নামের সাথে কামের কিছু মিলতো থাকবোই
"রাজাকার-বিরোধী নীতিবান রাজনৈতিক নেতৃত্বের তালিকা"
যখনঃ
- এরশাদ বিরোধী আন্দোলেনর সময় আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াত এক সাথে আন্দোলন করেছে।
- বিএনপি বিরোধী আন্দোলেনর সময় আওয়ামীলীগ-জামায়াত এক সাথে আন্দোলন করেছে।
- জোট সরকারের বিরুদ্ধে মহাজোট করার জন্য আওয়ামীলীগ তালিকাভুক্ত রাজাকার ও তার দলকে সাথে নিয়েছিল।
- রাজাকারের সন্তানের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাতনীর বিয়ে দিয়েছিল।
তখনঃ
আওয়ামীলীগের রাজাকারপ্রীতির প্রতিবাদে তাদের যে সকল বর্ষীয়ান নেতা-কর্মী দল ত্যাগ করেছেন বা সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন তার একটি তালিকা প্রয়োজন।
কারো কাছে কোন নাম থাকলে দয়া করে এখানে লিখবেন।
"উপরের শিরোনাম ও বিষয়বস্তুতে আমার একটি পোস্ট আছে যেখানে ৪০টির বেশি মন্তব্য এসেছে কিন্তু কার্যকরী একটি নামও আমি পাইনি। ব্লগ ছাড়াও আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতর মধ্যে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। দেখা যাক কয়টা নাম আমি পাই। নিচের লেখাটি আগের পোস্টের সাথে প্যারালাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
এবং এই পোস্টের মাধ্যমে কাওকে হেয় করা বা কাউকে মহান করা উদ্দেশ্য নয়। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং সঠিক তথ্য উন্মোচনই এর লক্ষ্য। যদি আপনার কাছে কোন মুলব্যান তথ্য থাকে তবে আমাদের মাঝে শেয়ার করুন। সবার কাজে লাগবে। "
১৯৭১ সালের মহান মুক্তযুদ্ধের সময় দেশের মধ্যে থেকে যারা বিভিন্ন ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং ৩০ লক্ষ প্রানের হত্যা কারী, হাজারো মা-বোনের ধর্ষনকারীরা "রাজাকার-আলবদর" নামে আমাদের কাছে পরিচিত এবং ঘৃনিত।
যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়েছে অথচ কোন রাজাকারদের তালিকা হয়নি। যাও আছে তাও স্বয়ং সম্পুর্ন নয়। এখানে অনেকের নামই দেখা যায়না যাদের নাম পরে এসেছে।
১৯৭৩ সালের ৩ অক্টোবরে দৈনিক বাংলা প্রকাশিত রাজাকার-আল বদরের তালিকা ছিল। আগ্রহী পাঠক তালিকাটি দেখতে পারেন।
http://www.muktadhara.net/page42.html
তালিকা থেকে যে তথ্য পেলাম এটা যদিও স্বয়ংসম্পুর্ন নাও হয় তার পরেও কাছাকাছি থেকে একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে।
এ তালিকা থেকে যা পাওয়া যায় তা হলো রাজাকার-আলবদরের মুল সদস্যরা হলো-
- মুসলিমলীগ
- জামায়াত
- ছাত্রসংঘ
- খেলাফত আন্দোলন
- ইত্তেহাদুল উমমাহ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
নেতৃত্ব, সংখ্যা এবং ক্ষমতার বিবেচনায় মুসলিমলীগকে প্রথম সারিতে এবং জামায়াত-সংঘ দ্বিতীয় সারিতে।
৭১ এ দেশ স্বাধিন হবার পর বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতায় সেসময়ে বিচারের হাত থেকে বেচে যায় স্বাধিনতা বিরোধীরা। যদিও দালাল আইন বলবত থাকে।
এবং তাদের এ আইনের আওতায় যে কোন সময় বিচার করা সম্ভব।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের পর মুলত স্বাধিনতার পক্ষের শক্তি বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং এ সুযোগের ১০০ ভাগ কাজে লাগায় জামায়াত। মুসলিমলীগ হয়ে পড়ে নেতৃত্বশুন্য এবং তারা দিনে দিনে বিলোপ হতে থাকে।
রাজাকার বলতেই কেন জামায়াত?
আমার ধারনা, মুসলীম লীগ বিলোপের ফলে স্বাধিনতা বিরোধী শক্তির মধ্যে জামায়াত শুধু টিকেই থাকে না তারা ধর্মীয় ইস্যু তৈরী করে তাদের দিকে জনমত গড়তে সক্ষম হয় এবং দিনে দিনে ফুলে ফেপে এত বড় হয় যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি পর্যন্ত তার সাথে হাত মিলাতে বাধ্য হয় ক্ষমতায় যাবার জন্য। স্বাধিনতা বিরোধীদলগুলোর মধ্যে বর্তমানে জামায়াতই টিকে থাকার কারনে এখন রাজাকার বলতে শুধু জামায়াতকেই বুঝানো হয়।
নব্য রাজাকার কারা?
খুব সহজ ভাবে দেখলে যারা জামায়াত ও তার অংগ সংগঠেনর সাথে জড়িত অথবা সমর্থনকারী তাদেরকেই রাজাকার বলা হয়ে থাকে।
এখানে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা ঠিক এখানেই। জামায়াতের অনেক নেতা স্বাধিনতা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত তা তালিকা দেখেই বুঝা যায়। আর তালিকা দেখে তাদের শাস্তি দেয়া আমি পুর্ন সমর্থন করি। সমস্যা হয়ে যায় তাদের সমর্থনকারীদের নিয়ে।
কেন সমস্যা হয় তা নিচে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জিয়া ক্ষমতায় এসে রাজাকারদের পুনর্বাসন করেন উন্মুক্ত রাজনীতির কথা বলে।
এরশাদ তার ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য "ইসলাম"কে রাস্ট্রধর্ম ঘোষনা এবং হুজুরদের সাথে ভাল সম্পর্ক রেখে চলেন।
মুল সমস্যা শুরু হয় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়। মাঠ দখলে জামায়াতের ভুমিকায় বিএনপি-আওয়ামীলীগ জামায়াতকে ব্যবহার করতে বাধ্য হয় এবং জামায়াতও রাজনৈতিকভাবে পুর্ণ লাইসেন্স পায় এ সময়।
এরশাদ পতনের পর গোলাম-আযমের দোয়া নিতে খালেদা-হাসিনার নির্লজ্ব প্রচেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে অপমানিত করে।
বিএনপির শাসনামলে গোলামআযমকে কারাগারে বন্দী করে মুলত তাকে নিরাপদ করা হয়।
বিএনপি বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখহাসিনা সহ আওয়ামীলীগের জামায়াত প্রীতি দেখে রাজাকারও বোধহয় লজ্জা পেয়েছিল।
চারদলীয় জোট গঠনের ফলে কে বিএনপি আর কে রাজাকার এ পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিএনপি-জামায়াত ভাই ভাই হয়ে যায়।
একজন আরেকজনের সভা সমিতিতে অংশগ্রহন শুরু করে। জামায়াত বিএনপি এর বি-টীম হয় যায়। ইসলামী শাসন অপেক্ষা ক্ষমতায় যাওয়ার এবং টিকে থাকার কুটচাল দেখে অবাক হতে হয়। জামায়াতের ধর্মীয় ইস্যু থেকে ক্ষমতার দিকে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় অথবা সক্রিয় সমর্থন না করায় এবং এই কার্যক্রমে খুশি না থাকার কারনে বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের প্রায় অর্ধশত নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জোটের আন্দোলন, জোট গঠন এবং মহাজোট ইত্যাদির নাটক আমরা দেখেছি।
আওয়ামীলীগ-রাজাকারদের সাথে লিখিতচুক্তির ইতিহাসও আমাদের সবার জানা।
বাংলাদেশের মোট ভোটারের ৪% এর মতো ভোটার জামায়াতকে ভোট দেয়।
বিএনপি এর উল্লেখযোগ্য নেতা কর্মী সমর্থক জামায়াতকে তাদের বন্ধু মনে করে।
আওয়ামীলীগের কোন নেতাই (এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে) জামায়াত প্রীতির প্রতিবাদে দল ত্যাগ করেন নাই বরং রাজাকারদের সাথে বসে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জলিল। আওয়ামীলীগ একদিকে রাজাকার বিরোধী মনভাব দেখাবে আবার তাদের সাথেই তাদের আনতরিকতা করবে?
দেশের একটি বড় জনগোষ্টি আজ ইচ্ছায় হোক বা ফাদে পড়ে হোক রাজাকারদের হয় সমর্থক অথবা তাদের লালন-পালনকারী হিসেবে প্রমানিত।
খুব সহজেই নব্য-রাজাকারদের তালিকায় তাদের নাম চলে আসে। এ তালকায় জামায়াত-শিবির এর নেতা-কর্মী-সমর্থক যেমন আছে তেমনি আছে আওয়ামীলীগ-বিএনপি এর নেতা-কর্মী-সমর্থক।
তাহলে কি রাজাকার রা মাফ পেয়ে যাবে?
কখনই নয়, কখনই নয়, কখনই নয়।
মুল রাজাকারদের বিচার করতে হবে এ ব্যপারে কোন আপোষ নাই। আর যারা নব্য রাজাকার স্বামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
কিভাবে?
আগামি নির্বাচনে আপনার প্রার্থীর দিকে লক্ষ্য রাখুন। সে যদি সরাসরি রাজাকার হয় তাইলে তো কথাই নাই, আর যদি তাদের সমর্থক হয় অথবা রাজাকারের প্রতি মৌন সমর্থন অথবা সাময়িক সুবিধার জন্যও যদি রাজাকারপ্রীতি দেখায় তাহলে তাকে ভোটদানে বিরত থাকুন এবং তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন সে যে দলের হোক। বাংলাদেশের সকল দল তাদের আদর্শ থেকে শত শত মাইল দুরে সরে গেছে। তাই দল দেখে ভোট দেয়ার দিন শেষ। আর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত সকল বড় দল রাজাকার দোষে দুষ্ট।
কাজেই তাদের সংস্রব ত্যাগ করাই উত্তম।
সত্যিকারের রাজাকার মুক্ত, ৭১এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশপ্রেমিকদের নিয়ে দেশ গড়ার সময় এখনই। কারো মিষ্টি কথায না ভুলে, কোন দলের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস না রেখে তাদের কার্যক্রম দেখে তাদের বিচার করুন। নিজের বিবেক কে কাজে লাগান।
আগামি ভোটে আর নয় রাজাকার, আর নয় রাজাকার লালন-পালন-সমর্থনকারী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।