আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমালয় পর্বতশ্রেনীর একটি পর্বতের নাম বাংলাদেশ

কাঁচাপাকা রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি, সাইকেলে বসে ছিল নৌকার মাঝি। বিএমটিসি’র প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্টার্কটিকা ও উত্তর মেরু অভিযাত্রী প্রথম বাংলাদেশি ইনাম আল হকের মনে একটা স্বপ্ন ছিল কিভাবে হিমালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নামটি স্থায়ীভাবে জড়িয়ে দেওয়া যায়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএমটিসির আমন্ত্রণে বিশ্বরেকর্ডধারী বিখ্যাত পর্বতারোহী পেম্বা দর্জি শেরপা বাংলাদেশে আসেন। তখন তিনি তার প্রতি বিএমটিসির ভালোবাসা ও বন্ধুত্বে মুগ্ধ হয়ে ইনাম আল হককে বন্ধুত্ব আরও প্রগাঢ় করতে একটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি ছিল, ইতিপূর্বে কখনো বিজিত হয়নি নেপাল হিমালয়ের এমন একটি পর্বতশৃঙ্গে বাংলাদেশ ও নেপালের পর্বতারোহীরা যৌথভাবে অভিযান চালাবে এবং অভিযানটি সফল হলে পর্বতশৃঙ্গটির নাম হবে নেপাল-বাংলাদেশ মৈত্রী শিখর।

তখন থেকেই বিএমটিসির প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক কখনো নিজে সরাসরি কখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে নেপাল সকার তথা নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (এনএমএ)-এর সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদান করতে লাগলেন। অবশেষে ২০১০ সালের আগস্টে নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি জিম্বা জাংবু শেরপা ই-মেইলের মাধ্যমে ইনাম আল হক-কে জানান, নেপাল-তিব্বত সীমান্তের কাছে ২০,৫২৮ ফুট (৬২৫৭ মিটার) উঁচু ‘চেকিগো’ নামে হিমালয়ের একটি অবিজিত শিখর আছে এবং চাইলে আমরা এই শৃঙ্গটিকে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ অভিযানের জন্য পেতে পারি। ইনাম আল হক সঙ্গে সঙ্গে এনএমএ’র সভাপতিকে ই-মেইলে সম্মতি জানিয়ে দেন। জিম্বা জাংবু শেরপা এনএমএ’র পরিচালনা পর্ষদের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে অনুমোদন করিয়ে নেন। এনএমএ’র হিসাব মতে চেকিগো পর্বতশৃঙ্গে ইতোপূর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১৩টি অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়, পর্বতশৃঙ্গটি কত কঠিন। ইউএনবির প্রধান সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান আগেই বলেছিলেন_ তার প্রতিষ্ঠান কসমস গ্রুপ অভিযানের অর্ধেক খরচ বহন করবে। বাকি অর্ধেক খরচ বহন করার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এলেন প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান। এ দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক দিক থেকে তেমন কোনো লাভ হবে না জেনেও শুধুমাত্র সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে দেশের সম্মান ও গৌরবের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ঠিক হয় এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে আমরা ছয়জন ও নেপাল থেকে সাতজন পর্বতারোহী অংশ নেবে।

বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিল এম এ মুহিত আর নেপালি দলের নেতৃত্বে ছিল পেম্বা দর্জি শেরপা। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে হিমালয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ পর্বতাভিযান উপলক্ষে পতাকা-প্রদান অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নেপাল থেকে উড়ে আসেন নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিম্বা জাংবু শেরপা ও নেপালি পর্বতারোহী দলের নেতা পেম্বা দর্জি শেরপা। গত বছর ২৫ অক্টোবর কাঠমান্ডুর পাঁচ তারকা হোটেল ইয়াক এন্ড ইয়েতিতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চেকিগো পর্বতশৃঙ্গের নাম নেপাল-বাংলাদেশ মৈত্রী শিখর রাখার ঘোষণা দেন এবং বিএমটিসির প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হককে তার স্মারক উপহার দেন। যতদিন পৃথিবীতে হিমালয় থাকবে ততদিন বাংলাদেশের নামে এই পর্বতশৃঙ্গ থাকবে।

পরবর্তীতে যারাই এই পর্বতে আরোহণ করতে যাবে তারা জানবে বাংলাদেশের নামে এই পর্বতশৃঙ্গের নাম। প্রতিবারই বাংলাদেশের নামটি উচ্চারিত হবে। এই মর্যাদা মাত্র ২/৩টি দেশের ভাগ্যে জুটেছে। আমাদের জন্য এ এক অনন্য গৌরব। তথ্যসূত্রঃ সুখবর২৪.কম  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।