বাট টাকা পাই না প্রচন্ড মাথা ব্যাথা, প্রথম দিন খুব একটা পাত্তা দেয়না কামাল, ভাবে সেদিন ও অফিসটা করবে, কেননা অফিস আর ওভার টাইম করেই যে এই ব্যস্ত ঢাকা শহরে টিকে থাকতে হয়- যেই ভাবা সেই কাজ, ঘর থেকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়ে জ্বর নিয়েই কামাল পৌছে যায় অফিসে, কিন্তু শরীর আর চলে না, দুপুর পর্যন্ত অফিস করে বসকে বলে বাসায় ফিরতে হয়, যাওয়া পথে বছর দুই আগের জ্বরের প্রেসক্রিপশান টা নিয়ে বের হয়, তাতে প্যারাসিটামলের সাথে আরো কিছু ঔষধ ছিলো। কামাল ঘরে যাওয়ার পথে দোকান থেকে সেগুলো কিনে নেয়। আগের বার অনেক জ্বর ওঠার পর ঐ অন্য ঔষধ খেয়ে খুব কাজে দিয়েছিলো, সেই ঔষধ ই কামাল কিনে, কিন্তু পরদিন জ্বর আরো বেড়ে ওঠে… কামাল তার স্ত্রী কে বলে তার এক ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দিতে… কিন্তু সেই ফোন আর দেয়া হয় না, এর ই মাঝে কামাল জ্ঞান হারানোর মত হয়ে যায়!! এর পর যখন কামাল চোখ খুলে, তখন সে হাসপাতালে ভর্তি!! ঘটনাটা কাল্পনিক, কিন্তু এমন ঘটনা আজ আর কল্পনা নয়, অহরহ কখনো আমাদের জীবনে, আবার কখনো বা আমাদের বন্ধুদের জীবনে ঘটে চলেছে এমন ঘটনা! কিন্তু এমন ঘটনার কারন কি?? দেড় বছর আগের সেই কার্যকরী ঔষধ পরবর্তিতে কোনো কাজই করতে পারলো না কেনো?? সহজ উত্তর দেয়া যায় – এন্টিবায়োটিক এর যথেচ্ছ ব্যবহার! এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা জরুরী ঠিক নয়, আমারা যা করছি, তাতে এই প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় অবস্থায় পৌছেছে!! এন্টিবায়োটিক – এই ঔষধের নামের সাথে বত্ত্রমানে সবাইই কম বেশি পরিচিত। পেনিসিলিন দিয়ে যাত্রা শুরু করে এন্টিবায়োটিক এখন সংখ্যায় অনেক, আবার একেকটার কাজের ধরন ও ভিন্ন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক একটি বড় স্থান দখল করে আছে! কিন্তু, আমাদের দেশে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে বররমানে এই এন্টিবায়োটিক এর রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হচ্ছে মানুষের শরীরে, যার জন্য অনেক এন্টিবায়োটিক যা এক সময় বহু মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করেছে, তা আর সেই মানুষের শরীরে কাজ করছে না!! সেজন্যই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা খুব জরুরী। কিভাবে ও কেনো এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হয়?? ব্যাকটেরিয়া তার জেনেটিক মিউটেশানের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠে আর একটি ব্যকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্ট হওয়া মাত্রই তা বিভিন্ন ভাবে অন্য ব্যকটেরিয়াকে রেজিস্ট্যান্ট করে ফেলে। কখনো প্লাসমিড এর মাধ্যমে আবার কখনো বা জাম্পিং জিন এর মাধ্যমে ব্যকটেরিয়া এই কাজ করে থাকে!! প্রশ্ন হচ্ছে, তবে কি এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেই তা রেজিস্ট্যন্ট হয়ে উঠবে? না তা নয়, তবে এন্টিবায়োটিক এর ভুল ব্যবহারের জন্য এমনটা হয়। ভুল ব্যবহারে ভিতর রয়েছে ঔষধের ডোস এ ভুল হওয়া, বা পর্যাপ্ত দিন পর্যন্ত ঔষধ না খাওয়া এবং সবচেয়ে বড় ব্যপার সঠিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা! প্রথম দুইটা ভুল নিজেরা সংশোধন করতে পারলেও তৃতীয় টার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া এবং কিছু ইনভেস্টিগেশান এর ও প্রয়োজন রয়েছে! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এন্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিক্রী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কিন্তু আমাদের দেশের কথা ভিন্ন, এই জন্য প্রয়োজন নিজেদের ভিতর সচেতনতা সৃষ্টি করা!! একটি সত্য ঘটনা বলে শেষ করি – এন্ট্রিক ফিভার বা টাইফয়েড জ্বরের জন্য এক সময় সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামের এন্টিবায়োটিক যথেষ্ট কার্যকরি থাকলেও এখন আর আগের মতো কাজ করে না অনেকের শরীরেই, শুধু মাত্র ঐ ঔষধের যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্যই এমনটা হয়েছে, এখন সেই টাইফয়েড রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক!!! আসুন, এন্টিকবায়োটিকের ভুল ব্যবহার প্রতিরোধে নিজে সতর্ক হই, অন্যকে সতর্ক করি! Powered By Plug N Play
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।