আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রত্নসম্পদ চুরি: তদন্ত নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে বিরোধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ফ্রান্সের গিমে মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সংসদীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে খোদ কমিটিতেই বিরোধ দেখা দিয়েছে। এই বিরোধের এক দিকে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। অপরপক্ষে রয়েছেন বিএনপি মনোনীত সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি। তাদের বিরোধের কারণেই কোনো সুপারিশ না করে শুধু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত কমিটি। নিলোফার চৌধুরী মনির অভিযোগ, তদন্ত কমিটির প্রধান তারানা হালিম কারো সাথে আলোচনা না করেই তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন।

একই সঙ্গে তিনি আরো অভিযোগ করেন, মূল অপরাধীকে বিবেচনায় না এনে অন্য বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছে কমিটি। এদিকে তারানা হালিমের দাবি, মনি মাত্র একটি বৈঠকে উপস্থিত থাকায় মূল আলোচনার কিছুই জানেন না। ওই প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে ২০০৯ সালে তারানা হালিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-নিলোফার চৌধুরী মনি ও মমতাজ বেগম। ২০১০ সালের ১ আগস্ট এই কমিটির কাজের গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

১ জানুয়ারি ২০১২ কমিটির বৈঠকে এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও তা হয়নি। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের গিমে যাদুঘরে ‘মাস্টার পিসেস অব গ্যানজেস ডেল্টা’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের পাঁচটি যাদুঘর থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়। প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ফরাসি দূতাবাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ওই চুক্তি অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘর, মহাস্থান আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম, ময়নামতি আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম, পাহাড়পুর আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম ও বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ করা হয় পুরাকীর্তির এক বিশাল সংগ্রহ। পুরাকীর্তির একটি চালান পাঠানোর পর দ্বিতীয় চালান পাঠানোর আগেই বিমানবন্দর থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকের দু’টি বিষ্ণু মূর্তি খোয়া যায়।

এর পর দ্বিতীয় চালান পাঠানো স্থগিত রাখা হয়। ঘটনার পরে তৎকালীন শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা আয়ুব কাদরী পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকের কার্যবিবরনী থেকে জানা যায়, বৈঠকে নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে পাঠানো পুরাকীর্তির বিষয়ে উপ-কমিটির আলোচনা থেকে জানা যায়, ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ বলছে তারা পুরার্কীতিগুলো বুঝে পায়নি। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় বলছে ফ্রান্সের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের পুরাকীর্তিগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিলো।

অথচ পরবর্তী বৈঠকে ওই সুপারিশ না রেখেই তার অনুপস্থিতিতে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ’ এ সময় তিনি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে কমিটিকে জানান। কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, কমিটির ২০তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানান কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী । যদিও ১ জানুয়ারি ২০১২ ২০তম বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে সংসদ সচিবালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। ১ জানুয়ারি ২০১২ টেলিফোনে মনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরাকীর্তিগুলো ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের শাস্তির বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

বিমান, কাস্টমসসহ অন্যদের নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করেছে। ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানটিকে কেন ছাড় দেওয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এমনও হতে পারে তারা কমিটিতে কিছু উপঢৌকন পাঠিয়েছে। তারানা হালিম কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে কথা না বলেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন। তদন্ত কমিটির বৈঠকের আগের দিন ফোনে আমাদের বলা হয়েছে যে পরের দিন বৈঠক।

কিন্তু এভাবে তো হয় না। তাছাড়া বৈঠক আহ্বানের বিষয়েও তারানা আমাদের সাথে আলোচনা করেননি। ’ তারানা হালিম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাত্র একটি বৈঠকে উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি বোঝা যাবে না। তাছাড়া প্রতিটি বৈঠকের বেশ কয়েকদিন আগে সংসদ সচিবালয়ের নোটিশ শাখা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। ’ ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠান নিয়ে মনির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘পুরাকীর্তি খোয়া গেছে বিমানে ওঠানোর আগে।

তাহলে কিভাবে ওই প্রতিষ্ঠানকে দোষী করা যায়? সংসদীয় কমিটির বৈঠকে হাজির না হয়ে শুধু সময় বাড়িয়ে সরকারের টাকা নষ্ট করার মানসিকতা আমার নেই। মনি মাত্র একটি বৈঠকে এসেছেন। উনি যাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছেন সবাইকেই কমিটি তলব করেছিলো। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কমিটি কথা বলেছে। এ বিষযে আদালতে একটি মামলা চলছে।

এর মধ্যেও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সাথে কমিটি কথা বলেছে। কিন্তু উনি (মনি) আসেননি। ’ কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে এই নাট্যব্যক্তিত্ব বলেন, ‘যেহেতু প্রায় সবকটি বৈঠকেই কমিটির পক্ষ থেকে আমি একা উপস্থিত ছিলাম, সে কারণে প্রতিবেদনে কোনো সুপারিশ দেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। ওখানেই সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।

’ মনির প্রতি পাল্টা অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘যিনি মাত্র একটি মিটিংয়ে ছিলেন। তিনি কিভাবে অভিযোগ করেন?’ এদিকে ১ জানুয়ারি ২০১২ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা না হওয়ার বিষয়ে মনি বলেন, ‘আলোচনার কথা থাকলেও বৈঠকে জানানো হয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। কিভাবে সেটা হলো বুঝলাম না। ’ তবে তারানা হালিম এ বিষয়ে বলেন, ‘উপ-কমিটিতে আলোচনা না হওয়ায় প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ওখানে অবশ্যই আলোচনা হবে।

’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।