আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Merry Christmas : মুসলিম কি উদযাপন করবে??

"প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, নিঃসন্দেহে সে হল সফল। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। " আল ইমরান,আয়াত ১৮৫ উপরের এই ছবিটা আমি এবার ২৫ ডিসেম্বর ২০১১ আমার ফেইসবুক প্রোফাইলে দিয়েছিলাম।

উদ্দেশ্য ছিল আমার মুসলিম বন্ধুদের সচেতন করা এবং একটি গোনাহ থেকে বাচানো ! ছবি থেকেই বুঝতে পারছেন, খ্রিস্টানদের বড়দিন বা Christmas এর যে ধারণা, সেটা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক ! সূরা ইখলাস এর ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি ”He begets not, nor was He begotten" খ্রিস্টানরা যাকে যীশূ খ্রিস্ট বলে জানেন তিনি ইসলাম ধর্ম মতে আল্লাহর একজন নবী যার নাম ঈসা(আঃ)। হযরত ঈসা(আঃ) তার গোত্রের জন্য এক আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল বিকৃত হয়ে যায় এবং ইসলাম পৃথিবীতে আসার পর ইসলামই আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র ধর্ম -– এই হল মুসলমানদের বিশ্বাস। যাইহোক, এই মেসেজটি পোস্ট করার পর জনৈক খ্রিস্টান ব্যাক্তি মন্তব্য করেন, "“I hate religious fanatics/terrorists. It's no wonder our world is in religious chaos due to these bigots." “ তিনি আরো লিখলেন, “"Everybody should be allowed to practise what they believe in. Every religion thinks that their's is the true one. NOBODY knows, so let's all respect each other." গতকাল তার জবাব দিতে পেরেছি, লিখেছি, "“আপনার এই মন্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণই একমত যে, প্রত্যেককেই তার নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী চলতে দেয়া উচিত"” এবং আমিও সেটাই বলতে চেয়েছি। আমরা যদি এই জায়গায় একমত হই, তাহলে আলোচ্য ছবিটিতে যা বলা হয়েছে সেটা নিয়া আলোচনা করার আর কিছুই থাকে না ! ধরুন, আমেরিকাতে মদ খাওয়া হালাল, কিন্তু বাংলাদেশ হারাম। এখন এটাকে আপনি কি বলবেন? এটা কি উগ্রবাদ, গোড়ামি বা মৌলবাদ?? এটা হল দুটো দেশের আইন মাত্র।

যারা আমেরিকায় বসবাস করতে চায় তাদের আমেরিকার আইন কানুন মেনে চলতে হবে আর যারা বাংলাদেশে বসবাস করতে চায় তাদের বাংলাদেশের আইন কানুন মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে কোনই বাড়াবাড়ি নেই ! তেমনি, যারা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী, তারা তাদের ধর্মের বিশ্বাসকে নিজের মধ্যে ধারণ করবে এবং তাদের ধর্মীয় আচার অনুসরণ করবে। অন্য ধর্মে বিশ্বাসী কারো এতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মের কোন বিশ্বাস যদি অন্য কোন ধর্মের বিশ্বাস এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী ব্যাক্তিবর্গকে অবশ্যই সেই খিস্টান ধর্মীয় আচার থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা এটাকে কিছুতেই উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা বা গোড়ামী বলতে পারি না যেমন বলতে পারি না বাংলাদেশে মদ খাওয়া নিষেধ একটা ঘৃণ্য আইন ! এটা আসলে যার যার নিজের ধর্মকেই পালন করা।

ইসলাম ধর্মে কোথাও বলা নেই যে, যেসব খ্রিস্টান ক্রিসমাস পালন করছে তাদের ওপর গিয়ে হামলা কর। যদি কোথাও সেটা করা হয়, তবে এটা হবে সন্ত্রাস যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অন্য ধর্মের আচারের প্রতি প্রতিটি মুসলমানকেই শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, তবে এর মানে এই নয় যে তাকে সেই ধর্ম পালনেও অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রত্যকেই, সে কি করছে এবং কেন করছে সেটা বুঝতে হবে। যদি কোন খ্রিস্টান মুসলমানদের ধর্মীয় ইবাদত/আচার অনুষ্ঠান পালন শুরু করে তবে সে অবশ্যই তার ধর্ম অনুসারে গোনাহ করছে, কারণ সে তার নিজের ধর্মকে অনুসরণ করছে না।

যে কোন ধর্মের ক্ষেত্রেই তার মূল বিশ্বাস এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় আচারের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই ! যেমন কেউ যদি বলে মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল নয়, সেটা নিশ্চয় একজন মুসলমান মেনে নিতে পারে না। তেমনি কেউ যদি বলে যীশু বলে কেউ নেই, সেটাও কোন খাটি খ্রিস্টান মেনে নিতে পারে না। আরেকজন এই প্রসংগে একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েছেন, "The whole problem with the world is that fools and fanatics are always so certain of themselves, but wiser people so full of doubts" - quoted from Bertrand Russell." Bertrand Russell কি বলেছেন সেটা নিয়ে আমার কোন কথা নেই, কিন্তু আমি কি বলছি, না বলছি সেটা আমি বুঝছি কিনা সেটা বোঝা আমাদের সবার কাছে জরুরী হওয়া দরকার। আমাদের সব ধর্মের মানুষের মধ্যে আরেকটা সমস্যা আছে, সেটা হল, আমরা আমাদের নিজের ধর্মকে ঠিকমত জানার, বোঝার চেষ্টা করি না ! বরং কে কি বলল সেটা নিয়ে মেতে থাকি। আজকের অনেক মুসলিম পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ার খবর দেখে ইসলাম এবং Islamist Terrorism কে বোঝার চেষ্টা করেন ! এই পোস্ট এই অসময়ে দিলাম, কারণ অনেক দিন এই ব্যাপারটা আমি লক্ষ করেছি।

আমাদের অনেক মুসলমান ভাই বেশী উদার হয়ে গিয়েছেন, তারা সর্ব ধর্মের সব আচার অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করাটাকে আধুনিকতা এবং অগ্রসরতা হিসেবে দেখেন। আরে ভাই, একজন মুসলমান হয়ে যদি আপনি সনাতন ধর্মের মূর্তি পূজায় অংশগ্রহণ করেন, তবে আপনার ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল এর সাথেইতো সাংঘর্ষিক হয়ে গেল ! পূজোর প্রসাদ যদি খান যেটা কিনা দেব দেবীর নামে উৎসর্গকৃত, তাহলে তো আপনি এক আল্লাহর সাথে শরীক করার ব্যাপারটা মেনে নিলেন! কোন সনাতন ধর্মী কি আপনাকে জোর করেছে পুজোয় অংশ নিতে, প্রসাদ খেতে? আপনি কখনো হয়ত জানারও চেষ্টা করেন নি পুজোয় অংশ গ্রহণ, প্রসাদ খাওয়া হালাল নাকি হারাম ! কিন্তু পত্রিকায় ইসলাম বা মুসলিম সম্পর্কে কোন নেতিবাচক খবর দেখলে সেটা যাচাই না করেই চায়ের কাপে সেটা নিয়ে সমলোচনা করে ঝড় তুলতে, মোল্লা, ফতোয়াবাজ বলে উচ্চ কন্ঠ হতে সবার আগে থাকেন? এটা কেমন রে ভাই? অবশ্যই ইসলাম নিয়ে সমাজে বাড়াবাড়ি আছে, তবে সেটা কি ইসলাম এর সমস্যা না আমাদের সমাজের সমস্যা সেটা নিয়ে কি কখনো ভেবেছেন, সমাধানের পথ খুজেছেন?? কেউ যদি নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে চান, তবে এটা বুঝতে হবে, মুসলিম হল আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী ! শুধু নামের আগে মুহাম্মদ বা আব্দুর রহিম, আব্দুল করিম থাকলেই মুসলিম হওয়া যায় না, আল্লাহর খাতায় মুসলমান হিসেবে নাম থাকতে হবে। সুতরাং আমরা আমাদের কথা কাজে আরো সতর্ক হই, ইসলাম ধর্মকে জেনে বুঝে সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সরল পথ প্রদর্শন করুন, আমিন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী এবং সর্বজ্ঞ ! উপরের ছবির পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা এখানেঃ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।