরকার, মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম কেউই বলছে না – কোনো আইন নেই যেখানে নাস্তিকতাকে অপরাধ বলা হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, গণজাগরণের সংগঠকরা বলেছেন তাদের আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।
সমাবেশে ধর্মগ্রন্থ পাঠের ব্যবস্থা করে তাদের প্রতিপক্ষকে জবাবও দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠে নামা হেফাজত নেতাদের বক্তব্য শুনে চোখ কপালে না তুলে উপায় নাই। তারা বলছেন- শাহবাগের ব্লগাররা নাস্তিক-মুরতাদ এবং চট্টগ্রামের গণজাগরণ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ নাই। শাহবাগের মতো চাটগাঁয়েও হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী, গণতন্ত্রী, জাতীয়তাবাদী এবং ভিন্ন মতাদর্শের অনেকেই আন্দোলন করছেন। তাদের কেউ হয়তো ব্লগেও লিখেন।
কী অদ্ভুত তাদের নাস্তিকতার ধারনা!
এদেশে ইসলাম চর্চা শুরুর কয়েক হাজার বছর আগে থেকেই নাস্তিকতার চর্চা চলছে। বৌদ্ধ অথবা জৈন ধর্মে সৃষ্টিকর্তার স্বীকৃতি নেই। হিন্দু ধর্মের মীমাংসা ও সাংখ্য দর্শন ইশ্বর ধারণাকে কীভাবে দেখে? চার্বাক দর্শন তো আদি বস্তুবাদী দর্শন। হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্ম জায়েজ কিন্তু নাস্তিকতা নাজায়েজ! অদ্ভূত সব কাণ্ডকারখানা!
নাস্তিক শব্দটি দিয়ে প্রথমে বেদ বিরোধীদের বোঝাত, পরে এর অর্থের বিস্তৃতি ঘটে। গ্রাম বাঙলার সাধারণ মুসলমানরা যা কিছু বিশ্বাস করে তার সবই কি আরব থেকে আমদানি করা? কঠিন অসুখে বা সমস্যায় সাধারণের বিশ্বাস সেটি অতীত কোনো খারাপ কাজের ফল।
ঘোর ধর্মান্ধ আমার এক স্কুলশিক্ষকও এমন বিশ্বাস ধারণ করেন। কোনো এক শিক্ষককে অশ্রদ্ধা করায় তার এক পরিচিতের করুণ পরিণতির কাহিনী শুনিয়ে ছিলেন তিনি। কর্মফলের উপর এই অগাধ বিশ্বাস ভারতবর্ষের প্রাচীন বিশ্বাসগুলোর একটি। যারা ইসলামের জন্য শহীদ হতে ইচ্ছুক তাদের ঘরেও এ বিশ্বাস লালিত পালিত হচ্ছে। কর্মফলের বিশ্বাস নির্মাণে এদেশের আদি নাস্তিকদের অবদান কতটা? ফলে প্রকৃত নাস্তিকতা নির্মূল জেহাদিদের জন্য যেমন আত্মঘাতী তেমনই ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ হওয়ার উপক্রম হবে।
কদিন আগে ফেইসবুকে একজন লেখে ‘ইসলামে নাস্তিক হত্যা জায়েজ। ’ ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্য কোনো মতাবলম্বীকে হত্যা করা তো দূরে থাক অবমাননা করার অধিকারও বাংলাদেশের আইন দেয় না। কাফের মুরতাদ গালমন্দ দেয়াসহ এসব প্রচারণার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
এদেশে আগেও ধর্ম নিয়ে অনেক ফেৎনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে শাসকেরা ধর্মকে ব্যবহার করেছে। একাত্তরে গণহত্যা চালানো হয়েছে ধর্মের নামেই।
পাকিস্তান আমলে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানোয় জামায়াতের গুরু মওদুদির বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও আহমদিয়াদের উপর হামলা হয়। কদিন আগে ধর্মের নামে শহীদ মিনার ভাঙা হয়েছে, জাতীয় পতাকা ও বায়তুল মোকাররমের জায়নামাজ পোড়ানো হয়েছে।
হীন স্বার্থে যারা ধর্মকে রাজনৈতিক অঙ্গণে নামিয়ে আনছে তারাই ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। এক মন্ত্রীকে রাজাকার বলায় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা হয়েছে।
ওই নেতার আইনজীবীর দাবি ‘ওসব রাজনৈতিক কথা। এজন্য মামলা হলে সব নেতার বিরুদ্ধে প্রতিদিন দশটা করে মামলা করা যায়। ’ যদি রাজনৈতিক বক্তব্যের দোহাই দিয়ে নেতারা পার পেতে পারেন তবে কেন ব্লগাররা নন? যতদূর বুঝতে পারি ব্লগাররা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই লেখালেখি করে থাকেন, অন্য সব বিষয়ের মতো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কোনো বিষয় তাতে স্থান পেয়ে থাকে। সব ব্লগ না পড়েও বলতে পারি – যে দেশে একটা কার্টুন আঁকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে সেদেশে কোনো ব্লগের মন্তব্য নিয়ে ৪/৫ বছর পর ধর্ম অনুভূতি জাগ্রত হওয়া বিস্ময়ের বটে! এসব মতলববাজি ছাড়া আর কিছু নয়।
ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কারণে ইসলামকে এদেশের আলেমরা নানাভাবে ব্যাখ্যার স্বাধীনতা পাচ্ছেন।
রাষ্ট্র ইসলামের সংজ্ঞা নির্ধারণ করলে এ অধিকার সবাই হারাতেন। রাষ্ট্রকথিত বিশ্বাসের বাইরে ইসলাম সম্পর্কে কোনো কথা বললে অনেকের জেল-জুলুম-হুলিয়াই শুধু নয় মৃত্যুদণ্ডও হতে পারত। জনপ্রিয়াতার খাতিরে তাবলিগের ব্যাখ্যাটি রাষ্ট্র গ্রহণ করলে বিপাকে পড়ত খোদ মওদুদীপন্থিরাই (জামায়াত-শিবির)। তারা মওদুদীবাদকে ইসলাম বিচ্যুত বলে আখ্যায়িত করেছে। তাই জামায়াতের ইসলাম ব্যাখ্যা যদি ধর্ম অবমাননা না হয় তবে অন্যদের বেলা তা অপরাধ হবে কেন?
আলাদতে তালাশ করলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অনেক মামলার খোঁজ মিলবে।
কবি আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও তার লেখার জন্য এমন একটি মামলা হয়েছিল। তাকে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়নি। নোটিশ পেয়ে নিজেই আদালতে হাজির হয়েছিলেন। গেল বছর গাজীপুরে এক ব্যক্তি সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে এক পাশে দুর্গার অন্য পাশে মক্কার ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানোয় ধর্ম অবমাননার মামলা হয়েছিল। যদিও জানি না এতে ধর্ম কীভাবে অবমাননা হয়েছে তবু তিনি আদালতে গিয়ে ক্ষমা চান।
ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সরকার এখন ঘোষণা দিয়েই মাঠে নেমেছে। সত্যিকার অবমাননাকারী হলে সবাই আত্মগোপন করার কথা। কিন্তু সংবাদেই প্রকাশ কেউ পালিয়ে যায়নি। অথচ কোনো মামলা না দিয়ে চোরাকারবারী ধরার মত বিনা মামলায় রাতের বেলা তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তিনজনকে! এর প্রয়োজনীয়তা কী? এর নাম কি আইনের শাসন?
সম্প্রতি সৌদি সরকার মক্কা-মদিনায় নবীর স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা ভেঙে ফেলা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মসজিদ আল হারামের পূব অংশ ভাঙা হচ্ছে।
সৌদি বাদশার নির্দেশে গত দুই দশকে নবী ও খলিফাদের স্মৃতিবিজড়িত মক্কার ৯৫ ভাগ স্থাপনা ধংস করা হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠছে বড় বড় হোটেল, পশ্চিমা ব্র্যান্ডের দোকান, রূপ চর্চার বডিশপ ইত্যাদি। ওহাবিরা মনে করেন নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলোকে মূল্য দেওয়া মানে শিরক করা। এখন কাবার দিকে সেজদা দেওয়া শিরক কিনা কেউ প্রশ্ন তুললে কি ধর্ম অবমাননাকারী বিবেচিত হবেন? যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন ইসলামে এটা সেটা পৌত্তলিক তবে তিনিও কি অপরাধী? নবীর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ-স্থাপনা ভেঙে ফেলা যদি ধর্ম অবমাননা না হয় তবে বাংলাদেশের কোনো মসজিদ ভেঙে ফেলা কি ইসলাম অবমাননার দায়ে দুষ্ট হতে পারে? অভিযুক্ত কোনো ব্লগার কোনো মসজিদ ভাঙতে যাওয়া তো দূরে থাক ভাঙার কথাও বলেনি। অথচ অন্য ধর্মের উপাসনালয় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়েছে; কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
মদিনা সনদ ইসলামের একটি দলিল যা বিভিন্ন মতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি রূপ রেখা দেয়।
বলাবাহুল্য কাফের মুরতাদ নাস্তিক ইত্যাদি ঘৃণা প্রচার করে যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অসম্ভব তা শিশুও বোঝে।
বর্তমানে এক দেশের ঘটনা অন্যদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় ইসলামের নামে যেমন অন্যদের অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলে তেমনই যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানসহ অন্য মতাবলম্বীদের অধিকার খর্ব করতে খ্রিস্টান ধর্মকে ব্যবহারের চেষ্টাও হয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এক ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা অর্থ এই নয় যে আপনার মত অন্যকে মানতে বাধ্য করবেন।
’
সম্প্রতি জামায়াত-শিবির চক্র জায়নামাজ পোড়ানোর পর বায়তুল মোকাররমের খতিব আহ্বান জানিয়েছেন- ‘রাজনীতিকে মসজিদ থেকে দূরে রাখার। ’ এদেশে শান্তি আনতে, শান্তিতে ধর্ম অনুশীলন করতে এই আহ্বান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম ও ধর্মের নামে রাজনীতির পার্থক্য তুলে ধরা দরকার। এ সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সরকার ও আলেমদের ভূমিকা রাখতে হবে। যেমন দরকার সৌদি বাদশার মক্কা-মদিনায় নবীর স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা ভাঙার প্রতিবাদ করাও।
যারা মক্কায় নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা ভাঙলে নির্বিকার থাকে তাদের স্পষ্টতই নবীর প্রতি কোনো মহব্বত নেই। আর যা নেই তাতে আঘাত লাগার প্রশ্ন আসে কী করে?
মুজতবা হাকিম প্লেটো: সাংবাদিক। (সংগৃহীত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।