আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারনেটে বিয়ে

আমি আমার আনন্দে লিখি!!! বর সাঈদ ইসলাম (২৮)। কনে মনিরা চৌধুরী (২৮)। বাংলাদেশের নাগরিক এই বর-কনের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিয়ে হলো। তখনও যোজন যোজন দূরত্ব দুজনের মধ্যে। মধ্যখানে আটলান্টিক মহাসাগর।

কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি তাদেরকে নিয়ে এসেছে শূন্য দূরত্বে। সাঈদ থাকেন লন্ডনের সাউদাম্পটন। সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার মাইল দূরে আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় থাকেন মনিরা। কিন্তু ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপি তাদেরকে নিয়ে এসেছে একেবারে কাছে। ওই স্কাইপি’র বদৌলতে তাদের জানাশোনা।

তারপর প্রেম, বিয়ে। গত সেপ্টেম্বরে স্কাইপি’র মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। এদিন বাংলাদেশী রীতিতে সাঈদ ইসলাম বর সেজেছিলেন। ৩৫০০ মাইল দূরে মনিরা সেজেছিলেন কনে। ভিডিও কনফারেন্সে তারা দু’জনে লাজুক ভঙ্গিতে বিয়েকে কবুল করলেন।

তারপর কেটে গেছে প্রায় ৩ মাস। এর মধ্যে দু’জনের মনের কথা জানাজানি হয়েছে। কার কি পছন্দ তা একজনের থেকে জেনে নিয়েছেন অন্যজন। কিন্তু এই তিনটি মাস নববধূকে দূরে রেখে অস্থির হয়ে পড়েন সাঈদ ইসলাম। অবশেষে তার জীবনের শুভক্ষণ আসে।

তার মনের মানুষ মনিরা চৌধুরী পেনসিলভানিয়া থেকে উড়ে চলে আসেন সাঈদের কাছে। তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান সাঈদ। প্রথমেই তিনি লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার জড়তা কেটে যেতেই নববধূর কপোলে এঁটে দিলেন চুমু। শিহরণে ভরে উঠলো দু’জনের নতুন পৃথিবী।

শৈশবে তাদের একবার দেখা হয়েছিল ১০ মিনিটের মতো। সেই ছিল তাদের চোখে চোখে দেখা। তখন কে জানতো তারা একে অন্যের সঙ্গী হবেন চিরদিনের জন্য! তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বসন্ত। তাদের মাঝে আর কোন যোগাযোগ হয়নি। হয়তো একজন ভুলেও গেছেন অন্যকে।

কিন্তু ওই যে স্কাইপি, এর বদৌলতে হঠাৎ একদিন তাদের নতুন করে পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে অতীতের ধোঁয়াশা কেটে যায়। সামনে পরিষ্কার হয়ে ওঠে একটি মসৃণ পথ, যার শেষ নেই। দু’জনের আস্তে আস্তে প্রেম জমে উঠে। তারপর আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয় সেপ্টেম্বরে।

এরপর ১০০ দিনেরও বেশি সময় পরে মনিরা উড়ে এলেন ইংল্যান্ডে। এতদিন পরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের প্রথম মিলন ঘটলো। নতুন বছরে তারা বাংলাদেশে ফিরে বাকি অতিথিদের জন্য আয়োজন করবেন বিবাহ অনুষ্ঠান। তবে বাংলাদেশের কোথায় তাদের বাড়ি তা জানা যায়নি। সাঈদ ইসলাম ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে সোলেন্ট ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে পড়াশোনা করছেন।

তিনি বলেন- মনিরা আমেরিকা থেকে যখন একটি বিমানে করে হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে তখন জীবনসঙ্গীকে সত্যিকার অর্থে কাছে পাওয়ার এক অব্যক্ত আনন্দ আমার প্রতিবিন্দু রক্তে ঝংকার তুলছিল। বিমানবন্দরেই তাকে দেখে আমি জড়িয়ে ধরলাম। প্রথমেই তাকে বেশ লাজুক দেখাচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে স্বাভাবিক হয়ে গেল। আমার চোখে সে এক অপরূপা।

সাঈদ আরও বলেন, আমি জানি এভাবে বিয়েটা খুব স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি বলতে পারি, আধুনিক বিশ্বে দূরত্ব কোন বিষয়ই নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ তার জীবনের সবকিছু দূরে বসে থাকা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। বিয়ের পর আমরা দু’জনে সারাক্ষণ স্কাইপি’তে আলোচনা করতাম। আমরা আলোচনা করতাম আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।

দু’জনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আগামীতে আমরা কেমন ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। এক্ষেত্রে তিনটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ- বিশ্বাস, সততা এবং আস্থা। এগুলো আমাদের মধ্যে ছিল। তাই আমরা অত্যন্ত সুখী একটি দম্পতি হবো বলে আশা করি। তার কথার সঙ্গে যোগ করেন মনিরা- আমি যেমন মনের মানুষ খুঁজছিলাম সাঈদ তেমনি।

সে খুব ভাল মানুষ। আমরা জীবনে সুখী হতে চাই। আমরা একে অন্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।