হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় ১৯৯৬ সাল। তখন আমি বরিশাল জিলা স্কুলের ক্লাস সিক্সের ছাত্র। সবে মাত্র হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াই। নিজের মাঝে একটা বড় বড় ভাব আনার চেষ্টা করি। মাঝে সাজে বিড়ি টানারও চেষ্টা করি।
কিন্তু ধোঁয়া বুকের ভিতরে যাবার আগেই কেশে উঠি। “আমি এখন বড় হয়ে গেছি” এই ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য নানান চেষ্টা করি। খুব মনোযোগ দিয়ে সে সময় একটা মেয়ের পিছনে ঘুরতাম। সবাইকে বলে বেড়াতাম - জানিস ওর সাথে আমার লাইন (!) আছে! অথচ ওই মেয়ে তখন কিছুই জানত না! আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। এক সাথে কোচিংও করতাম।
আমি প্রায়ই ওর বাসার সামনে দাঁড়িয়েও থাকতাম! হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু সাব্রিনা আমাকে পাত্তাই দিত না। এরই মধ্যে আমাদের প্রেমে এক ভিলেনের আবির্ভাব হল। কোচিংয়ে একটা নতুন ছেলে ভর্তি হল। নাম ছিল সুমন।
সে ছিল মহাফ্যাশনিস্ট ছেলে। চুল ব্যাক ব্রাশ করত। সানগ্লাস পরত। আজিব ব্যাপার ছিল সে কখনো আমাদের সাথে কথা বলত না। শুধু মেয়েদের সাথে কথা বলত।
একদিন বিকেলে দেখলাম সে সাব্রিনার সাথে এক সাথে বসে বাদাম খাচ্ছে! মাথায় যেন আমার আগুন ধরে গেল! দাঁত কিরমির, হাত নিশপিশ করল। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না পাছে সাব্রিনা আমাকে বখাটে ভাবে!
চিন্তায় তো আমার রাতে ঘুম আসে না। গেল আমার সাব্রিনা ... চিন্তায় চিন্তায় যেন আমার চোখে কালি পড়ে গেল!
এরই মধ্যে বিনা মেঘে ব্জ্রপাতের মত একটা ঘটনা ঘটল। বাসা থেকে হোমওয়ার্ক না করে আনার অপরাধে কোচিংয়ের স্যার আমাকে সাড়া ক্লাস বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। ওই দিন আমি পুরাই যেন ফিউজ হয়ে গেলাম! সাব্রিনার সামনে আমার মান সম্মান আর রইল না।
সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হল যখন দেখলাম সুমন মুচকি হাসছে।
কয়েকদিন পরের ঘটনা।
একদিন বিকেলে কোচিংয়ে যেয়ে শুনলাম এ সপ্তাহে টেস্টগুলোতে হাইয়েস্ট পেয়েছে সুমন। ক্লাসে ঢুকে ওর ভাব দেখে আমার মাথা ঘুরিয়ে উঠল। আজকে সে চোখ থেকে সানগ্লাসই খুলছে না।
আমাকে দেখে কেমন যেন একটা তাছিল্যের ভাব করল! মেয়েরা ক্লাসে আসার পর সে যেন মাটির এক ফুট উপর দিয়ে হাঁটতে লাগল!
একটু পর ... বিধাতা আমাকে এভাবে সুযোগ দেবেন ভাবতেও পারিনি! আমি সুমনকে বললাম, “সাবাস! চালিয়ে যা। শালা বাঘের বাচ্চা!” আমার কথা শুনে সে যেন মেয়েদের সামনে গর্বে ফুলে ফুলে উঠতে লাগল। কিন্তু যখন আমি বললাম, “মামা, বাঘ যে তার লাল মাথা বের করে আছে ... সবাই ভয় পাবে তো ... “ সুমন কিছুই না বুঝতে পেরে এদিক অদিক তাকাতে লাগল আর ভাব নিয়ে আমাকে বলল, “পাগল ... !” হঠাৎ কয়েকজন চিৎকার করে ওকে বলল, “বেকুব, তুই পাগল! প্যান্টের চেইনটা লাগা! লাল অ্যান্ডু দেখা যায় ... !”
এরপর সুমন দৌড়ে ক্লাস থেকে যে বের হল সেদিন আর ফিরল না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।