Shams সেদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন একজন দরবেশ টাইপের বৃদ্ধ লোক রাস্তায় একটি বই বিক্রি করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। রহিম সাহেব রাস্তা দিয়ে তাড়াহুড়া করে বাসায় যাচ্ছিলেন এবং হঠাৎ করে বৃদ্ধলোকটির বইটি তার চোখে পড়ল। রহিম সাহেবের বইটি ভালো লাগল। তিনি বইটি ৩,০০০ টাকা দিয়ে কিনলেন।
বৃদ্ধলোকটি রহিম সাহেবকে সতর্ক করে দিয়ে বলল, ‘বইটির শেষ পৃষ্ঠা কখনও খুলবে না, তাহলে তোমার অনেক বড় বিপদ হবে। ’
রহিম সাহেব বাসায় গিয়ে বইটি অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়ে শেষ করলেন। কিন্তু ভয়ে কিছুতেই বইটির শেষ পৃষ্ঠা খোলার সাহস পেলেন না। তিনি শেষ পৃষ্ঠা না খুলে রেখে দিলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পর রহিম সাহেবের অনেক আগ্রহ জাগল শেষ পৃষ্ঠায় কি আছে দেখার জন্য।
শেষ পৃষ্ঠা খোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।
এমন কি জিনিস তিনি দেখলেন যে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে গেলেন? শেষ পৃষ্ঠায় দেখেছিলেন : সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা।
এমন হলো আমাদের শেয়ারবাজারের অবস্থা। যেখানে প্রতিদিন সকালে দুই দল মানুষ মিলিত হয়। এর মধ্যে একদলের থাকে অর্থ, আরেক দলের অভিজ্ঞতা।
দিন শেষে তারা কেবল নিজেদের সম্পদ হাতবদল করে। যাদের অর্থ ছিল, তারা অভিজ্ঞতা নিয়ে পথে বসে, আর অভিজ্ঞরা বাড়ি ফিরে অর্থ নিয়ে। শেয়ার সূচকে যখন তেজি ভাব ছিল তখন সামাজিক অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, শেয়ারে যার ইনভেস্ট নেই সে স্মার্ট নয়।
অর্থনৈতিক মহামন্দা শুরুর আগে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝড় আসছে, এর পূর্বাভাস ছিল সর্বত্র। মার্কিন হাউজিং ইন্ডাস্ট্রি ফুলেফেঁপে এতটা উপরে উঠে গিয়েছিল, এর পতন ছিল সময়ের ব্যাপার।
তাই ঘটল বুশ শাসনের শেষ দিকে। তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ল ফুটন্ত হাউজিং ইন্ডাস্ট্রি। ডমিনো এফেক্ট দেখা দিল অর্থনীতির অন্যান্য শাখায়। ব্যাংক অব আমেরিকা, সিটি ব্যাংক, এমবাক ইন্স্যুরেন্স, লাগভেগাস স্যান্ডসের মতো জাঁদরেল কোম্পানিগুলোর শেয়ার কচুপাতার পানির মতো ভেসে গেল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে সিএনবিসি কেবল চ্যানেলে মার্কেট গুরু জিম ক্রেমারের তার ‘ম্যাড মানি’ অনুষ্ঠানে মার্কিন অর্থনীতির বেসামাল অবস্থার মধ্যভাগে বিশ্ব অর্থনীতির ঘোলাটে ও অনিশ্চিত বাস্তবতার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে টেনে এনেছিলেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
বর্ণনা করেছিলেন অর্থনীতির নিয়ম-কানুনে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কী করে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার রকেট গতিতে এগিয়ে চলছে।
অনেক শক্ত কথা বললাম, এবার একটা কৌতুক বলি। ২ বান্ধবীর মধ্যে কথা হচ্ছে—
— তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে ফেললি কেন?
— কারণ, সে একজন শেয়ার ব্যবসায়ী এবং একদিন আমরা কত সুখী হব, এসব কল্পনা করা ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারে না।
দেশের শেয়ারবাজার যে পর্যায়ে গিয়েছিল, তাতে পতন অনিবার্য ছিল। প্রশ্ন ছিল, পতন কখন হবে এবং কী গতিতে হবে।
শেষ পর্যন্ত পতন ঘটল। তবে তা একবার না দুইবার না, বার বার ব্যাপক ধস নামল। যত দ্রুতগতিতে বাজার বেড়েছিল, তার তুলনায় অনেক কম সময়ে বাজারের পতন ঘটল। বাজার এখন ক্রেতাশূন্য বলা যায়। রাতারাতি লাখপতি থেকে কোটিপতি হওয়ার জন্য যারা বাজারে ছুটে এসেছিলেন, তারা এখন যে কোনোভাবে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।
সবাই এখন শেয়ার বিক্রি করার দীর্ঘ সারিতে।
এক ভদ্রমহিলা ও এক শিশুর মধ্যে কথা হচ্ছে—
ভদ্রমহিলা : খোকা, তোমার বাবা কী করেন?
শিশু : আমার বাবা একজন মত্স্যশিকারি।
ভদ্রমহিলা : কিন্তু আমি তো শুনেছি, তোমার বাবা একজন শেয়ার ব্রোকার।
শিশু : না, না! আমি যতবার বাবার অফিসে গেছি, দেখেছি, বাবা কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন আর বিগলিত হাসি হেসে বলছেন, ‘স্যার, আরেকটা বড় মাছ ধরেছি!’
দুই বছর আগেও যেসব উদ্যোক্তা নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতন দিতে পারতেন না, ঋণখেলাপি হিসেবে সমাজে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন, তারাই রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান কিনেছেন। শেয়ারবাজারের নানা পদ্ধতির অপব্যবহার করে কয়েকশ’ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
অথচ বেশি দামে শেয়ার বিক্রির পরপরই এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বিনিয়োগগুরু ওয়ারেট বাফেট বলেছেন, ‘আমি কখনও স্টক মার্কেট থেকে অর্থ কামানোর কথা ভাবি না। আমি সব সময় ভাবি, যে শেয়ারটা কিনব সেটা পরদিনই বন্ধ হয়ে যাবে, আর পরের পাঁচ দিনেও লেনদেন হবে না। ’
বাংলাদেশে অবশ্য সবাই যে হারে শেয়ারবাজারের দিকে ছুটছে, তাতে অন্যের ইন্ধনের প্রয়োজন হচ্ছে না। যা কিছু আছে বিক্রি করে সহজে বড়লোক হওয়ার আশায় ভিড় করছে শেয়ারবাজারে।
কাজকর্মে মন নেই, চোখ সারাক্ষণ স্টক মার্কেটের খবরের দিকে। ডিএসসির (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) ওয়েবসাইট খুলে বসে থাকার লোকজন ক্রমেই বাড়ছে, তাও আবার জ্যামিতিক হারে। আর কেউ কেউ তো অফিসই করেন না। অফিসের বড় সাহেব বলছেন কর্মচারীকে, ‘করিম সাহেব, আপনি নাকি অফিসে এসে সারাদিন ইন্টারনেটে শেয়ারবাজারের ওয়েব সাইটে বসে থাকেন?’
করিম সাহেব : দুঃখিত স্যার, আমাকে ক্ষমা করুন।
বড় সাহেব : না না।
আমি আপনার ওপর খুবই সন্তুষ্ট।
করিম সাহেব : কেন স্যার?
বড় সাহেব : আপনার অন্তত অফিসে এসে ঘুমিয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই!
শেয়ারবাজার নিয়ে নানা কথা বলার এখন লোকের অভাব নেই, দেশে সবাই এখন শেয়ার বিশ্লেষক, সেটা পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টকশো পর্যন্ত। এমনি দুজন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকের মধ্যে কথা হচ্ছে—
১ম জন : বলো তো, বিধাতা কেন পৃথিবীতে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকের মতো একটি পেশা তৈরি করেছেন?
২য় জন : যাতে আবহাওয়াবিদ পেশাটি টিকে থাকে।
১ম জন : কীভাবে?
২য় জন : আমরা আছি বলেই আবহাওয়াবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী তুলনামূলক ভালো হয় বলে লোকজন মনে করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।