কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর
এবার কাজের সন্ধানে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন দুই বাংলাদেশী। দালালের খপ্পরে পড়ে ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে বহু দেশ ঘুরে অনেক কাণ্ডের পর পৌঁছেছেন ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিমের আমাজন বনাঞ্চলীয় শহর ব্রাসিলিয়াতে। বাংলাদেশী সুলতান ও আবদুল আউয়াল এখন প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় ব্রাজিলে ভিসা ও কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আল-জাজিরার সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাত্ হওয়ার সুবাদে তারা উঠে এসেছেন গণমাধ্যমে।
পৃথিবীর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় বন আমাজন।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়ানা, পেরু এবং ভেনিজুয়েলার বিশাল ভূখণ্ডজুড়ে এই জঙ্গলের অবস্থান। তবে বেশিরভাগ অংশ পড়েছে ব্রাজিলের মধ্যে।
নানা বৈচিত্র্যের গাছগাছালি আর জীব-জন্তুতে ভরা এই জঙ্গলের ব্রাজিল অংশে অল্পসংখ্যক মানুষ থাকে, এর বেশিরভাগই ব্রাজিলীয় বা বলিভিয়ান। এখানে দ্বীপদেশ হাইতির লোকজনও রয়েছে। কিন্তু সাতসমুদ্র তেরো নদী দূরের ওই গহীন জঙ্গলে বাংলাদেশী! অবিশ্বাস্যই বটে।
চাকরির খোঁজে সেখানে গেছেন ওই দুই বাংলাদেশী। সমপ্রতি কাকতালীয়ভাবে তাদের সন্ধান পেয়েছেন আল-জাজিরার এক সাংবাদিক।
পরিবেশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার আমাজন জঙ্গলে আল-জাজিরার সাংবাদিক গাব্রিয়েল সোন্দোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দু’জন লোক। সোন্দো প্রথমে ভেবেছিলেন এরা ব্রাজিল নয়তো বলিভিয়ার নাগরিক হতে পারেন। কিন্তু না, পরিচয় জানতে চাইতেই এএইচএম সুলতান আহমেদ (৩৬) মৃদু হেসে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি।
’ পাশেই বসা ছিলেন তার বন্ধু আবদুল আউয়াল। সেখানেই ঘাসের ওপর বসে তাদের সঙ্গে বহুক্ষণ কথা বলেন সোন্দোর।
তারা জানান, ব্রাসিলিয়ায় এসে পৌঁছেছেন গত সোমবার (৯ জানুয়ারি ২০১২) দিবাগত রাতে। মূল প্লাজার মেঝেতে তারা রাতে ঘুমিয়েছেন, আপাতত কোথাও যাবেন না। কারণ তারা খুব ক্লান্ত।
আপনারা কেন ব্রাজিল এসেছেন? জবাবে সুলতান জানান, তারা শুনেছেন ব্রাজিলের অর্থনীতি উদীয়মান এবং দেশটি কর্মসংস্থানের জন্য ভালো হবে। তারা আশা করছেন, সেখানে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। সুলতানের আশা, খুব শিগগির তিনি বৈধ কাগজপত্র পেয়ে যাবেন এবং একটি চাকরিও জুটে যাবে। এ আশাতেই তিনি খুব খুশি।
ব্রাজিলে নবাগত সুলতানের পর্তুগিজ ভাষাটাও জানা নেই।
রঙের মিস্ত্রি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। এক সময় গ্রিসে কাজ করেছেন। তার বন্ধু আউয়াল একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান, আগে মালয়েশিয়াতে কাজ করেছেন। তারা দু’জনেই জানান, সংসারের খরচ চালানোর জন্য তাদের চাকরির দরকার। সুলতানের পরিবারে তার স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু রয়েছে।
আর আউয়ালের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, এক বছরের একটি মেয়ে এবং দুই বছরের একটি ছেলে।
সুদূর দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ থেকে আটলান্টিক পেরিয়ে ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের এক দূরবর্তী কোনায় কীভাবে এসে পৌঁছলেন সেই অভিযাত্রার গল্পটাও রীতিমত অবিশ্বাস্য। প্রথমেই রয়েছে দালাল পর্ব। এই দীর্ঘ অভিযানের জন্য তারা দালালকে দিয়েছেন ৯ হাজার ডলার। সেই দালাল তাদের ইকুয়েডরে ভালো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; জানিয়েছিল সহজেই পৌঁছানো যায় সেদেশে।
সুলতান ও আউয়াল সেই টাকা পরিশোধ করে ঢাকা থেকে দুবাই যাত্রা করেন।
দালাল তাদের উড়োজাহাজে তুলে দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বিমানে করে ১৫ ঘণ্টার এক বিরতিহীন যাত্রায় দুবাই থেকে সাওপাওলোতে যান তারা। ইকুয়েডরের কথা হলেও তাদের পাঠানো হয় ব্রাজিলে। অথচ সেদেশের ভিসা তাদের ছিল না।
বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সাওপাওলো পৌঁছার পর তারা বিমানবন্দর ছাড়তে পারেনি। সেখান থেকে তাদের চিলির সান্তিয়াগোতে পাঠানো হয়।
সান্তিয়াগোতে দীর্ঘ যাত্রাবিরতির পর অন্য আরেক ফ্লাইটে তারা পৌঁছান ইকুয়েডরের কিতোতে। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করেন তারা। ভিসা ছাড়া ব্রাজিলে ঢোকার জন্য আরেক দালালের খপ্পরে পড়ে পকেট থেকে এ বাবত ৫ হাজার ৪০০ ডলার গচ্চা দিতে হয়েছে।
এরপর শুরু হয় তাদের আরেক যাত্রা। একটি পাবলিক বাসে করে তাদের কিতো থেকে পেরুর রাজধানী লিমাতে পাঠানো হয়। টানা ২৬ ঘণ্টার পর তাদের আরেকটি বাসে করে ১২ ঘণ্টা পথ পেরোতে হয়। এরপর তাদের পাঠানো হয় পাহাড়ি এলাকা ইনাপারিতে। শহরটি ব্রাজিল সীমান্তের কাছাকাছি।
আরেক দালাল তাদের ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গলের কাছে পৌঁছে দেয়।
তারা ঢাকা ছাড়েন ২২ দিন আগে এবং অনেক কাণ্ডের পর পৌঁছেছেন ব্রাসিলিয়াতে। এখানে তাদের প্রায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে। সুলতানের হাতে আছে মাত্র ২০ ডলার এবং কয়েকটি ব্রাজিলিয়ান কয়েন। বাড়িতে ফোন করার মতো সেলফোনটিও বিক্রি করে দিয়েছেন।
১০ ডলারে তারা সামান্য খাবার আর পানি কিনে খেয়েছেন। এখন তাদের পকেটে সাকুল্যে ১০ ডলার।
স্থানীয় কেন্দ্রীয় পুলিশ কার্যালয়ে তারা তাদের পাসপোর্ট পাঠিয়েছেন, যাতে তাদের কাজের অনুমতি মেলে। এতকিছুর পরও তারা দু’জনই
ব্রাসিলিয়াতেই থাকতে চান। এখানকার মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না।
এ কারণে সমস্যাটা আরও বেশি। তাদের সঙ্গে আল-জাজিরা সাংবাদিকের কথা বলার সময় এক মধ্য বয়সী ব্রাজিলীয় এসে জিজ্ঞেস করেন এরা কারা? এরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে বলতেই তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের রাজধানী, ঠিক না?
লিন্ক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।