ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকা দর্শকদের সংখ্যা আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে। যেহেতু এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তুর বেশিরভাগই অসম প্রেম, পরকীয়া, পারিবারিক ভাঙন, বহু বিবাহ, বিয়েবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক—তাই এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের সমাজে পড়ছে। ফলে দেশীয় দর্শকদের ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের ঝোঁক থেকে ফেরানোটা এখন সময়ের দাবি।
নিষিদ্ধ যে কোনো বিষয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকা স্বাভাবিক। তবে যে বিষয়বস্তু আমাদের সুন্দর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা গ্রহণ না করে বয়কট করাই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? আমাদের টিভি নাটক নির্মাতারা এমনই একটি প্রশ্ন রেখেছেন ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকা দেশীয় দর্শকদের কাছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশীয় দর্শকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। দিন দিন এই আসক্তির মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে। ভারতীয় বেশিরভাগ হিন্দি সিরিয়ালের বিষয়বস্তু পরকীয়া, অসম প্রেম, পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করার কূটনামি—এমনকি কিছু কিছু সিরিয়ালে যৌনতাকেও তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন রকম কৌশলে। আর এসব দেখে দেখে আমাদের দর্শকদের মাঝে এর বিরূপ প্রভার পড়তে শুরু করেছে। ফলে আমাদের সমাজে অসম প্রেম, পরকীয়া ও ইভটিজিংয়ের মতো বিষয়গুলো আগের চেয়ে বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এ কারণে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের আগ্রাসন থেকে দেশীয় দর্শকদের বাঁচানোর জন্য নির্মাতা মহলে এতদিন নীরব বিপ্লব চললেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সেমিনার বা গোলটেবিল বৈঠকে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় আমাদের দেশে অ্যালুমিনিয়ামের দণ্ড বা হাঁড়ির সাহায্যে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখার একটি প্রবণতা ছিল। দেশীয় দর্শকরা যেমন ভারতের চ্যানেল দেখার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতেন, তেমনি আমাদের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভি দেখার জন্যও কলকাতার দর্শকরা একই রকম মাধ্যম অবলম্বন করেছেন। বিটিভির নাটক তখন কলকাতার দর্শকদের কাছে ব্যাপক সমাদর পেত। সময়ের বিবর্তনে আজ আমাদের দর্শকদের একটি অংশ ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে মগ্ন থাকেন।
কিন্তু বাংলাদেশী কোনো চ্যানেল ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশীয় দর্শকদের ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালের আসক্তি থেকে ফেরানো এবং এর নেতিবাচক প্রভাব যেন সমাজকে কলুষিত করতে না পারে সেজন্য আমাদের নির্মাতা ও টিভি চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, ‘আমি একজন অভিনেতা বা আমার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলি তাহলে বলব—আমাদের এদেশের দর্শক ভারতীয় চ্যানেল বা বিশ্বের অন্যান্য চ্যানেল দেখেন এটা ঠিক। এখন আমরা বাইরের যে চ্যানেল দেখছি, এর অধিকাংশই হচ্ছে ভারতীয়। আর এ দেশের দর্শকদের ভারতীয় চ্যানেল দেখার অন্যতম কারণ ওদের ভাষাটা আমাদের সঙ্গে সহজে কমিউনিকেট করে।
আমাদের দর্শকদের বেশি প্রভাবিত করেছে ভারতীয় সিরিয়ালগুলো। আমাদের দর্শকরা বিশেষ দিবস, লাইভ বড় কোনো অনুষ্ঠান হলে দেশীয় চ্যানেল দেখেন। এর অর্থ হচ্ছে, আমরা যদি তাদের ভালো অনুষ্ঠান দিতে পারি তাহলে তারা নিজ দেশের চ্যানেল দেখে থাকেন। আমি এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সারা বিশ্বের যে যে দেশে বাংলাদেশীরা রয়েছেন, তারা প্রথমে আমাদের চ্যানেল দেখতে চান। যদি আমাদের চ্যানেলের অনুষ্ঠান তাদের পছন্দ না হয়, তারপর তারা অন্য চ্যানেলে চোখ রাখেন।
বাংলাভিশনের হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে আমি বলতে পারি, আমরা যদি আমাদের দর্শকদের ভালো অনুষ্ঠান দিতে পারি তাহলে তারা এ দেশের চ্যানেলই দেখবেন। আমাদের দর্শকরা ভারতীয় চ্যানেল দেখেন এ কারণে যে, আমরা তাদের যথেষ্ট ভালো অনুষ্ঠান দিতে পারছি না। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের একটা আধিক্য তো রয়েছেই। এছাড়া যে ক’টি ভালো অনুষ্ঠান হয়, তারও প্রচার সময়, পাবলিসিটি পর্যাপ্ত হয় না। এর বাইরেও যে কারণটি রয়েছে তা হলো, ভারতীয় চ্যানেলে অনেক ইন্টারেস্টিং, একটু রগরগে এবং নিষিদ্ধ বিষয় উপস্থাপন করা হয়, যা আমাদের সমাজের সঙ্গে আসলে যায় না।
ওদের সিরিয়ালগুলোতে পরকীয়া, অসম প্রেমসহ অনেক নিষিদ্ধ বিষয় দেখানো হয়; যা আমাদের সমাজের একটা বড় ক্ষতি করছে। ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাবে এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের পরিবারগুলোতে ভাঙন ধরছে, ডিভোর্স বাড়ছে, বিয়ে-শাদির বাইরের এক্সট্রা রিলেশনশিপ বাড়ছে, একেকজনের পাঁচটি করে, দশটি করে বিয়ে হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের ওপর বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণ কমে যাচ্ছে। এটা যে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর কারণে বেশি হচ্ছে তা নিঃসংকোচে বলা যায়। ভারতীয় সিরিয়ালের বিষয়বস্তুগুলো আসলে আমাদের সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতির বিপরীতমুখী অবস্থানে। এগুলো নিয়ে এখন অনেক ভাবনার দরকার আছে।
আর আমাদের সরকারগুলো এটা নিয়ে তেমন ভাবেনি। হতাশার সঙ্গে বলতে হয়, এখন তো সরকার এ বিষয়ে না ভেবে উল্টো দেশীয় চ্যানেলের ওপর বাড়তি চাপ দিচ্ছে। চ্যানেলের ওপর তারা একটা বাড়টি কর ধার্য করেছে। একজন পারফর্মারকে তার অনারিয়াম দেয়ার সময় তার কাছ থেকে আমাদের টেন পার্সেন্ট কর কাটতে হবে। এই ট্যাক্স কর্তন,এর প্রভাব কিন্তু এসে পড়বে প্রোডাকশনের ওপর।
ফলে তিন লাখ টাকার একটি নাটক এখন আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় কিনতে হবে। আর এই টাকা আয় করার জন্য আমাকে বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও চার মিনিট বেশি বিজ্ঞাপন চালাতে হবে। ফলে এই চার মিনিটে আরও বেশি দর্শক ভারতীয় চ্যানেলে চলে যাবেন। আমি তো মনে করি, সরকারকে এ বিষয়ে আরও ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এর জন্য প্রয়োজনে সরকার চ্যানেলগুলোর জন্য লোনের ব্যবস্থা করতে পারে।
সব ক্ষেত্রে লোনের ব্যবস্থা রয়েছে, অথচ আমাদের এত বড় ইন্ডাস্ট্রির জন্য কোনো ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা নেই। শুধু দর্শকদের দোষ দিলেই হবে না, আমাদের টোটাল সিস্টেমটা নিয়ে ভাবতে হবে। ’ তার সঙ্গে যোগ করে আরটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের দর্শকরা ভারতীয় সিরিয়াল দেখেন এ কারণে যে, সেগুলো অনেক ঝকঝকে। তারা অনেক টাকা খরচ করে সেট বানায়, প্রযুক্তিতে ওরা অনেক এগিয়ে আমাদের থেকে। তবে আমরা যেমন আমাদের নাটকে নেতিবাচক অনেক বিষয় তুলে ধরি বেশ সচেতনতার সঙ্গে, ওরা তেমনটি করে না।
অসম প্রেম, পরকীয়া, কূটনামি করে, পরিবার ভাঙা—এগুলো ওরা আমাদের মতো কাটছাঁট করে দেখায় না। আমার মনে হয়, ওদের সিরিয়ালে ওরা যা দেখায়, হয়তো ওদের জীবন যাত্রা তেমনই। এখন ভারতীয় সিরিয়ালের নেতিবাচক প্রভাব আর যেন আমাদের সমাজে না পড়ে সেজন্য আমরা কি ওদের চ্যানেল বন্ধ করে দেব, নাকি দর্শকরাই তা বয়কট করবেন, সেটা আসলে অনেক গভীরের একটি বিষয়। মাঝে মাঝে আমাদের একটি-দুটি টেলিভিশনও কিন্তু তাদের ওই বিষয়গুলো তুলে ধরতে গিয়ে ভারতীয় সিরিয়ালের দিকে ধাবিত হয়েছে। আর এটা করতে গেলে কিন্তু দর্শকদের কাছ থেকেই প্রতিবাদ চলে আসে।
পত্রিকায়ও এ নিয়ে লেখালেখি হয়। মাঝে আমরা দেশীয় দর্শকদের নিজেদের চ্যানেলে ফেরানোর উপায় হিসেবে প্রোগ্রাম প্রেজেন্টারের পোশাক ওদের মতো নয়, একটু খোলামেলা রাখার চেষ্টা করে প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়ে তা থেকে বিরত হয়ে গেছি। আমরা দেশীয় দর্শকদের পরোপুরি নিজেদের চ্যানেলে ফেরানোর চিন্তা করছি। এজন্য ভিনদেশি কাউকে অনুসরণ করে নয়, আমাদের গল্প, মেকিং, পারফর্মার দিয়ে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করব। ’ এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ দর্শকদের পুরো দায়ী না করে কিছু দোষ এ দেশীয় নাট্যকার ও নির্মাতাদেরও দিলেন।
তিনি বললেন, ‘আমাদের দর্শকদের ভারতীয় সিরিয়ালমুখী হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের সিরিয়ালগুলোতে গল্প থাকলেও তা ঠিকমত এগোয় না। নাটকীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত জমে ওঠে না, যেটা ভারতীয় সিরিয়ালে থাকে। আমাদের ধারাবাহিকগুলোর সংলাপ, চরিত্র চিত্রায়নে কোনো নতুনত্ব থাকে না। আমাদের কাহিনী বিন্যাসে দুর্বলতা রয়েছে।
পাশাপাশি আমাদের সিরিয়ালের পরিসমাপ্তিও আকর্ষণীয় নয়। এখানকার নাটকের পরিসমাপ্তি হয় কোনো সংলাপে। আমাদের নাটকের শেষটা এমন কোনো সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে না, যে কারণে কৌতূহল নিয়ে দর্শক বসে থাকবেন নাটকটি দেখার জন্য। আমরা যখন কোনো উপন্যাস বা গল্প পড়ি, তা যদি আমার মধ্যে কৌতূহল বা আকর্ষণ সৃষ্টি না করে তাহলে যেমন আমরা তা পড়ি না, তেমনই আমাদের সিরিয়ালের বেলায় বিষয়টি একই রকম। তবে আমাদের সব নাটকেই যে এ দুর্বলতাগুলো থাকে, তা নয়।
এখানে ভালো কাজও হয়েছে এবং দর্শক তা গ্রহণ করেছেন। আমাদের দর্শকদের ভারতীয় সিরিয়ালমুখী হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার। অনেক সময় দেখা গেছে, একটি ভালো নাটক হয়তো দর্শকরা দেখতে চাচ্ছেন, কিন্তু বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনা তাকে সে সুযোগ দিচ্ছে না। আর একথা সত্যি যে, আমাদের প্রাইভেট চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনের ওপরই টিকে আছে। তবে বিজ্ঞাপনদাতারা নাটকের মাঝেই বিজ্ঞাপনগুলো বেশি প্রচার করেন।
এর কারণ, আমাদের নাটক দর্শকরা দেখেন বলেই তারা এ সময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। বিজ্ঞাপনগুলো যদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়া যেত, তাহলে বিড়ম্বনা একটু কমত। আর আমাদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপনগুলো বেশি প্রচার হয় রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। এ সময়টাতে দেশীয় দর্শকরা ভারতীয় বা অন্য দেশের চ্যানেলে চলে যায়। আমাদের সিরিয়ালে যে যে দুর্বলতার কথা বললাম, হিন্দি সিরিয়ালগুলোতে তা নেই।
আমাদের নাটকের কনটেম্লট ঠিক আছে, তবে এর উপস্থাপনা, মেকিং ভারতীয় সিরিয়ালের মতো আকর্ষণীয় নয়। যে যে সীমাবদ্ধতার কথা আমি বললাম, এগুলো দূর করতে পারলে দেশীয় নাটকের দর্শক আরও বাড়বে। আমাদের নাটকের গল্প ও মেকিং, প্রযুক্তির ব্যবহারও ভারতের চেয়ে ভালো। কিন্তু কিছু কিছু কারণে তা দর্শক ধরে রাখতে পারছে না। তারপরও আমাদের দেশে ভারতীয় সিরিয়াল বা চ্যানেল চলবে, আর এ দেশের চ্যানেল ওখানে চলবে না—এটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
তবে আমাদের সরকার যেহেতু ভারতের চ্যানেল এখানে উন্মুক্ত করে দিয়েছে, ওদেরও উচিত আমাদের চ্যানেলগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়া। ’ খানিকটা ক্ষোভের স্বরেই নির্মাতা সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালগুলোয় অনৈতিক সম্পর্কগুলোকে হাইলাইট করা হয়ে থাকে। আর এসব সিরিয়াল আমাদের দেশের একশ্রেণীর দর্শক দেখে থাকেন, যারা মফস্বল বা গ্রাম থেকে উঠে এসে তাদের শেকড়কে ভুলে গেছেন। নিষিদ্ধ জিনিসে ওইসব মানুষই আকৃষ্ট হয়, যাদের আইডোলজিক্যাল বেজড নেই। আমি মনে করি, আমাদের দর্শকদের মধ্যে যারা হিন্দি সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকেন, তাদের এডুকেশন লেভেল ও সামাজিক কমিটমেন্টের জায়গাটা একেবারে নড়বড়ে।
একশ্রেণীর দর্শক—যাদের প্রচুর অলস সময় আছে, তারা ভারতীয় সিরিয়ালের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। আর এ তালিকায় বেশি রয়েছেন গৃহিণী ও স্টুডেস্ট। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালগুলো আমাদের দেশের দর্শকদের মনোজগতকে নষ্ট করে দিচ্ছে অনৈতিক অনেক বিষয়ের মাধ্যমে। এটা নেশার চেয়েও খারাপ। কারণ যদি একবার কারও মনোজগত নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা সুস্থ করা অনেক কঠিন কাজ।
আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে আমাদের এই প্রজন্মটাকে হিন্দি সিরিয়ালের এই আগ্রাসন থেকে বাঁচানোর। আর তা পারেন এ দেশের সরকারি লেভেলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা রয়েছেন, যারা ডিসিশন মেকার—তারাই। আর এজন্য ভারতীয় চ্যানেলগুলোর প্রদর্শন ফি বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে তা বন্ধ করে দেয়া উচিত। পাশাপাশি আমাদের চ্যানেলগুলোও কম সময় বিজ্ঞাপন প্রচার করে দর্শকদের নিজ চ্যানেলে ধরে রাখতে পারে।
আমাদের নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরাও কাজের প্রতি দরদ ও দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়ে দর্শকদের ধরে রাখার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ তা না হলে যদি হিন্দি সিরিয়ালের প্রতি দর্শকদের আসক্তি এভাবে বাড়তেই থাকে, তবে প্রযাজকদের কোনো ক্ষতি হবে না। তারা এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা করবেন, কিন্তু মূল ক্ষতি হবে শিল্পীদের। ’ সালাহউদ্দিন লাভলুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে নির্মাতা মোহন খান বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দর্শকদের মধ্যে যারা মানসিকভাবে অসুস্থ, কেবল তারই হিন্দি সিরিয়ালগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালগুলোতে অনৈতিক সম্পর্কগুলোকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।
আর যা আমাদের কালচারের সঙ্গে এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতে পরকীয়া, অসম প্রেম ও যৌন সুড়সুড়ির ছড়াছড়ি থাকে। ওদের সিরিয়ালগুলো অন্তঃসারশূন্য। আর তা দেখিয়েই আমাদের দেশ থেকে ওরা কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আমার জানা মতে, প্রতি বছর ভিনদেশি চ্যানেলগুলো দেখার জন্য আমাদের ২০০০ কোটি টাকা ফি দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় চ্যানেলকে দিতে হয়। আমাদের সরকারের উচিত এদেশে ভারতীয় চ্যানেলের প্রচার বন্ধ করা। আর তা না হলে আমাদের সমাজ হিন্দি সিরিয়ালের বিরূপ প্রভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত ভয়ে সে দেশে আমাদের চ্যানেল দেখায় না। কারণ আমাদের নাটক বিষয়বস্তুতে, মেকিংয়ে ওদের চেয়ে অনেক উন্নত।
আমরা ওদের মতো এত নেতিবাচক বিষয় নিয়ে কাজ করি না। ’ সবশেষে নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু বলেন, ‘আমাদের যে সামাজিক মূল্যবোধ, আমরা যেভাবে আমাদের সন্তানদের বড় করি—তার সঙ্গে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর গল্প বা বিষয়বস্তুর কোনো মিল থাকে না। আর ওদের সিরিয়ালগুলোতে এমন সব বিষয় উপস্থাপন করা হয় যা আমাদের দর্শকদের মেন্টালিটির ক্ষতি করছে। আমার মনে হয়, এর থেকে দর্শকদের বাঁচানো উচিত। আর সেজন্য সরকারের উচিত ভারতীয় চ্যানেলগুলোর প্রদর্শন ফি বাড়িয়ে দেয়া, যাতে তা দর্শদের নাগালের বাইরে চলে যায়।
সত্যি বলতে কী, আমাদের সরকার স্থূল বিষয়গুলো নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকে যে এ ধরনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ভাবার অবকাশ নেই। হিন্দি সিরিয়ালে কূটনামির সঙ্গে এ দেশের রাজনৈতিক কূটনামির আমি বড় মিল খুঁজে পাই।
The daily amar desh
28-12-2012 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।