‘ন্যায় যুদ্ধে বাঙালি’
গতবছরই আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের চল্লিশবছর পালন করেছি। কিন্তু বিজয়ের আনন্দে আমরা বুক ফুলিয়ে আনন্দ করতে পারিনি, বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নিতে পারি নি। এদেশের বাতাসে এখনো বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে সেইসব শকুনেরা যারা যারা আমাদের দেশের মানচিত্র খামচে ধরে রেখেছে। এই কারণে আমরা গত চল্লিশ বছরে যতটা এগুনোর কথা ততটা এগুতে পারিনি বরং কিছু জায়গায় আরো পিছিয়ে গিয়েছি। এর মূলে রয়েছে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীদের হীন চক্রান্ত, কূটকৌশল এবং তথাকথিত মুখোশধারী কিছু বুদ্ধিজীবী।
বিগত চল্লিশ বছর ধরে এরা বাংলাদেশকে দিন দিন অসুস্থ্য করে ফেলছে। আমারদের বুকে চেপে দিয়েছে এক জগদ্দল পাথর। এই বোঝা আমরা যতই সরাতে চেষ্টা করি সেটি আরো পাষাণ হয়ে আমাদের ওপর চেপে বসে।
২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ তারিখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল শুরু হবার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের দোসররা এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপঃপ্রচার চালাতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক জনাব আসিফ নজরুল (মূল নাম মো. নজরুল ইসলাম) এই সব অপঃপ্রচারের একজন প্রধান দেশীয় মুখপাত্র হয়ে এখন আমাদের মাঝে বিরাজ করছেন।
চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এবং তাদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর কথাবার্তার সাথে সুর মিলিয়ে তিনি যেসব বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন সেগুলি স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে।
এসব গিরগিটি মার্কা বুদ্ধিজীবীর মুখোশ যখন এক এক করে খুলে পড়ে আমরা অসুস্থ্য হয়ে যাই। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, জনাব আসিফ নজরুলের ভোল পাল্টানো এই বাতিক অনেক পুরোনো।
তার গিরগিটিসুলভ কর্মকান্ডের কিছু নমুনা –
৯০ এর গণআন্দোলনের সময় যখন তিনি ছাত্রদল করতেন, তখন তিনি সেসময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোলাম ফারুক অভির খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। এবং পরবর্তীতে তিনি অভিকে নায়কের মর্যাদা দিয়ে একটা বইও বের করেন “ক্যাম্পাসের যুবক” নামে ( শিখা প্রকাশনী থেকে ২০০৪ সালে প্রকাশিত।
)
আসিফ নজরুল নিজের স্বার্থের জন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েও সে তা করেনি এবং সময়মত কাউকে জানায়নি যে সে ঐ কাজ করতে পারবেনা।
আসিফ নজরুলের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে থাকাকালীন মুখোশটি খুলে যাবে শাহরিয়ার কবির "জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি" র (১৯৯৫ সালে প্রকাশিত) বইটি পড়লে - যেখানে তিনি বিশদ লিখেছেন জাহানারা ইমাম এবং ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাথে এই আসিফ নজরুল কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল?
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার হলো এখন তিনি দু’মুখী সাপের মতো কথায় কথায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে থাকার কথা বলেন আবার চিহ্নিত রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নিয়মিত সাফাই গান।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চ্যানেল আই এর একটি টক শোতে তিনি জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছেন এবং টক শোতে জোর গলায় তার সততার সনদ বিতরণ করেছেন।
সর্বশেষ সনদ তিনি দিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে। গত ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে বাংলাভিশন আয়োজিত টকশো “ফ্রন্টলাইন” এ অংশ নিয়ে তিনি যা বলেছেন সেটি হুবহু তুলে দেয়া হলো,
“...যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে (যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে) তাদের সম্পর্কে তো আপনার একমাত্র দেলওয়ার হোসেন সাইদী ছাড়া আমার জানামতে আর কি, বাকী সবারই আপনার যতটুকু আমি পড়াশুনা করেছি, ইনভল্ভমেন্ট ছিল (যুদ্ধাপরাধ/মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে)।
"
এখন তিনি আবার ভোল পাল্টে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তিনি স্পষ্ট মিথ্যাচার করেছেন এই বলে যে, “কখনো বলিনি সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নয় “
কিন্তু, ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই তার ঐ টকশোটি পাওয়া যাবে।
এই কী একজন শিক্ষকের চরিত্র? প্রকাশ্যে মিথ্যাচার? তাও মুক্তিযুদ্ধের নিউক্লিয়াস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ?
লোকটা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির মতো সংগঠনে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলেছে, আবার এখন ভোল পাল্টিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের মতো প্রতিষ্ঠানকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিরপরাধ বলে দাবি করছে – এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিইবা বলা যায়?
যুদ্ধাপরাধীচক্র ৩০ লাখ শহীদের গুলিবিদ্ধ করোটির উপর দাড়িয়ে এই বাংলার মাটিতে খেলেছে দম্ভের হোলি খেলা। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এ দেশে আসিফ নজরুলের মতো কিছু ক্ষমতালোভী, ভোল পাল্টানো দোসরদের কারণে।
এই যদি থাকে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেতনা, চরিত্র তাহলে জাতির চেতনা বিচ্ছুরণের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এখানে এসে কি শিখছে?
তাই, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে রাজাকারদের দালাল এবং ভোলপাল্টানো বুদ্ধিজীবি রাজাকারদের দালাল আসিফ নজরুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকান্ড থেকে বহিঃস্কারের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি অক্ষর লেখা হয়েছে, তার পক্ষে দৃপ্ত কন্ঠে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। রুখে দিতে হবে সব অপশক্তির কূটকৌশল। আমাদের ঘরে-বাইরে প্রকাশ্যে এবং ছদ্মবেশী শত্রুরা এখন অনেক বেশী সক্রিয় এবং সংগঠিত। এবং বেশ কিছুদিন ধরে তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী চক্র জামায়াত এ বিষয়ে দেশে বিদেশে নানা প্রকার অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার পাশাপাশি ১১ দফা কর্মসূচী গ্রহন করেছে।
এটা নিয়ে “যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে জামায়াতের ১১ কৌশল!” শিরোনামে ২৭ আগস্ট, ২০১০ তারিখে দৈনিক কালের কন্ঠে মাসুদ কার্জনের একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়-
সেখানে থেকে জানা গেছে- “জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর পরিকল্পনা সংবলিত কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। “
রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা আছে, “উদ্ধার করা নথি অনুসারে জামায়াতের 'নিজস্ব' বিশিষ্টজনদের তালিকায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, কমরেড সাইফুল হক ও ফরহাদ মজহার। সেমিনারে দেওয়া তাঁদের বক্তব্য ধারণ করে বুকলেট ও ভিসিডি তৈরি করে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। “
এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে আসিফ নজরুলের ছবি কভারে রেখে ওয়ার ক্রাইম ডকুমেন্টারি নামে যুদ্ধাপরাধীদের সংঘবদ্ধ প্রচারনা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া আছে বাংলা, ইংরেজি আর আরবি ভাষাতে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী চক্র একের পর এক মাস্টার প্লানের বাস্তবায়ন আমরা আমরা দেখেও না দেখার ভান করবো অথবা মৃদু প্রতিবাদ করেই চুপ হয়ে যাবো সেটা কখনোই সম্ভব নয়।
আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। তাদের জন্য রেখে যেতে চাই কলঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ।
তাই, আসুন স্বাধীনতার এই ৪১তম বছরের সূচনালগ্নে নিষিদ্ধ করি এসব বিষাক্ত কীটকে। চিৎকার করে বলি, “দূর হ শ্বাপদ, যুদ্ধাপরাধী, তাদের দোসর ও রাজাকার, এ দেশ আমার। ”
কৃতজ্ঞতা: নিঝুম মজুমদার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।