আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার সব গল্প প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল - নাগিব মাহফুজের মুখোমুখি

নাগিব মাহফুজের জন্মশতবার্ষিকীতে তার সাক্ষাৎকার উপস্থাপন করা হলো। ১৯১১ সালে কায়রোয় জন্মগ্রহন করেন নাগিব মাহফুজ। ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৮৮ সালে। ৬০ বছর বয়সে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কেবল সন্ধ্যার দিকে লেখার সময় পেতেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম ‘আবাথ আল-আকদার’ (ভাগ্যের পরিহাস) এর ফারাওদের কাহিনীকে ইংরেজি সাহিত্যের স্যার ওয়াল্টার স্কটের ঐতিহাসিক উপন্যাসের মত করে তিরিশ বা চল্লিশটি বইয়ের ধারাবাহিকতায় লেখার ইচ্ছা থাকলেও সমসাময়িক মিশর নিয়ে লেখার ইচ্ছায় সেই পরিকল্পনার সমাপ্তি ঘটে দ্রুত।

তার ৩০০০ হাজার পৃষ্ঠার বিশালায়তন কায়রো উপন্যাসত্রয়ী মধ্যবিত্ত মিশরীয় সমাজকে তুলে ধরে। এই উপন্যাসত্রয়ী মাহফুজকে তার প্রজন্মের মূল ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। ১৯৯২ সালে প্যারিস রিভিউ ওয়েবসাইট কতৃক গৃহীত ও প্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজার শব্দের সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো। প্যারিস রিভিউ: আপনি কখন লেখালেখি শুরু করেছিলেন? নাগিব মাহফুজ: সেই ১৯২৯ সালে। সতর বছর বয়সে।

অনেক দিন ধরেই আমার সব গল্প প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। মনে আছে, মাজালার সম্পাদক সালমা মুসা বলতেন, তোমার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে কিন্তু তুমি এখনো সেখানে পৌঁছাওনি। এরপর আসলো ১৯৩৯ সাল, আমার স্পষ্ট মনে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো, হিটলার তখন পোলান্ড আক্রমন করেছে। মাজালার প্রকাশকদের কাছ থেকে সেসময় অকল্পনীয়ভাবে এক আকস্মিক উপহার পেলাম- আমার গল্প ‘আবাথ আল-আকদার’ (ভাগ্যের পরিহাস) ছাপা হলো।

এটা আমার জীবনের এক অমূল্য ঘটনা হয়ে থাকলো। প্যারিস রিভিউ: এরপর থেকে কি লেখালেখি আর প্রকাশ সহজেই একসঙ্গে চলতে থাকলো? নাগিব মাহফুজ: না... অবশ্য সেই গল্পটা প্রকাশ হওয়ার পর আমার এক সাহিত্যিক বন্ধু এসে আমাকে জানাল যে, তার এক ভাই এর ছাপাখানা আছে। সে তার কিছু সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে একটা প্রকাশনা কমিটি করে তেমন সাফল্য পেল না। তবে ১৯৪৩ এর দিকে আমরা নিয়মিত প্রকাশনা চালু করলাম। বছরে একবার আমার গল্প প্রকাশ হতে থাকলো।

প্যারিস রিভিউ: আপনি তো কখনোই জীবিকার জন্য লেখালেখির উপর পুরোপুরি নির্ভর করেননি? নাগিব মাহফুজ: না। আমি সবসময় সরকারি চাকুরে থেকে গেছি। তবে ঘটনা উল্টোটাই ঘটতো, আমি সবসময় সাহিত্যের পেছনে পয়সা ঢেলেছি। বই আর পত্রিকা কিনেছি। লেখালেখি থেকে অর্থপ্রাপ্তিটা ঘটেছে বেশ পরে।

আমি প্রায় আশিটা গল্প কোন সম্মানী ছাড়াই ছাপিয়েছি। এমনকি আমার প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো থেকেও আমি কিছূ পাইনি, ওগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল ঐ প্রকাশনা কমিটিকে সাহায্য করার জন্য। প্যারিস রিভিউ: তাহলে কখন আপনি লেখালেখি থেকে উপার্জন শুরু করলেন? নাগিব মাহফুজ: আমার ছোটগল্প যখন ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় প্রকাশ হতে থাকলো। এক্ষেত্রে ‘জাবলয়ি’ গল্পটা সবচে সফল কারণ এই গল্প থেকে আমি অন্যান্য যে কোন গল্পের চেয়ে বেশী অর্থ পেয়েছি। আমার প্রথম অনূদিত উপন্যাস মিদাক গলি।

অনুবাদটা প্রথম খাইয়াত নামের লেবাননের এক ব্যক্তি প্রকাশ করেছিল কিন্তু আমি কিংবা অনুবাদক কেউই কোন টাকাপয়সা পাইনি কারণ সে প্রতারণা করেছিল। এরপর ১৯৭০ সালে হেইনেম্যান এটি প্রকাশ করে। এরপর এটি ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হয় এবং আমার অন্যান্য সাহিত্যকর্মেরও অনুবাদ হওয়া শুরু হয়। প্যারিস রিভিউ: মিশরীয় তরুণ লেখকদের সঙ্গে কি আপনার তেমন কোন যোগাযোগ আছে? নাগিব মাহফুজ: প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় আমি কাসর আল-নীল হোটেলে হাজির হই। সেখানে নতুন লেখকেরা আমন্ত্রিত হয়।

অনেকেই আসেন: কবি, লেখক, সাহিত্যরসিক... ১৯৭১ এ সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে বন্ধুদের জন্য আমি আরো বেশী সময় দিতে পারি। প্যারিস রিভিউ: সেনসরশিপ এর কারনে কি আপনাকে তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল? এজন্য কি আপনাকে কোন পান্ডুলিপিতে পুনরায় হাত দিয়ে হয়েছিল? নাগিব মাহফুজ: বর্তমানে তেমন কিছু ঘটেনি। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আল-কাওরা আল-জাদিদা এবং রেডিবাস এ সেনসরশিপের হাত পড়েছিল। আমাকে বামপন্থী ভাবা হয়েছিল। রেডিবাসকে উত্তেজক মনে করা হয়েছিল কারণ সেখানে জনগণের হাতে এক রাজা হত হয়েছিল।

সেসময় আমাদের রাজা জীবিত ছিলেন। আমি সেনসরশীপে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাখ্যা দিলাম, এটি কেবল এক ঐতিহাসিক কাহিনী। কিন্তু তারা বললেন, এটা মিথ্যে ইতিহাস। তাদের মতে, সেই রাজা জনগণের হাতে মারা পড়েননি, বরং এক অদ্ভূত পরিস্থিতিতে মৃত্যূবরণ করেন। প্যারিস রিভিউ: আপনি কি স্যাটানিক ভার্সেস পড়েছেন? নাগিব মাহফুজ: আমি পড়িনি।

যে সময় এটা প্রকাশ হয়েছিল সেসময় আমার পড়ার ক্ষমতা কমে এসেছিল। বর্তমানে আমার দৃষ্টিশক্তি বেশ খারাপ হয়ে গেছে। তবে আলেকজান্দ্রিয়ার আমেরিকান কালচারাল এটাশে বইটার প্রতিটি অধ্যায় ধরে ধরে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এই বইয়ে যে অপমান পাওয়া গেছে তা আমি অগ্রহনযোগ্য মনে করি। রুশদী এমনকি নবীর নারীদেরকেও অপমান করেছেন! হ্যাঁ, আমি যে কোন ধারণার সঙ্গে তর্ক বিতর্ক করতে পারি, কিন' অপমানের সঙ্গে তো তেমন কিছু চলে না।

অপমান হচ্ছে আদালতের বিষয়। একই সঙ্গে আমি খোমনেীর অবস'ানকে সমানভাবে বিপদজনক বলে মনে করি। তার এমন বিচারিক আদেশ দেয়ার ক্ষমতা নেই- এটা ইসলামি পন্থা না। ইসলামি নীতি অনুসারে, যখন কেউ ধর্মদ্রোহীতার দায়ে অভিযুক্ত হয় তখন তার সামনে দুটি রাস্তা থাকে- অনুতপ্ত হওয়া বা শাস্তি ভোগ করা। রুশদীকে এ সুযোগ দেয়া হয়নি।

আমি সবসময় রুশদীর লেখালেখির অধিকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছি, সে যা বলতে চায় তা সে কোন ধারণার প্রকাশের মাধ্যমে জানাতে পারে। কিন্তু কোনকিছুকে অপমান করার তার কোন অধিকার নেই- তা সে নবীই হোক বা অন্য যে কোন পবিত্র কিছু। তাই নয় কি? প্যারিস রিভিউ: আপনাকে নিশ্চয় বহুবার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পরের অনুভূতি সম্বন্ধে কথা বলতে হয়েছে। আপনার কি আগে থেকেই কোনভাবে মনে হয়েছিল যে আপনি পুরস্কারটা পেতে যাচ্ছেন? নাগিব মাহফুজ: একবারেই না। আমার স্ত্রী মনে করত আমার এটা প্রাপ্য কিন্তু আমি সবসময়ই মনে করতাম যে এটা একটা পশ্চিমা পুরস্কার।

আমার মনে হতো, ওরা কখনোই একজন মিশরীয়কে বেছে নিবে না। অবশ্য একটা গুজব ছিল, দুজন আরব লেখককে তালিকায় রাখা হয়েছে: ইউসুফ ইদ্রিস ও এডোনিস। প্যারিস রিভিউ: আবার আপনার লেখার প্রসঙ্গে আসি: আপনি কি কোন নিয়মিত রুটিন মেনে লেখালেখি করেন? নাগিব মাহফুজ: আমাকে সবসময় এটা করতে বাধ্য হতে হয়েছে। সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত আমি চাকুরিতে থাকতাম। চারটা থেকে সাতটা পর্যন্ত লিখতাম।

এরপর দশটা পর্যন্ত পড়তাম। এই ছিল আমার প্রাত্যহিক রুটিন, অবশ্য শুক্রবার ছাড়া। আসলে আমি কখনোই আমার ইচ্ছামত কাজ করতে পারিনি। তবে প্রায় তিন বছর হলো আমি লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছি। প্যারিস রিভিউ: আপনি লেখা শুরু করলে শব্দকে কি তাদের গতিতে চলতে দেন, নাকি আগেই টুকটাক নোট নিয়ে রাখেন? কোন বিশেষ বিষয় মাথায় রেখে কি লেখা শুরু করেন? নাগিব মাহফুজ: ছোটগল্পগুলো সরাসরি আমার হৃদয় থেকে আসে।

অন্যান্যগুলোর ব্যাপারে বলব, আমি আগে কিছুটা গবেষণা করি। কায়রো উপন্যাসত্রয়ীর কথা ধরলে বলা যায়, লেখা শুরুর আগে আমি বেশ বিশদ গবেষণা করেছি। প্রতিটি চরিত্রের উপর আমি ফাইলে নোট রেখেছিলাম। সেরকম না করলে আমি মাঝপথে পথ হারিয়ে ফেলতাম, অনেক কিছুই মনে রাখতে পারতাম না। কখনো কখনো কাহিনীর সাধারণ গতিপথে স্বাভাবিকভাবে কোন বিষয়বস্তু বেরিয়ে আসে, আর কখনো লেখা শুরু করার আগে আমার মাথায় একটা বিষয় দানা বেঁধে থাকে।

আমি যদি আগে থেকেই জানি যে, আমাকে এমন এক মানব চরিত্র তুলে ধরতে হবে যে যে কোন পঙ্কিল পরিসি'তিতেও উঠে দাঁড়াতে পারবে, তাহলে আমি একজন নায়কের সৃষ্টি করব যে এই ভাবনাকে রূপায়িত করতে পারবে। তবে আমি এভাবেও গল্প লেখা শুরু করি: একটি চরিত্রের আচরণ নিয়ে বিশদ লেখায় যাই, এরপর আপনাআপনি বিষয়বস্তু এসে হাজির হয়। প্যারিস রিভিউ: কোন গল্প শেষ করার আগে আপনি তা কতবার কাটাছেঁড়া করেন? নাগিব মাহফুজ: আমি প্রায়শই পরিবর্তন পরিবর্ধন করি, আর অনেক কিছুই কেটে ফেলি। সারা পৃষ্ঠা জুড়ে লিখি, উল্টোদিকেও। অনেকসময়ই আমি বড় ধরনের পরিবর্তন করে থাকি।

পরিবর্তন পরিবর্ধনের পর কাহিনীটা পুনরায় লিখে তারপর প্রকাশকের কাছে পাঠাই। এরপর পুরনো সব কাগজ ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলি, সেসব কিছুই ছুঁড়ে ফেলি। প্যারিস রিভিউ: আপনি কি আপনার কোন চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে এক করে দেখেন? নাগিব মাহফুজ: কায়রো উপন্যাসত্রয়ীর কামাল আমার প্রজন্মকে তুলে ধরেছে- আমাদের চিন্তাভাবনা, আমাদের পছন্দ, আমাদের উভয়সঙ্কটাবস্থা এবং মনস্তাত্ত্বিক সংকট। এ হিসেবে বলা যায়, কামালের চরিত্র অনেকটা আত্মজৈবনিক। তবে সে একইসঙ্গে বিশ্বজনীন।

আমি অবশ্য বাবা আবদুল গাওয়াদ এর প্রতিও বেশ একাত্মতা বোধ করি, তিনি সব বিষয়ে খোলামেলা, বন্ধুদের ভালবাসেন এবং ইচ্ছা করে কাউকে আহত করেন না। এই দুই জনে মিলে আমার ব্যক্তিত্বকে যেন আধাআধিভাবে পূর্ণ করে দেয়। আবদুল গাওয়াদ খুব মিশুক, সামাজিক, শিল্প-সঙ্গীত ভালবাসেন। কামাল অন্তর্মুখী, লাজুক এবং রাশভারী ও আদর্শবাদী। প্যারিস রিভিউ: আপনার বেশীরভাগ নায়িকারা সমাজের নিম্নস-রের কেন? আপনি কি তাদের মাধ্যমে বৃহৎ কিছু প্রতীকায়িত করতে চান? যেমন ধরুন, মিশর? নাগিব মাহফুজ: না।

সমাজের নিম্নস্তরের নারীদেরকে উপস্থাপনের মাধ্যমে আমি কেবল এটুকুই বলতে চায় যে, এসব উপন্যাস যে সময়কে তুলে ধরেছে সে সময়ে নারীদের কোন স্বাধীনতা ছিল না। কোন নারী ভাল স্বামী না পেলে বা খারাপ স্বামীটিকে তালাক দিলে তার জীবন বলে কিছু থাকত না। দুর্ভাগ্যজনক হলো, কখনো কখনো তাদের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়াত অবৈধ সম্পর্ক মেনে নেয়া। এই তো সেদিনও নারীদের তেমন কোন অধিকার ছিল না- এমনকি বিবাহের বিষয়ে স্বাধীনতা, তালাক এবং শিক্ষা বিষয়ে মৌলিক স্বাধীনতাও ছিল না। এখন নারীরা যেহেতু শিক্ষা গ্রহন করছে, তাই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।

কারণ শিক্ষাই একটি হাতিয়ার। কোন কোন সমালোচক মিদাক গলির হামিদাকে মিশরের প্রতীক হিসেবে ভেবে থাকেন, কিন্তু তেমন কিছু ভেবে আমি তাকে উপস্থাপন করিনি। প্যারিস রিভিউ: কোন বিষয়টি আপনার হৃদয়ের কাছাকাছি? যেসব বিষয় নিয়ে আপনি সবচে বেশী লিখতে ভালবাসেন? নাগিব মাহফুজ: স্বাধীনতা। ঔপনিবেশিকতা থেকে স্বাধীনতা, রাজার পরম শাসন থেকে স্বাধীনতা এবং সমাজ ও পরিবারের প্রেক্ষাপটে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা। এ ধরনের স্বাধীনতা একটা থেকে আরেকটায় প্রবাহিত হয়।

আমার উপন্যাসত্রয়ীতে যেমন, বিপ্লবের পর রাজনৈতিক স্বাধীনতা আসলে আবদুল গাওয়াদের পরিবারের সদস্যরা তার কাছে আগের চেয়ে বেশী স্বাধীনতা দাবী করে। প্যারিস রিভিউ: আচ্ছা, নায়কের ধারণার ব্যাপারটা কি পরিস্কার করবেন? আপনার গল্পে যেন নায়কদের অস্তিত্ব দেখা যায় না। এমনকি এখনকার মিশরীয় লেখকদের লেখাতেও নায়কের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়ে না। নাগিব মাহফুজ: এটা সত্যি যে আমার বেশীরভাগ গল্পেই কোন প্রথাগত নায়ক নেই- কেবল কিছু চরিত্রকে পাওয়া যায়। কেন? আমি আমাদের সমাজের দিকে এক সমালোচকের দৃষ্টিতে তাকাই, আর সেখানে আমি সমাজের যেসব মানুষকে দেখতে পাই তাদের মাছে অসাধারণ কিছু খুঁজে পাই না।

আমার আগের প্রজন্ম যারা ১৯১৯ এর বিদ্রোহ দেখেছিল তারা নায়কোচিত আচরণ দেখতে পেয়েছিল- একজন কর্মী অস্বাভাবিক বাধা পেরোতে সক্ষম, এমন ধরনের নায়ক। তওফিক আল-হাকিম, মুহাম্মাদ হুসাইন হেইকাল, ইব্রাহিম আবদ আল-কাদির আল-মাজিনি অবশ্য নায়কোচিত চরিত্র নিয়ে এনেছেন। তবে সামগ্রিকভাবে আমাদের প্রজন্ম একেবারে ঔদাস্যপূর্ণ এবং তাই আমাদের মাঝে নায়কের দেখা পাওয়া দুর্লভ। আপনি এখন কোন নায়ককে উপন্যাসে তুলে ধরতে পারেবেন না যদি না সেটি ফ্যান্টাসি ধরনের উপন্যাস হয়। প্যারিস রিভিউ: আপনার মতে একজন নায়ক কেমন? নাগিব মাহফুজ: প্রাচীন আরবি সাহিত্যে অনেক নায়কের উপসি'তি আছে, তারা সবাই ঘোড়সওয়ার, বীরযোদ্ধা।

কিন্তু এ যুগে আমার কাছে সেই ব্যক্তিই নায়ক যে কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলে এবং প্রচন্ড বিরূপ পরিস্থিতিতেও সেসবের প্রতি অনুগত থাকে। সে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, নিজে সুযোগসন্ধানী নয় এবং এক শক্ত নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। প্যারিস রিভিউ: আপনি কি নিজেকে নায়ক মনে করেন? নাগিব মাহফুজ: আমি? প্যারিস রিভিউ: আপনি কি অন্যদের জন্য মডেল নন? আপনার সন্তান, সাধারণ জনগণ কিংবা সেই ব্যক্তি যে প্রতিকূলতার মাঝেও নীতিতে অবিচল থাকেন- সেসব মানুষের জন্য এক মডেল? নাগিব মাহফুজ: হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু আমি নিজেকে কোন নায়ক মনে করিনা। প্যারিস রিভিউ: তাহলে, আপনি নিজেকে কিভাবে বর্ণনা করবেন? নাগিব মাহফুজ: আমি সেই যে সাহিত্য ভালবাসে।

সেই জন যে বিশ্বাসী এবং নিজ কর্মে আন্তরিক। এমন একজন যে নিজ কর্মকে অর্থ ও খ্যাতির চেয়ে বেশী ভালবাসে। অবশ্যই, অর্থ ও খ্যাতি সামনে আসলে, তারা স্বাদরে গৃহীত হবে! তবে এরা কখনোই আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল না। কেন? কারণ আমি অন্য যে কোন কিছুর চেয়ে লেখালেখি বেশী ভালবাসি। এটা হয়ত অস্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু আমি যে অনুভব করি, সাহিত্যহীন জীবন অর্থহীন।

আমার সহচর হতে পারে ভাল বন্ধু, ভ্রমণ কিংবা বিলাসিতা। কিন্তু সাহিত্যের সংস্রবহীনতা সবকিছুকে দুর্বিসহ করে তুলবে বলে মনে হয়। এটা এক অদ্ভূত ব্যাপার, নাহ, আসলে এতো তেমন অদ্ভূত কিছু না কারণ বেশীরভাগ লেখকই তো এমন। তবে কথাটা এমন না যে, আমি সারাজীবন কেবল লিখে গেছি, আর কিছু করিনি। আমি বিবাহিত, আমার সন্তানাদি আছে।

এছাড়াও ১৯৩৫ সাল থেকে আমার চোখে এমন এক সংবেদন সৃষ্টি হয়েছে যা আমাকে গ্রীষ্মকালে লিখতে বা পড়তে বাধা দেয়। এটা আমার জীবনে এক ভারসাম্যাবস্থা আরোপ করে দিয়েছে- সৃষ্টিকর্তার পাঠানো এক ভারসাম্য! প্রতি বছর তিন মাস আমাকে এমন এক ব্যক্তির জীবন যাপন করতে হয় যে লেখক না। সেই তিনমাস আমি বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করি, সকাল পর্যন্ত বাইরে কাটিয়ে দিই। এই তো আমার যাপিত জীবন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.